ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

অফবিট

জলে-স্থলে সর্বংসহা, ফের বেঁচেও ওঠে!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৬
জলে-স্থলে সর্বংসহা, ফের বেঁচেও ওঠে!

মাংসল প্রাণীটিকে প্রথম দেখলে দৈত্য মনে করে ভয় হয়। তাদের শরীরে অসংখ্য ভাঁজ, সঙ্গে মোটা ও বেঁটে লোকের মতো মুখ আছে। তাদের আট পা ও হিংস্র থাবা, এমনকি মুখের দাঁতও দেখতে শিকারের বর্শা- ছুরি বা একটি গুরুতর অস্ত্রের মতো।     

মাংসল প্রাণীটিকে প্রথম দেখলে দৈত্য মনে করে ভয় হয়। তাদের শরীরে অসংখ্য ভাঁজ, সঙ্গে মোটা ও বেঁটে লোকের মতো মুখ আছে।

তাদের আট পা ও হিংস্র থাবা, এমনকি মুখের দাঁতও দেখতে শিকারের বর্শা- ছুরি বা একটি গুরুতর অস্ত্রের মতো।      

কিন্তু চিন্তার কারণ নেই। এরা  টারডিগ্রেডস্‌ প্রজাতির ক্ষুদ্রতম একটি প্রাণী, যারা দেড় মিলিমিটারের বেশি লম্বা হয় না এবং শুধুমাত্র একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখা যেতে পারে। তারা ‘পানি ভালুক’ নামে পরিচিত। তবে টারডিগ্রেডকে ভয় বা সমীহ করার মূল কারণ হতে পারে এর জলে-স্থলের কঠোরতম অঞ্চলেও টিকে থাকার ক্ষমতাকে। ৫০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি আগে ক্যামব্রিয়ান যুগ থেকেই ১৫০ সেন্টিগ্রেড গরম ও উত্তপ্ত আবহাওয়া থেকে শুরু করে প্রায় পরম শূন্য তাপমাত্রায়ও টিকে আছে। আর এটিই একমাত্র প্রাণী, যা কোনো ধরনের সুরক্ষা ছাড়াই মহাশূন্যের রূঢ় প্রতিকূল অবস্থায়ও বেঁচে থাকতে পারে বলেও প্রমাণ পেয়েছেন জীববিজ্ঞানীরা।

যখন থেকে প্রথম জটিল প্রাণী বিবর্তিত হয়েছে, তখন থেকেই তারা আবিষ্কৃত হয়েছে তারা। এটা স্পষ্ট যে, বিবর্তনের ধারায় তারা বিশেষ সর্বংসহা ধরনের প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।

শুধু জল ভালুকই নয়, সাগরতলের আরও ৯০০ পরিচিত প্রজাতি লাখ লাখ বছর ধরে টিকে আছে। শৈবাল ও শ্যাত্তলা প্রজাতির ছাড়াও মাংসাশী প্রাণীরাও এ সর্বংসহাদের তালিকায় রয়েছে। আবার টারডিগ্রেডরা শৈবাল ও শ্যাত্তলা থেকে রস চুষে বা অন্যদের শিকার করে খায়।
১৭৭৩ সালে জোহান আগস্ট ইফ্রয়িম গোজি নামের একজন জার্মান যাজক প্রথম টারডিগ্রেড আবিষ্কার করেন। তিন বছর পরে ইতালীয় পাদরি ও বিজ্ঞানী লাজ্জারো স্পেলানজানি আবিষ্কার করেন যে, তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা পরাশক্তির পর্যায়ের।

স্পেলানজানি নর্দমা থেকে পলিযুক্ত বৃষ্টির জলে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করে ছোট ভালুক আকৃতির শত শত প্রাণীকে চারপাশে সাঁতার কাটতে দেখেন। তার বই ‘অপুস্‌কলি দ্য ফিসিকা অ্যানিমেলে আ ভেজিট্যাবিলি’ গ্রন্থে প্রাণীটির নামকরণ করেন ‘মাস টারডিগ্রেডো, যার অর্থ ‘ধীর পদক্ষেপকারী’। কারণ, তারা খুব ধীরে ধীরে সরছিল।

এরও আগে ১৭০২ সালের দিকে ডাচ বিজ্ঞানী আন্তন ভ্যান লিউয়েনহুক লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটিকে একটি চিঠি পাঠান। সঙ্গে তার নিজের সংগ্রহ করা ঘরের ছাদের ওপরে গাটার পলিতে পাওয়া ‘অ্যানিমেলকালস্‌’ প্রজাতির প্রাণীর নির্দিষ্ট কিছু নমুনা পাঠান। তিনি একটি নর্দমা থেকে শুষ্ক আপাতদৃষ্টিতে নিষ্প্রাণ ধুলো ও জলে রেখে প্রাণীগুলোকে  অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করেন। লিউয়েনহুক দেখতে পান যে, এক ঘণ্টার মধ্যে অনেক ছোট ‘অ্যানিমেলকালস্‌’ সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে সাঁতার শুরু করে। এসব ক্ষুদ্র প্রাণীদের বহুকোষী জলজ প্রাণী ফাইলাম রোটিফেরার মতো মাথার ওপরে ঝিল্লি ছিল। তারা আপাতদৃষ্টিতে জল ছাড়া মাসাধিককাল বেঁচে থাকতে পারে। সেখানে টারডিগ্রেডরা কয়েক দশক ধরে এটা ছাড়া বেঁচে থাকতে সক্ষম হতে পারে।

১৯৪৮ সালে ইতালীয় প্রাণীবিজ্ঞানী টিনা ফ্রান্সেসকি দাবি করেন যে, জাদুঘরে থাকা ১২০ বছরের বেশি আগের শুকনো শ্যাওলার নমুনা থেকে জানা গেছে, টারডিগ্রেডদের পুনঃসঞ্জীবিত করা যেতে পারে। একটি টারডিগ্রেডকে শোষণ বা নিরুদনের পর তিনি সেটিকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে এক পায়ে সামনে চলে যেতে দেখেন।

এ গবেষণার প্রতিলিপি হয়েছে কখনো কখনো। কিন্তু এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না যে, টারডিগ্রেডকে মৃত্যুর পর ফের বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। ১৯৯৫ সালে শুকনো টারডিগ্রেডকে ৮ বছর পর জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।