এ পরিস্থিতির জন্য যেহেতু আমরাই দায়ী, সেহেতু কিছুটা ক্ষতিপূরণ করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে আমাদের।
এ দায়বোধ থেকে বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের ক্লোনিংয়ে প্রথম সাফল্য আসে ১৯৯৬ সালের ০৫ জুলাই। প্রথমবারের মতো স্তন্যপায়ী একটি পূর্ণবয়স্ক প্রাণীর কোষ থেকে ক্লোন করতে সমর্থ হন বিজ্ঞানীরা। একটি গৃহপালিত ভেড়া প্রজাতির দু’টির ক্লোনিংয়ে সেবার জন্ম নেয় একটি নারী ভেড়া, যার নামকরণ করা হয় ডলি। ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ফুসফুসের রোগ ও গুরুতর বাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ৬টি মেষশাবকের জন্মও দিতে সমর্থ হয়েছিল ৬ বছর বয়সী ডলি।
আর বিশ্বের প্রথম বিলুপ্ত প্রাণীর ক্লোন হিসেবে ২০০৩ সালে স্পেনের পরীক্ষাগারে জন্মগ্রহণ করে বুকার্ডো প্রজাতির একটি বন্য পার্বত্য ছাগল। প্রাণীটি মাত্র কয়েক মিনিট বেঁচে থাকলেও বিজ্ঞানীদের আরও বিলুপ্ত প্রাণীর সুস্থ ক্লোনিং পেতে গবেষণা চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে গেছে।
এরপরও বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রজাতি থেকে ক্লোন করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ চলছে প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া বড় প্রজাতির লোমশ হাতি ম্যামথকে ফিরিয়ে আনতে। নিকটতম জীবন্ত আত্মীয় ও প্রায় সমবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বিপন্ন এশিয়ান হাতির ডিএনএ থেকে লোমশ ম্যামথকে পুনরুজ্জীবিত করার এ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ করেও এনেছেন বিজ্ঞানীরা।
হার্ভার্ডের ‘লোমশ ম্যামথ পুনর্জাগরণ’ প্রকল্পের প্রধান প্রজনন বিজ্ঞানী ও ক্লোনিং গবেষণার অগ্রদূত জর্জ চার্চ জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি ও তার দল সাবধানে এশীয় হাতিদের কোষে ম্যামথের সুবৃহৎ জিন স্থাপন করেছেন। তাদের পুনরুত্থান শেষ প্রান্তে রয়েছে এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে ক্লোন হয়ে ফিরে আসবে।
তবে একে পুরোপুরি ম্যামথ না বলে একটি ‘ম্যামথ-হাতি শঙ্কর’ অথবা ‘ঠাণ্ডা অভিযোজিত হাতি’ তৈরির কথা বলেছেন চার্চ, যাকে ‘ম্যামোফ্যান্ট’ বা ‘এলিমোথ’ বলা যেতে পারে।
ক্লোনিংয়ের ক্ষেত্রে কৃত্রিম গর্ভ থেকে প্রযুক্তির সাহায্যে ভ্রূণ তৈরির প্রক্রিয়া অবলম্বন করছেন চার্চ ও অন্য গবেষকরা। তিনি জানিয়েছেন যে, তার ল্যাবের গবেষকরা স্বাভাবিক গর্ভধারণকালের অর্ধেক সময় বা ১০ দিনে একটি কৃত্রিম গর্ভে একটি ইদুরের ভ্রূণ উৎপাদন করেছেন।
ক্লোনিংয়ে আগেই পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এক ধরনের মার্কিন মাছ, যা আমেরিকান প্রকৃতিতে সহনশীল বলে প্রমাণিত হয়েছে। জেনেটিক্যালি স্পন্দনশীল এ প্রজাতিকে টেকাতে হিমায়িত কোষ ব্যবহার করা হয়। ফলে এরা স্বাভাবিকভাবে বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়, যা তার হারিয়ে যাওয়া জিনগত প্রকরণের কিছু স্বজাতিকে জন্ম দেয়।
অনুরূপ কৌশল এখন অন্যান্য অগণিত প্রজাতির প্রাণীদের ওপর প্রয়োগের পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা। জিনোম এডিটিং, শঙ্করায়ন ও ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে সংরক্ষণের লক্ষ্যে তারা এখন ইউরোপের কালো খাটাস, নিউজিল্যান্ডের বড় সবুজ তোতাপাখি কাকাপো এবং মধ্য আফ্রিকার শেষ তিনটি সাদা গণ্ডার প্রজাতি কেনিয়া, ওল ও পেজেটা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন।
বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা এসব প্রাণীকে ক্লোনিং করা গেলে তাদের সন্তানেরা আরো সুস্থ ও প্রজননক্ষম হবে বলেও আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
জেনেটিক্যালি বিচিত্র বন্যপ্রাণী জনগোষ্ঠীগুলোর বংশবৃদ্ধি ও উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও বড় পরিসরে চালাতে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের প্রাণিবিদ্যা ইনস্টিটিউটের বাস্তুবিজ্ঞানী জন ইউওয়েন সম্ভাব্য প্রাণীদের তালিকা করেন। প্রকৃতি সংরক্ষণবাদী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন (আইইউসিএন) নির্দেশিত নীতিমালা অনুসারে এ তালিকা করার পর ক্লোনিং বিজ্ঞানকে উন্নত করার কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
এএসআর