ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অফবিট

পরচর্চায় যতো লাভ

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
পরচর্চায় যতো লাভ পরচর্চায় যতো লাভ

‘পরচর্চায় যে গভীর আবেগ সঞ্চালিত হয়, আমরা আমাদের শিশুদের মাঝে এটি আজও দেখতে পাই। খুব ছোট বয়স থেকেই শিশুরা তাদের বন্ধু ও পরিবারের জন্য দৈনন্দিন জীবনের আকর্ষণীয় অংশটি বাতলে দেয় এর মধ্য দিয়েই’।

‘পরচর্চায় যে গভীর আবেগ সঞ্চালিত হয়, আমরা আমাদের শিশুদের মাঝে এটি আজও দেখতে পাই। খুব ছোট বয়স থেকেই শিশুরা তাদের বন্ধু ও পরিবারের জন্য দৈনন্দিন জীবনের আকর্ষণীয় অংশটি বাতলে দেয় এর মধ্য দিয়েই’।

দার্শনিক জুলিয়ান বাগিনীর এ বক্তব্যের মাঝেই পরচর্চা বা গসিপিং এর ভালো দিকগুলো নিহিত। জনশ্রুতির সঙ্গে শুধু একটি ভালো ছিটে দিয়েই এ পরচর্চা পরচর্চাই মানুষকে সামাজিক প্রাণীতে পরিণত করেছে  বলেও মনে করেন তিনি।

 
পরচর্চা আমাদের জীবনে আসা মানুষের দৈনন্দিন ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য ব্যবহার করা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া, যা আমাদের পূর্বপুরুষ প্রাগৈতিহাসিক মানুষ, এমনকি মানুষে বিবর্তনেরও আগে বানর, শিম্পাঞ্জি, বনমানুষ বা ওরাংওটাংদের মাঝে প্রচলন ছিল।

স্বতন্ত্র যেসব প্রাগৈতিহাসিক মানুষেরা একসঙ্গে হয়ে আগুনের ব্যবহার শিখেছিল কিংবা যে প্রাইমেট প্রাণীরা সাজগোজের প্রয়োজনে পরস্পরের কাছাকাছি এসেছিল, পরচর্চা তাদেরই আবিষ্কার। আমাদের সবচেয়ে নিকট আত্মীয় শিম্পাঞ্জি, বানর ও বনমানুষদের সাজগোজ, একে অপরের চুল স্পর্শ এবং অবাঞ্ছিত উকুন খোঁজার সময় মূলত পরচর্চা করতে আজও দেখা যায়, যা তাদেরকে বন্ধনে আবদ্ধ করে। পরচর্চায় যতো লাভআর এটি মানুষকে দল ও সমাজবদ্ধ করা ছাড়াও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং আরো অনেক উপকার করেছে।

এর মধ্য দিয়ে কথাবার্তা বলা ও সঠিক উচ্চারণেরও বেশি সুবিধা এবং শারীরিক উন্নতি হয়। কারণ, গসিপিং মানুষের মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তন, বড় ও উন্নত করেছে।

এসব কারণেও এটি একটি অনন্য উৎসাহজনক ধারণা যে, পরচর্চা স্বতন্ত্র মানুষকে আগুন ব্যবহারের ক্ষমতা তৈরির একটি ফল হিসেবে ইতিবাচক বিবর্তিত হতেও সহায়তা করেছে।

যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুস ইউনিভার্সিটির ক্লস জুবারবিউহেলার জানান, লাখ লাখ বছর আগে বেঁচে থাকতে আমাদের প্রথম মানব পূর্বপুরুষেরা বন থেকে আরো খোলা অঞ্চলে স্থানান্তরিত হন। সেখানে একসঙ্গে কাজ করতে এবং সফলভাবে খাদ্য অন্বেষণে বহির্মুখিতারই বেশি প্রয়োজন ছিল। এই দলবদ্ধতা তাদের মাঝে ব্যক্তিগত তথ্য ভাগ করার অভ্যাস গড়ে তুলেছিল, যা গসিপিং এ আরো সম্প্রসারিত হয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাষা ও সামাজিক আচরণেও এ ধরনের পরচর্চার একটি ফল রয়েছে। শিম্পাঞ্জিরা শুধুমাত্র নিশ্চিত যে, তারা একসঙ্গে থাকতে বাধ্য এবং সংকেত ও কণ্ঠস্বর তাদেরকে এজন্য সাহায্য করবে’।

তার মতে, ‘পরচর্চা আমাদের প্রাইমেট পূর্বপুরুষদের মধ্যে শারীরিকভাবে পরস্পরের কাছে আসার প্রয়োজন মিটিয়েছে এবং এর একটি সম্প্রসারণে অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছে’। পরচর্চায় যতো লাভতার গবেষণায়ও তিনি দেখেন যে, শিম্পাঞ্জিরা একটি বিপজ্জনক সাপের উপস্থিতিতে একে অপরকে সতর্ক করে দেয়। আবার ভালো মধু খাওয়ার জন্য সহযোগিতা করে, যেগুলো অবিলম্বে তাদের লক্ষ্য পূরণ করে।

‘অন্যদিকে, পরচর্চা এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য বিনিময় মানুষের জন্য সব সময় কার্যকরী ও প্রয়োজনীয়। আমরা জানতে পারি, কার সঙ্গে কথা বলতে হবে আর কাকে ও কার সমর্থন আমাদের জন্য প্রয়োজন। মানুষ যুথবদ্ধ আবেগ তৈরি করতে সক্ষম হয়। তথ্য ভাগ করেই আমরা একসঙ্গে প্রকল্প নেই, একসঙ্গে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করি এবং আমাদের সাধারণ লক্ষ্য পূরণ করি। উপরন্তু পরচর্চা ও তথ্য ভাগ আমাদের বর্ধিত চাহিদা বোঝারও একটি অবলম্বন’- বলেন জুবারবিউহেলার।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রবিন ডানবারও বলেন, ‘প্রাইমেটরা পরচর্চার মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি সীমিত সংখ্যক সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। পক্ষান্তরে সমবায় শিকারের প্রয়োজনে গসিপিং মানুষকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক দক্ষতা দিয়েছে। কারণ, একের সঙ্গে অন্যের ক্রিয়াকলাপে সময় লাগে। দলাকারের বন্ধনে এ প্রক্রিয়া একটি ঊর্ধ্বসীমা উদ্ভাসিত হয়’।

বাংলাদেশ সময়: ০২১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।