ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

দুঃখবিলাসের দেশ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
দুঃখবিলাসের দেশ!

ইউরোপের দুঃখী মানুষের দেশ পর্তুগাল। জাতিসংঘের সর্বশেষ বিশ্ব সুখী দেশের তালিকায় ১৫৭টি দেশের মধ্যে দেশটির অবস্থান শেষের দিকে ৯৩তম স্থানে। কিন্তু পর্তুগিজরা তাদের অসন্তোষেই সন্তষ্ট হন। 

ইউরোপের দুঃখী মানুষের দেশ পর্তুগাল। জাতিসংঘের সর্বশেষ বিশ্ব সুখী দেশের তালিকায় ১৫৭টি দেশের মধ্যে দেশটির অবস্থান শেষের দিকে ৯৩তম স্থানে।

কিন্তু পর্তুগিজরা তাদের অসন্তোষেই সন্তষ্ট হন।  

আসলে পর্তুগালের লুকানো সৌন্দর্য ও আনন্দ নিরানন্দেই নিহিত, যা থেকে অন্যদের শেখার অনেক কিছু আছে।

পর্তুগালের ‘আনন্দদায়ক বিষণ্ণতা’ একটি একক শব্দের মাঝে সমন্বিত। স্যাওডেড (Saudade) শব্দটিই পর্তুগিজ ভাষার, যা একটি আকাঙ্ক্ষার প্রতিশব্দ। একজন ব্যক্তি বা স্থানের অভিজ্ঞতা থেকে মহান আনন্দ আনার জন্য যে বেদনা তাই স্যাওডেড।  

রাজধানী লিসবনের পাবলিক স্কয়ারের একটি মূর্তিতে বিষাদগ্রস্ত অভিব্যক্তি আছে, যা পুরো পর্তুগাল জুড়ে সর্বব্যাপী। স্যাওডেড নামে একটি পর্তুগীজ চকলেট দেশটিতে জনপ্রিয়, স্বাভাবিকভাবেই সেটি টক-মিষ্টি স্বাদের।  

মনোচিকিত্সক মারিয়ানা মিরান্ডা বলেন, ‘নিরানন্দ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিষণ্ণতা সৌন্দর্যের আঁধার’।  

পুলিশ পরিদর্শক রমেও বলেন, ‘যখন একজন অসুখী ব্যক্তি একজন পর্তুগীজের মুখোমুখি হন, তিনি খারাপ জিনিসের ব্যাখ্যা পান, ভালোর দিকে উত্সাহিত হন’।

২০০৮ সালে এক্সপেরিমেন্টাল জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ‘বিষণ্ণতা দেশটির সামাজিক মনস্তত্ত্বের বড় প্রভাবক। অস্ট্রেলিয়ান মনোবৈজ্ঞানিক ও লেখক জোসেফ ফরগাস সেখানে বলেন, ‘বিষণ্ণতা তাদের স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করে। বিষণ্ন বৃষ্টির দিন উজ্জ্বল সূর্যালোকিত দিনের চেয়ে আরও স্পষ্টভাবে অনুপ্রাণিত করে’।  

পর্তুগালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি লার্গো ডি ক্যামোইস প্রায়ই তার কবিতায় স্যাওডেড তুলে এনেছেন নানা ভাবে, নানা ব্যাখ্যায়।  

এমনকি ফাডো সঙ্গীত নামে এক ধরনের দুঃখ সঙ্গীত দেশটির জাতীয় সংস্কৃতির অংশ। মনমরা সুরের গান ফাডো’র আক্ষরিক অর্থ ‘ভাগ্য’, যা আসলে উপকারী মানসিক প্রভাবক।  

গবেষণা জার্নাল প্লোস- এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষক স্টিফান কোয়েলচ ও লিলা টারুফি বলেন, ‘নেতিবাচক মুড মানুষকে সক্রিয়তা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে। দুঃখ সঙ্গীত কল্পনাকে উস্কে দেয় এবং জটিল ও আংশিকভাবে ইতিবাচক আবেগকে আহ্বান ও বিস্তৃত করে। মজার বিষয় হল, ফাডো সঙ্গীতের ইতিবাচক সুবিধা বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তারও করেছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী আবেগ হচ্ছে বিষণ্ণতায় বেদনা অস্বীকার’।  

ফাডো সংগীতের উদ্ভাবক কঠোর পরিশ্রমী ও সংগ্রামী শ্রমিকশ্রেণী, যার লিসবনের এলাকাগুলোতে প্রায় দুই শতাব্দী আগে শিকড় গেড়েছিলেন। প্রথম ফাডো গায়ক অথবা ফ্যাডিস্টাসরা আসলে ছিলেন যৌনকর্মী এবং সমুদ্র থেকে ফিরতে না পারা জেলেদের স্ত্রীরা।  

দুঃখ-কষ্ট প্রকাশের মাধ্যমে তা ঘোচানোর জন্য তৈরি ফাডো সঙ্গীত আজ পর্তুগালের জাতীয় জীবনের সাউন্ডট্র্যাক। দেশের সর্বত্র রেডিওতে, কনসার্টের হল, সর্বোপরি লিসবনের কয়েক ডজন ফাডো ঘরে শোনা যায় এ গান। এমনকি ক্লাব দে ফাডো নামক ছোট একটি শহরও আছে।  

ফাডো গায়করা বেশিরভাগই অপেশাদার হন। মার্কো হেনরিকস, যিনি দিনের বেলায় একজন কৃষিবিদ হিসাবে কাজ করেন এবং সন্ধ্যায় ক্লাব-বারে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে ফাডো সঙ্গীত শোনান। তার মতে, ‘ফাডো হৃদয় থেকে আসে। কিছু ফাডো গায়কের সুন্দর দেবদূতোপম কণ্ঠ আছে। আপনার কণ্ঠ খারাপ হতে পারে, কিন্তু ফাডো আপনাকে মহান করবে’।

পর্তুগীজদের বিশ্বাস, ‘ফাডো গান শুনতে শুনতে দুঃখ ও স্বস্তির একটি সমন্বিত অনুভূতি হয়। মনমরা এই গান ও বিষণ্ণতা বিবেকের দংশন দমন বা অস্বীকার করে। ফাডো নিজের ছায়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছে’।


লিসবনের এস্ট্রইল শহরের ফাডো গায়িকা কুকা রোসেটা বলেন, ‘ফাডো সুর শুধু ঐতিহ্যগতভাবেই বিষাদগ্রস্ত। কিন্তু গানের চতুর বাণী আপনাকে আশাবাদী করে তুলবে, যা পর্তুগালের ‘আনন্দদায়ক বিষণ্ণতা’র প্রতীক। এটি আপনার আবেগ ঘনিষ্ঠ একটি উপহার’।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
এএসআর
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।