ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

আমাদের কাছে হেরে বিদায় নেয় নিয়ান্ডারথাল!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
আমাদের কাছে হেরে বিদায় নেয় নিয়ান্ডারথাল! নিয়ান্ডারথালদের কিছু বসতি

হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস্‌ বা নিয়ান্ডারথাল আমাদের প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সদের সমসাময়িক ও প্রায় একই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। অথচ তারা ৩০ হাজার বছর আগেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে চিরতরে, আর আমরা প্রচণ্ড প্রতাপে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছি বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের।

হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস্‌ বা নিয়ান্ডারথাল আমাদের প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সদের সমসাময়িক ও প্রায় একই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। অথচ তারা ৩০ হাজার বছর আগেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে চিরতরে, আর আমরা প্রচণ্ড প্রতাপে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছি বিশ্ব জীববৈচিত্র্যের।

 
 
এমনকি টিকে থাকা একমাত্র ও আধুনিক মানব প্রজাতিও আমরাই।   
 
 
ইউরোপে আমাদের বসবাস শুরুর আগেই এসেছিল নিয়ান্ডারথালরা। ৪০ হাজার বছর আগেও সেখানে তাদের পেয়েছিলাম আমরা। ঠাণ্ডা জলবায়ুতে মানিয়ে নিয়ে ২ লাখ বছর ধরে সফলভাবে বসবাস ছিল তাদের।  
নিয়ান্ডারথালদের কিছু বসতি
নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষের সাধারণ পূর্বপুরুষও ছিল একই। সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস হয়ে হোমো অস্ট্রালোপিথ্যাকাস্‌দের থেকে বিবর্তিত হয়েছি আমরা উভয়েই।  জেনেটিক গবেষণাও প্রমাণ করে, অস্তিত্বের প্রথম ১ লাখ বছর ধরে আমাদের ডিএনএ’র কিছু অংশও সাধারণ পূর্বপুরুষদের থেকে নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে ভাগ করে পেয়েছি আমরা।
 
তাই নিয়ান্ডারথালদের আদিম প্রজাতি হিসেবে না নিয়ে সহাবস্থান শুরু করে আধুনিক মানুষেরা। তারপর কিছু পরিবর্তন ঘটে। আমাদের অস্ত্রের সঙ্গে প্রতীকী শিল্পকর্ম উন্নত হতে শুরু করে। ফলে হোমিও স্যাপিয়েন্সরা জটিল করে তোলে নিয়ান্ডারথালদের জীবনযাত্রা।

গবেষকরা বলছেন, আধুনিক মানুষেরা তাদের আবাস দখল করায় নিয়ান্ডারথালরা ৪০ হাজার বছর আগে বাস্তুচ্যুত হয়। একটি বড় সংখ্যক নিয়ান্ডারথালের খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতার সংকোচনও তাদের জায়গায় আধুনিক মানুষ দ্রুত প্রতিস্থাপিত হয়েছে।  
 
নিয়ান্ডারথালদের কিছু বসতিজিব্রাল্টারে নিয়ান্ডারথালদের কিছু বসতি ছিল। সেখানকার আইবেরিয়া প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট বিশ্লেষণে জানা গেছে, আধুনিক মানুষের চেয়েও বনভূমির পরিবেশে ভালো শিকারি হিসেবে অভিযোজিত নিয়ান্ডারথালরা গরম কাপড় পরতো, ভয়ঙ্কর শিকারি ছিল এবং তাদের অত্যাধুনিক পাথরের হাতিয়ার ছিল। তাদের অস্ত্র বড় প্রাণী শিকারের উপযুক্ত ছিল। এমনকি চকমকি পাথরে কুঠার তৈরি করে খরগোশের মতো ছোট প্রাণীও শিকার করতে পারতো তারা। মৃত পশুর মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ দিয়ে উড়ন্ত পাখি শিকারের মতো বুদ্ধিও অর্জন করেছিল।  
 
কিন্তু ইউরোপে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তিত হতে শুরু করলে ঝুঁকিতে পড়ে যায় তারা।

যুক্তরাজ্যের বোর্ন্মাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন স্টুয়ার্ট বলেন, শীতল জলবায়ুতে বসবাস করতো তারা। একদিকে বনভূমি কমে যায়, অন্যদিকে জলভূমিও আধুনিক মানুষের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে। জঙ্গলে শিকার তাদের পছন্দের ছিল, ফলে পরিবর্তনের পর তাদের শিকার শৈলী খাপ খায়নি। পরিণামে নিয়ান্ডারথালদের খাবার কমে যেতে থাকে।  
নিয়ান্ডারথালদের কিছু বসতিনিয়ান্ডারথালদের অস্ত্রের কাজ ভালো ও সেগুলোর ব্যবহারে সাতিশয় দক্ষ ছিল তারা। কিন্তু আমরা যখন ইউরোপে আসি, আমাদেরগুলো আরও ভালো ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা প্রমাণ করে যে, আধুনিক মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি ও মারাত্মক অস্ত্রের একটি বড় মজুদ ছিল।  

অবশ্য কিছু অস্ত্র শুধুমাত্র আধুনিক মানুষের তৈরি নয়। আমরা পৃথিবীর অন্য প্রজাতির প্রতীকী শিল্পের অনুসরণে সেগুলো নির্মাণ করেছিলাম।

জার্মানির জাঁ জ্যাক লিপজিগ বিবর্তনমূলক নৃ-বিজ্ঞান ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের হাবলিন বলেন, হোমো স্যাপিয়েন্সরা তাদের বাসস্থান দখলে নিয়ে নিলে নিয়ান্ডারথালরা খুব শিগগিরই বাস্তুচ্যুত হয়। ফলে আধুনিক মানুষের কাছে প্রতিযোগিতায় হেরেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় তারা।

জার্মানির টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকোলাস কোনার্ডের দল নিয়ান্ডারথালদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে আধুনিক মানুষের স্থল আঘাত তাদের জনসংখ্যাকে দ্রুত কমিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে আমাদের সংখ্যা বেড়ে যায়, আমরা আরো অনেক জটিল সামাজিক ইউনিটে বসবাস শুরু করি এবং প্রয়োজন অনুসারে আরো পরিশীলিত উপায়ে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। ফলে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হলে ইউরোপ- আফ্রিকা তথা পুরো পৃথিবী থেকেই বিদায় নিতে বাধ্য হয় তারা’।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।