ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

প্রাচীন ভাষা-ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রাগৈতিহাসিক দ্বীপ

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৬
প্রাচীন ভাষা-ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রাগৈতিহাসিক দ্বীপ

আটলান্টিক মহাসাগর বেষ্টিত স্কটল্যান্ডের প্রত্যন্ত সেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ। অসাধারণ সৌন্দর্য ও বিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি এখানকার হাজারো প্রজাতির জীববৈচিত্র্যের বসবাস প্রাগৈতিহাসিক প্লেইস্টোসিন যুগ থেকেই।

আটলান্টিক মহাসাগর বেষ্টিত স্কটল্যান্ডের প্রত্যন্ত সেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ। অসাধারণ সৌন্দর্য ও বিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি এখানকার হাজারো প্রজাতির জীববৈচিত্র্যের বসবাস প্রাগৈতিহাসিক প্লেইস্টোসিন যুগ থেকেই।

মানুষও এখানে আছে প্রায় সমসাময়িক কাল থেকে। তাদের ভাষা যেমন বিচিত্র, আছে হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাও।

শতাধিক দ্বীপের সমষ্টি সেটল্যান্ডের মাত্র ১৬টি জনঅধ্যুষিত দ্বীপে বাস করেন মাত্র ২৩ হাজার ১৬৭ জন মানুষ। আর ৫৬৬ বর্গমাইল আয়তন ও ১ হাজার ৬৭৯ মাইল দীর্ঘ তটরেখা বেষ্টিত দ্বীপপুঞ্জটির সেটল্যান্ডের প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা কয়েক হাজার।

খ্রিস্টপূর্ব ৬ হাজার ১০০ সালে স্টরেগ্গা স্লাইড দ্বারা সৃষ্ট সুনামির আঘাতে সেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা বদলেছে যুগে যুগে। ১৭০৭ সাল থেকে বর্তমান ব্রিটিশ উপনিবেশের আওতাধীন সেটল্যান্ড পঞ্চদশ শতাব্দীতে স্কটল্যান্ডের অংশ হয়। এর আগে বেশ কিছুকাল ছিল প্রাচীন নর্স জাতিরও অধীনে। আদি ঐতিহাসিক যুগে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাষ্ট্রগুলো বিশেষত নরওয়ের প্রভাবিত ছিল। দু’ হাজার বছর আগে এটি ছিল বিশাল ও শক্তিশালী রোমান সাম্রাজ্যের অংশ।  

স্কটল্যান্ডের প্রাগৈতিহাসিক এবং তৃতীয় বৃহত্তম স্কটিশ ও পঞ্চম বৃহত্তম ব্রিটিশ এ দ্বীপপুঞ্জে বাসিন্দাদের অধিকাংশই স্কটিশ ভাষায় কথা বললেও আছেন প্রাচীন নর্স জাতির নর্ন ও রোমান ভাষাভাষিরাও।   

বিশেষ করে নবম শতকে নর্স জাতি জয় করার পর এখানকার একটি দ্বীপের নামও হয়েছে নর্স। দ্বীপটির নাম ও নর্স ভাষাটি এখনও চালু রয়েছে। আবার নর্স ভাষার শব্দগুলোও ধীরে ধীরে স্কটিস শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। সেটল্যান্ড নামটিও প্রাচীন নর্স শব্দ হিজ্যাল্ট (দামাট) ও ভূমি (ভূমি) থেকে প্রাপ্ত।

উড়োজাহাজ ও বিমানবন্দর, মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ, বিদ্যুৎ ও টিভি, বিমানবন্দরে একটি পাবলিক ফোন ও সব বাসিন্দাদের নিজস্ব জমিতে ফোনের লাইনসহ আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পাখিসহ স্থানীয় প্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষায় একটি নম্বরসহ একটি সাইটও অনেক এলাকায় আছে।  


আর হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা লৌহযুগের বৃত্তাকার টাওয়ার আর রোনাস স্টফাস্ট নামে পাথরের স্পটের  জন্য বিশেষভাবে পরিচিত সেটল্যান্ডের বসতিহীন দ্বীপ মুসা ব্রোচ যা স্কটল্যান্ডের সংরক্ষিত স্থাপনা। সেন্ট নিনিয়ানের আইল মেনল্যান্ড থেকে যুক্তরাজ্যে বৃহত্তম সক্রিয় ক্যানেল টম্বোলো দ্বারা সংযুক্ত। আছে সবচেয়ে উত্তরের দুর্গ মানেস ও স্ক। সেটল্যান্ডের ভূতত্ত্বও জটিল। অনেক ফল্টের সঙ্গে অক্ষ ভাঁজ ছাড়াও উত্তরাঞ্চলে আছে ক্যালেডোনিয়ান পর্বত যুগের ফাঁড়িও। লেওয়িসিয়ান, ডালড্রেডিয়ান ও মইনি রূপান্তরিত শিলার সঙ্গে প্রাচীন লাল বেলেপাথর ও গ্রানাইটের সমন্বয়ে বিচিত্র স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যনীয়। সমুদ্রতলে হিমবাহ ছাড়াও নানা পাতাল শিলাও বিদ্যমান।

সমুদ্রতলে তেল আবিষ্কারও এর বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির অংশ।

প্লেইস্টোসিন যুগের ২০০০ টন বরফের হিমবাহের চাদরে আবৃত রোনাস পার্বত্য দ্বীপ এবং কেন্দ্রীয় সেটল্যান্ডে ভোঁদর, পাহাড়ি খরগোস ও সোনালী টিটিপক্ষী আশ্রিত পাথুরে পাড়গুলো উচ্চ জলাভূমি বরাবরে অবস্থিত।


৭৭ খ্রিস্টাব্দে রোমান লেখক পম্পোনিয়াস মেলা ও প্লিনি দ্য এল্ডার প্রথম সেটল্যান্ডের নাম উল্লেখ করেন। ৯৮ খ্রিস্টাব্দে ট্যাকিটাসের রিপোর্টে এটি প্রথম রেফারেন্স হিসেবে উদ্ধৃত হয়। রোমান অন্য প্রাগৈতিহাসিক দ্বীপপুঞ্জ ওর্কনেই বিজয়ের সঙ্গে সেটল্যান্ড আবিষ্কারের এ বর্ণনা ঐতিহাসিক।

এদিকে প্রথম আইরিশ সাহিত্যে সেটল্যান্ডকে উল্লেখ করা হয় ‘ইনসে ক্যাট’ ‘বেড়ালের দ্বীপপুঞ্জ’, যা দ্বীপের প্রাক নর্স অধিবাসী বিড়ানা ল গোত্রের নামে হয়ে থাকতে পারে। তারা উত্তর স্কটল্যান্ডের কয়েকটি মূল ভূখণ্ড দখল করেন, যেগুলোকে কেইথনেস, ক্যাটাবিহ্‌ (বেড়ালের মধ্যে) ও সাদারল্যান্ড বা গ্যেলিক নামে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয় হেলি আ আগুন উৎসব ও একটি শক্তিশালী বাদ্যযন্ত্রের ঐতিহ্য রয়েছে এখানে। বিশেষত ঐতিহ্যগত বেহালার শৈলীসহ নর্স ও স্কটিশ ঐতিহ্য যৌথভাবে প্রতিফলিত। লেখকরা প্রায়ই সেটল্যান্ডের স্থানীয় ভাষায় গদ্য ও কবিতা রচনা করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।