ময়মনসিংহ: একাই ১০ জনের খাবার খেয়ে সাবাড় করে দিতে পারেন ময়মনসিংহের যুবক মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৪)।
এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
কারণ এভাবে খাওয়াই এখন তার আয়ের উৎস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউটিউবে তার এসব ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে, ভিউ হচ্ছে লাখ লাখ। এতে তার প্রতি মাসে আয় হচ্ছে এক লাখ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা। ফলে বেশি বেশি খেতে পারাই এখন তার আয়ের মাধ্যম।
ভাইরাল খাদক ওই যুবক ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া সরকারি পুকুরপাড় এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। বর্তমানে তিনি কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসায় ফাজিলে পড়ছেন।
জানা যায়, ছয় ভাই-বোনের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান সবার ছোট। আনসার ব্যাটালিয়নে চাকরি করতেন বাবা। ছোট বেলায় বাবার মৃত্যু হয়। এরপর বাবার চাকরির সুবাদে পাওয়া সামান্য পেনশনের টাকায় মায়ের কাছে বড় হয়েছেন নোমান। তবে বর্তমানে নিজের আয়ের টাকায় মাকে নিয়ে ভালোই চলছে তার।
খাবার খেয়ে ভাইরাল হওয়ার নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০২০ সালে করোনার সময়ে সারাদেশের মানুষের মতো ঘরবন্দি হয়ে পড়েন নোমানও। তখন ঘরে বসে মোবাইল ফোনেই কাটত তার সময়। হঠাৎ একদিন কোরিয়ান এক ব্যক্তির খাওয়ার ভিডিওতে কোটি ভিউ দেখে ভালো লাগে তার। ছোট বেলা থেকেই খেতে ভালোবাসেন তিনি। ফলে এখান থেকেই খাবারের ভিডিও করার ধারণা পান নোমান। পরে ঘরে বসেই বেশি বেশি খাবার খেয়ে সে ভিডিও ভাইরাল করার নেশা পেয়ে বসে তাকে। এরপর কাজ শুরু করে একাই পাঁচ বা ১০ জনের খাবার খেয়ে ভিডিও বানিয়ে তা ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করতে থাকেন।
কিন্তু প্রথম দিকে তার এসব ভিডিওতে খুব একটা সাড়া পড়েনি। এতে হতাশ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এতে তার মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়। বানাতে থাকেন আরও বেশি বেশি ভিডিও। আজ তার ফেসবুক পেইজে প্রায় ছয় লক্ষাধিক ফলোয়ার এবং ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার সাত লক্ষাধিক। এতে প্রতি মাসে বর্তমানে তার আয় হচ্ছে এক থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা।
অবশ্য তার এ খাবারের পেছনে প্রতি মাসে তাকে খরচ করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার। তবে বর্তমানে তার আয়ের টাকায় ভিডিও তৈরি, আপলোড ও এডিটিংয়ের জন্য কিনেছেন একটি আইফোন ও একটি কম্পিউটার। সেই সঙ্গে দাপুনিয়া সরকারি পুকুরপাড় বাজারে তার আয়ের টাকায় দোতলা একটি ভবনের কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিয়মিত করছেন ভিডিও।
ফেসবুকে ‘বিডি বেস্ট এভার ফুড’ নামের পেইজটি নোমানের। এতে দেখা যায়, তার তৈরি খাবারের নানা ভিডিওতে হয়েছে লাখ লাখ ভিউ। কমেন্টস বক্সে আছে নেটিজেনদের হাজার হাজার পরামর্শমূলক ও মজাদার কমেন্টস। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, নোমান কখনো খাচ্ছেন আস্ত মুরগি, খাসির নলি, চীনা হাঁস ভুনা বা কখনো কোয়েল পাখির একশ’ ডিম। আর এসব খাবারের পাশে রয়েছে প্লেট ভর্তি কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ। যা সাবাড় করেন তিনি।
আর নোমানের এসব খাবার অতি যত্নে রান্না করে পরিবেশন দেন তার বড় বোন মনোয়ারা বেগম।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, যে কোনো সফলতার পেছনে থাকে কষ্ট, একাগ্রতা ও পরিশ্রম। আমারও তাই হয়েছে। খাবার খেয়ে ভাইরাল হই আবার টাকাও উপার্জন করি। এটা নিয়ে অনেকেই অবাক হয়। কিন্তু এর পেছনে আমাকে অনেক কিছু করতে হয়।
যেমন- কষ্ট করে একসঙ্গে অনেক খাবার খেতে হয়, এরপর অনেক কষ্ট করে ভিডিও তৈরি, আকর্ষণীয় করতে এডিটিংসহ অনেক কিছু করতে হয়। সেই সঙ্গে একটি খাবার খাওয়ার পর আরেকটি খাবারের মেনু কী হবে, তা ভাবতে হয়, এরপর মেনু ঠিক করে বাজার করা, রান্নার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি অনেক সময় দিতে হয় একটি ভিডিওর জন্য। মোট কথা, আজকের এ পর্যায়ে আসতে আমাকে অনেক পরিশ্রম ও কষ্ট করতে হয়েছে। যা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
এসময় নোমান আরও বলেন, বর্তমানে দেশে চাকরি প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। চাইলেই চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন। এ অবস্থায় ঘরে বসে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো কিছু করতে পারলে আমার মতো টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৩
এসআই