ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

জ্যোতির্বিদ্যার সূত্র স্কটল্যান্ডের প্রাচীন পাথর বৃত্তে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
জ্যোতির্বিদ্যার সূত্র স্কটল্যান্ডের প্রাচীন পাথর বৃত্তে!

৫ হাজার বছরের পুরনো স্কটল্যান্ডের পাথর বৃত্ত স্থাপনের উদ্দেশ্য কি ছিল, সেটি পুরাতত্ত্বের সবচেয়ে স্থায়ী রহস্য। তবে একটি নতুন তত্ত্বের উত্তর খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে।

পুরনো তত্ত্বে বলা হয়েছিল, প্রস্তরযুগের নিওথিলিক মানুষেরা পাথরের মানমন্দির হিসেবে তৈরি করেছিলেন স্থায়ী ওই পাথর বৃত্ত দু’টি। এখন গবেষকরা বলছেন, একইসঙ্গে সেটি সূর্য ও চাঁদের গতিবিধি ও অবস্থান লক্ষ্য করে নিজেদের সাজাতেন।  

অর্থাৎ, জ্যোতির্বিদ্যার সূত্র নিহিত রয়েছে স্কটল্যান্ডের এ প্রাচীন পাথর বৃত্তে- নতুন গবেষণায় এমটিই জানতে পেরেছেন পুরাতত্ত্ব বিজ্ঞানীরা।
    
ব্রিটিশ অঙ্গরাজ্য স্কটল্যান্ডজুড়ে বিভিন্ন আকৃতির পাথরের প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। অর্কনেই দ্বীপের স্টেননেস্‌ ও লুইস দ্বীপের ক্যালানিস নামে পাথর বৃত্ত দু’টি এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রাচীনতম, যেগুলোর বয়স ৫ হাজার বছর। স্কটিশ গ্রামাঞ্চলের আশেপাশে বিক্ষিপ্তভাবে এ ধরনের আরো অনেক স্থাপনা রয়েছে।

স্টেননেস্‌ ও ক্যালানিস নির্মাণকালের আগেই ফসল ফলানো ও চাষবাস শিখে ফেলেছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষ নিওথিলিক মানুষেরা। গবেষকদের একটি দল তাই এর আগে দাবি করেছিলেন, মহাজাগতিক প্রভাব দিয়ে গড়া দূর্গ ছিল ওই দু’টি। অর্থাৎ, সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রের অবস্থান সঠিকভাবে দেখার স্থান ছিল।  

আলেকজান্ডার থম ব্রিটেনের স্থায়ী পাথর নিয়ে একাডেমিক গবেষণা শুরু করেন ১৯৩০- এর দশকে। তিনি ১৯৫৫ সালে তিনি তার প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করে বলেন, দাঁড়িয়ে থাকা পাথরগুলো তারা দেখার সেরা মানমন্দিরের দায়িত্ব পালন করতো।  

এরপর নিওলিথিক চাষিরা মৃতদের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করতে শুরু করেন, পাথর বৃত্তও এর অংশ ছিল।

এরপর অর্ধ শতাব্দী ধরে গবেষকরা গবেষণা করে গত আগস্টে প্রত্নতাত্ত্বিক বিজ্ঞান জার্নালে পাথর বৃত্ত নির্মাণের কারণ নিয়ে নতুন মতামত প্রকাশ করেন।

গবেষকরা বলেন, সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা স্থায়ী পাথরগুলো জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত ঘটনাবলী সম্পর্কিত ছিল। আর আড়াআড়ি ও স্থল টিলা আকৃতির পাথর মহাবিশ্ব যে চক্রাকারে আবর্তনশীল ও এর বিপরীতের বিভিন্ন উপাদানে গঠিত- অতীতের মানুষদেরকে তা বোঝাতে সহায়ক হয়।

গবেষক দলের নেতা অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইড বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইল হিগিংবটম বলেন, ‘আমাদের অবাক করেছে যে, মাত্র দু’টি ভিন্ন আকৃতিতে এ মিনারগুলো গঠিত। আড়াআড়ি আকৃতির মধ্যে পার্শ্ববর্তী দিগন্ত এবং সূর্য ও চাঁদের কিরণকে সুনির্দিষ্টভাবে স্থাপন করে। এ নিদর্শন সব মিনার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, যা আমাদেরকে স্তম্ভিত করে দেয়’।

‘মহাজাগতিক ও প্রাকৃতিক দৃশ্য সেখানে পাথরে স্থাপন করা হয়েছে। বিশেষভাবে সূর্য ও চাঁদের সবচেয়ে চরম ক্রমবর্ধমান ও সেটিং পয়েন্ট দেখানোর জন্য নিখুঁতভাবে স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। স্টেননেস্‌ ও ক্যালানিস পাথর বৃত্ত দিন গণনারও প্রাচীনতম নির্ভরযোগ্য মিনার ছিল, যেগুলো ব্রোঞ্জ যুগের চেয়ে ভালো কাজ করতো’।

হিগিংবটমের দল জানান, স্কটল্যান্ডের পাথর বৃত্তে মহাকাশের প্রতিটি নিদর্শন খোঁজার জন্য শতাধিক জ্যোতির্বিদ্যা সূত্র প্রয়োগ করা হয়েছে। এ দু’টি স্থায়ী পাথর বৃত্তকে জ্যোতির্বিদ্যার ঐতিহ্যের শুরু বলে মনে হয়, যা সম্ভবত পরবর্তী ২০০০ বছরের জন্য অব্যাহত ছিল।

হিগিংবটমের বিশ্বাস, এটা ছিল মহাবিশ্ব বোঝার জন্য তাদের স্থায়ী উপস্থাপনা।

অর্থাৎ, তারা সূর্য ও চন্দ্রের পালাক্রমে প্রকৃতি সংযুক্ত নির্দিষ্ট চক্র, অন্ধকার ও আলো, উত্তর ও দক্ষিণ, রাত ও দিনের বিবর্তন বুঝতে পারতেন।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেথ ব্রফিও মনে করেন, বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকিয়েও বোঝা যায়, প্রাচীনতম এ উপায় খুব আধুনিকও ছিল। পৃথিবীর গাণিতিক দৃশ্য প্রাগৈতিহাসিক মানুষও দেখতে পারতেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।