মঙ্গলবারের নিউইয়র্ক প্রাইমারিতে কে জিতছে কে হারছে সে নিয়ে আর ভাবনার কিছু নেই। দুই প্রধান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কে হবেন সেটাও এখন ভাবনার অতীত।
নিউইয়র্ক টাইমসে এভাবেই লিখেছেন নিউ অ্যামেরিকা ফাউন্ডেশনের লেখক কলামিস্ট মিশেল লিন্ড।
যারা এখন ডনাল্ড ট্রাম্পের দলীয় আজ্ঞা জাতীয়তাবাদী জনতত্ত্ব থেকে অচিরেই মুক্তবাজার আর লিমিটেড মার্কা প্রথাপন্থি সরকারে রূপ নেবে বলে দেখতে পাচ্ছেন তারা ভুল করছেন। আর একইভাবে ভুল করছেন তারাও যারা সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের তারুণ্যের প্রতি আবেদনের কাছে বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্য-বাম ধারা হোঁচট খাবে বলে ভাবছেন।
এভাবেই হোক কিংবা অন্যভাবে, ট্রাম্পিজম আর ক্লিনটনিজমই আসলে আমেরিকার রক্ষণশীলতা আর প্রগতিশীলতার সংজ্ঞায়ন করবে।
আর এসব কারণে ১৯৬৮ সালের পর এবারের নির্বাচনটিই হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ ভোটের লড়াই। তবে সে ঝঞ্ঝার কারণটি ভিন্ন। ১৯৬৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলীয় সমর্থকগোষ্ঠীর পুনর্বিণ্যাস হয়। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে যে ভোটার ব্লক নিয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান এগুচ্ছিলো তা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। এরপর অর্ধ-শতক পার করে ২০১৬ তে এসে এই পুনর্বিণ্যাস আর যাই হোক পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। তবে দলীয় সমর্থনের পুনর্বিণ্যাস না হলেও স্পষ্টতই যা হয়েছে, তা হচ্ছে, দলের নীতিগত পুনর্বিন্যাস।
১৯৮০ সালের রোনাল্ড রিগ্যানের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন একটি যুগের সূচনা ঘটে বলেই ভাবা হয়। তবে ২০১৬’র মোক্ষম দিকটি বিবেচনায় নিলে বলা চলে রিগ্যান ও ক্লিনটন দুজনই ছিলেন যুগান্তকারী ব্যক্তিত্ব।
এই সময়ে ডেমেক্র্যাট থেকে সামাজিকভাবে রক্ষণশীল রিপাবলিকানে, আর অর্থনৈতিকভাবে পপুলিস্ট ডেমোক্র্যাটে পাল্টে যাওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো তা আজও পরিনতি পায়নি। বিচ্ছিন্নতাবাদী ডেমেক্র্যাট জর্জ ওয়ালেসের স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতার মধ্য দিয়েই এর যাত্রা শুরু হয়। অন্যদিকে মধ্যপন্থি রকফেলার রিপাবলিকানদেরও একই দশা।
রোনাল্ড রিগ্যানের রিপাবলিকান পার্টি সনাতনী রক্ষণশীলই ছিলো, যার মূল ফোকাস ছিলো ব্যবসা আর লিমিটেড সরকারে। আর তা নিঃসন্দেহে পপুলিস্ট রিগ্যান ডেমোক্র্যাট কিংবা ওয়ালেস ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
ব্যারি গোল্ডওয়াটারের মতোই অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে রিগ্যান ছিলেন পপুলিস্টের চেয়ে অনেক বেশি উদার আর সহনশীল। প্রার্থী হিসেবে তিনি সামাজিক নিরাপত্তা আর স্বাস্থ্যসেবাকে গুরুত্ব দেননি সেটা ঠিক, তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সেগুলো নিয়ে কোনও নতুন সিদ্ধান্তেও যাননি। ১৯৮৬ সালে তিনিই প্রথম আমেরিকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক অবৈধ অভিবাসীকে ক্ষমা করার পক্ষে অবস্থান নেন এবং ওই প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন। ইতিবাচক উদ্যোগ, ব্যস্ততা, গণ অভিবাসন, যৌনতার স্বাধীনতা আর সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার বিরোধী শ্রমজীবী শেতাঙ্গদের সমর্থনপুষ্ট হয়েও রিগ্যান নিজেকে একজন আশাবাদী ব্যক্তি হিসেবেই তুলে ধরতে পেরেছিলেন।
রিগ্যানের মতো বিল ক্লিনটনও একজন সনাতনি ভাবধারার ব্যক্তিত্ব ছিলেন, বিশেষ করে দলাদলি যখন তুঙ্গে সেই সময়টিতে। ১৯৭২ সালে তিনি নিজেই জর্জ ম্যাকগভর্ন এর ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছিলেন। তথাপিও ১৯৮০ আর ১৯৯০ এর দুই দশকে বিল ক্লিনটন, আল গোর ও নিউ ডেমোক্র্যাটরা যখন সামরিক, পুলিশি তৎপরতা, মৃত্যুদণ্ড, সেন্সরশিপ ইত্যকার অন্যান্য ইস্যুতে উদার বামদের কাছ থেকে দুরত্ব বজায় রাখতে চাচ্ছিলেন তখন রিগ্যান ডেমোক্র্যাটরাই তাদের কাছে ভাসমান ভোটারদের মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
কিন্তু ১৯৯৪ সালে যখন কংগ্রেসের দুই সভাই রিপাবলিকানদের দখলে তখন মধ্যবর্তী নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রপন্থি ও রক্ষণশীল ডেমেক্র্যাট, বিশেষ করে দক্ষিণ ও পশ্চিমের ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকান হয়ে যায়। বাদবাকি ডেমোক্র্যাটরা যারা টিকে থাকে তারা নিউ ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট কোস্টের বড় বড় নগরী, কলেজ টাউন আর সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ল্যাটিনো ডিস্ট্রিক্টগুলোতে চলে যায়। ২০১০ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাদবাকি কেন্দ্রপন্থি থেকে রক্ষণশীল বনে যাওয়া ‘ব্লু ডগ’ ডেমোক্র্যাটরা হারিয়ে যায়।
সাধারণীকরণ করলে বলা চলে, আজ যে ডেমোক্রেটিক ভিত তা স্রেফ উত্তর, মধ্য পশ্চিম আর ওয়েস্ট কোস্টের শেতাঙ্গদের জোট যা মূলত কৃষ্ণাঙ্গ আর ল্যাটিনোসহ পুরনো রকফেলার রিপাবলিকান থেকেই এসেছে।
পরের অংশ>> একসময়ের ডেমোক্র্যাট শক্তি এখন রিপাবলিকানদের ভিত