ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অফবিট

ব্যাকটেরিয়ার কবলে বিলুপ্তির পথে সেইগা হরিণ!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
ব্যাকটেরিয়ার কবলে বিলুপ্তির পথে সেইগা হরিণ!

২০১৫ সালের মে মাস থেকে কেন্দ্রীয় কাজাখস্তানের প্রত্যন্ত স্টেপিস অঞ্চলে শত শত সেইগা হরিণ মারা যাচ্ছে। জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই দুঃখজনক এমন গণহারে মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

২০১৫ সালের মে মাস থেকে কেন্দ্রীয় কাজাখস্তানের প্রত্যন্ত স্টেপিস অঞ্চলে শত শত সেইগা হরিণ মারা যাচ্ছে। জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই দুঃখজনক এমন গণহারে মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।



সেইগা হরিণ একটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাগৈতিহাসক হরিণ, যাদের বসবাস ছিল কারপাথিয়ান পর্বতমালা ও ককেশাসের পাদদেশে জুঙ্গারিয়া এবং মঙ্গোলিয়া থেকে ইউরেশীয় অঞ্চলের সুবিশাল এলাকাজুড়ে। তারা প্লেইস্টোসিন যুগে উত্তর আমেরিকার বেরিনজিয়ানেও বসবাস করতো।

আজ শুধুমাত্র একটি স্থান রাশিয়ার কাজাখস্তানে এদের একটিমাত্র প্রভাবশালী উপজাতি সেইগা টি তাতারিকাদের দেখা যায়। মাঝে মাঝে পাওয়া যায় উরাল, উস্‌তিউরট এবং কালমিকিয়া প্রদেশের বেটপাক ডালা- এ তিনটি এলাকায়। শীতকালে উস্‌তিউরট থেকে উজ্‌বেকিস্থান ও মাঝে মধ্যে দক্ষিণ তুর্কমেনিস্তানে অভিবাসিত হয়।
চীন ও দক্ষিণ-পশ্চিম মঙ্গোলিয়া থেকে অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেইগা হরিণ। নির্বিচার শিকারে অষ্টাদশ শতকের শেষে এটি হারিয়ে গেছে রোমানিয়া ও মোল্দাভিয়া থেকেও। মঙ্গোলিয় উপ-প্রজাতি সেইগা টি মঙ্গোলিয়ার অল্প কিছু দেখা যায় শুধুমাত্র পশ্চিমা মঙ্গোলিয়ায়।

সেইগা হরিণ সংরক্ষণ ও প্রসারের উদ্যোগ নিতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাতে হয় বিজ্ঞানীদের। কেননা, তীব্র জন্ম প্রচেষ্টার পরেই জন্ম নেয় এরা। কাজাখস্তানে হাজার হাজার সেইগা হরিণ জন্মও নেয়। কিন্তু জন্মের কিছুদিন পরেই তাদের বিশাল সংখ্যক মারা যাচ্ছে।

অবিশ্বস্ত আবহাওয়া ছাড়াও ব্যাকটেরিয়াকে এ মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন প্রাণীবিজ্ঞানীরা।

সেইগার পরিবেশগত ইতিহাসে গত বছরের প্রজনন মৌসুমে রোগের কারণে সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশের পর রয়েল ভেটেরিনারি কলেজের ছাত্ররা এর মৃতদেহ পর্যবেক্ষণ করছেন। মাত্র কয়েক বছর আগেও আরেকটি সেইগা অধ্যুষিত এলাকায় এ প্রজাতির হরিণের মহামারি দেখা দিয়েছিল।
স্টেপিসের কঠোর মহাদেশীয় সমভূমিতে গ্রীষ্মের তাপ গাছপালা শুকিয়ে যায়, ঘন ঘাস সমান হারে উজাড় হয়। ঠিক সে সময়টিতে প্রজনন মৌসুম আসে সেইগাদের। নারীদের তাই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জন্ম দিতে বিশাল শারীরবৃত্তীয় চাপ তৈরি হয়। তাদের রোগ ও জন্ম-সংক্রান্ত মৃত্যুহার প্রবণতা তৈরির আশঙ্কা থাকে এমনিতেই।

অন্যদিকে ২০০০ সালে তাদের শিং ও মাংসের সেইগা শিকারের হার বেড়েও যায়। বিলুপ্তির আশঙ্কায় তাই ২০০১ সাল থেকেই আইইউসিএন লাল তালিকার বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এ প্রাণীটিকে। গত দেড় দশকে কাজাখস্তানের প্রায় ৩ লাখ সেইগা হরিণের মধ্যে আনুমানিক ৫০ হাজার মারা গেছে বলেও জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

২০১৫ সালের মড়ক তাই সরকার, বিজ্ঞানী ও এনজিওদের এর সংরক্ষণের বিষয়ে ভাবিয়ে তুলেছে। কাজাখস্তানের রয়েল ভেটেরিনারি কলেজ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের একটি যৌথ গবেষণা দল সেইগার বাস্তুতন্ত্রবিদ্যা সম্পর্কে আরও জানতে এর শাবকদের পর্যবেক্ষণ করতে কাজাখস্তানের প্রত্যন্ত স্টেপিস অঞ্চলে যান।
শিগগিরই শত শত কিলোমিটারের একটি বিশাল এলাকায় উপর সেইগাদের মৃতদেহ দেখতে পান তারা। তারা জন্ম দিতে জড়ো করা নারীদেরকেও ক্রমেই দুর্বল ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মারা যেতে দেখেন। আর শত শত শাবক জন্মের কয়েক দিন পরে মারা যায়।

বিয়োগান্তক এ ঘটনার পর ওই গবেষক ও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানতে পারেন, সংক্রামক এ রোগটি পুরো সেইগা জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়ছে নিমেষেই, যার জন্য এক ধরনের পরজীবী ব্যাকটেরিয়া দায়ী। ফলে অনেক প্রাণীর বসবাসস্থল ১ লাখ ৬৮ হাজার বর্গকিলোমিটারের বিশাল স্টেপিস অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র একই প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

আর তাই এখন ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ও নির্মূলে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
এএসআর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।