ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

কেন ও কিভাবে নবজাতকের খুলি পরিবর্তন

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
কেন ও কিভাবে নবজাতকের খুলি পরিবর্তন কেন ও কিভাবে নবজাতকের খুলি পরিবর্তন/ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন বাসিন্দারা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের নিজস্ব খুলির আকৃতি রূপান্তরিত করতো। শিশুর জন্মের কিছুদিনের মধ্যে এ পরিবর্তন ঘটানোর কাজ করতে করতে ওই প্রজাতির মানুষের মাথার আকৃতিই বিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন বাসিন্দারা ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের নিজস্ব খুলির আকৃতি রূপান্তরিত করতো। শিশুর জন্মের কিছুদিনের মধ্যে এ পরিবর্তন ঘটানোর কাজ করতে করতে ওই প্রজাতির মানুষের মাথার আকৃতিই বিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার চহুনা, নাকুরি, কুবল ক্রিক ও কেওডব্লিউ সোয়াম্প নামক প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলো থেকে পাওয়া গেছে খনিজে আবৃত অদ্ভুত আকৃতির ওই মাথার খুলিগুলোর জীবাশ্ম। নিচু ও ঢালু কপাল, সমতল বিশিষ্ট ললাট ঢাল এবং স্থানান্তরিত কপাল ও ললাট সেতুবন্ধের আদিম স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্যের খুলিগুলোকে আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির মানুষের বলে চিহ্নিত করেছেন নৃ-বিজ্ঞানীরা।

অস্ট্রেলিয়ান খুলি কৃত্রিমভাবে বিবর্তিত করার পদ্ধতি সম্পর্কে গবেষণা করে ১৯৭০ সালে বিজ্ঞানীরা জানান, ১২ মাস বয়স হলে শিশুদের অঙ্গবিকৃতি ঘটাতেন প্রাপ্তবয়স্করা। আমাদের খুলি এ সময়কালে নরম থাকে। বাবা বা অন্য প্রাপ্তবয়স্করা বোর্ড, ব্যান্ডেজ বা নিয়মিত মাথা মালিশ ব্যবহার করে তার মাথার বৃদ্ধির নির্দিষ্ট আবক্র পথ নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরিণামে বড় হতে হতে ওই অদ্ভুত আকৃতি পেতো মাথার খুলির। কেন ও কিভাবে নবজাতকের খুলি পরিবর্তন/ছবি: সংগৃহীত

নানা উপায়ে শিশুদের মাথার আকৃতির পরিবর্তনের এ পদ্ধতির প্রচলন আজও দেখা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন গোষ্ঠীর এমনকি আধুনিক মানুষদের মাঝে। অদ্ভুত ওই অস্ট্রেলিয়ান খুলির বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব বুঝতে পেরেও চমকৃত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

৯ থেকে ১৪ হাজার বছর আগের জীবিত ওই মানুষের এ আচরণের মধ্যে একটি অনন্য অন্তর্দৃষ্টি থাকা ও এর অপরিসীম সামাজিক গুরুত্বও বুঝতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন অধিবাসীদের খুলির আকৃতি পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, তাদের সামাজিক সম্ভাবনার উন্নতি। এর সঙ্গে একই ধরনের অনুশীলনের সাম্প্রতিক সংস্কৃতির সব তথ্য-প্রমাণের মিল রয়েছে। এমনকি আমরা মাথার নিরাপত্তায় যে করোটি সংক্রান্ত ছাঁচে নির্মিত হেলমেট এবং চুলের ব্যান্ড ব্যবহার করি, সেটিও এ পদ্ধতিকে যুক্তিপূর্ণ করেছে।

চহুনা খুলির অদ্ভুত আকৃতি নিয়ে গবেষণা শেষে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টোফ জোলিকোফের বলেন, বাচ্চাদের  মাথার খুলি পরিমার্জন পুরুষদের আরো বেশি পুরুষালি চেহারা গঠনের লক্ষ্যেও করা হতো।

জার্মানির বার্লিন চ্যারিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক এ মাইকেল ওবলাডেন সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মাঝে প্রাচীন ওই মাথা রুপায়ণ চর্চা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকায় সমাজের অভিজাত সদস্যরা নিজেদের সংজ্ঞায়িত করতে এ কাজ করতেন। একটি লম্বাটে খুলিকে আরো সুন্দর চেহারা ও উন্নত চরিত্র সৃষ্টির একটি মাধ্যম ও নিদর্শন বলে মনে করতেন তারা। কেন ও কিভাবে নবজাতকের খুলি পরিবর্তন/ছবি: সংগৃহীত

একই পদ্ধতি ১৯ শতকে নিকারাগুয়ার চিনুক ও উত্তর আমেরিকার কোওলিটজসহ কিছু নেটিভ আমেরিকান উপজাতিরা প্রয়োগ করতো। তারা কপালকে অস্ট্রেলিয়ান খুলির মতো ইচ্ছাকৃতভাবে চেপটা করতো। তাদের কাছে এটি স্বাধীনতার একটি চিহ্ন ছিল, যা গোলাকার কপালের সঙ্গীদের থেকে আলাদা করতো। আভিজাত্য, সৌন্দর্য ও স্বাধীনতার উদ্দেশ্যেও অনেকে মাথার খুলিকে বিবর্তিত করতো।

এমনকি বিংশ শতাব্দীতেও পাপুয়া নিউ গিনির এক উপজাতির বিশ্বাস ছিল যে, এটি তাদের শিশুর বুদ্ধিমত্তার চালচিত্রকে রুপান্তরিত করবে।

এদিকে অনেক আধুনিক শিশুকে তাদের পিঠের ওপর ঘুমানোর অভ্যাস করানো হয়। খাট মৃত্যু নামে পরিচিত সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম (SIDS) থেকে মৃত্যু কমাতেই এ অনুশীলন করা হয়। প্রাচীন অস্ট্রেলিয়ার মাথার বিবর্তন পদ্ধতির এটিও একটি উদ্দেশ্য ছিল।    

ওবলাডেন বলেন, মাথার রুপায়ণকে এখনও একটি মানুষের সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাসের শেকড় গড়ার কৃতিত্ব বলে মনে করা হয়। কিছু নবজাতক শিশুর মধ্যে এর মধ্য দিয়ে সেটি বিকশিত ও উন্নত করা যাবে- এমন বিশ্বাস আজকের সমাজেও বিদ্যমান আছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।