ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

যে খাবার আকাশ থেকে পড়ে টুপটাপ!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
যে খাবার আকাশ থেকে পড়ে টুপটাপ! যে খাবার আকাশ থেকে পড়ে টুপটাপ!- ছবি: সংগৃহীত

পিঁপড়া বৃষ্টিই বলা চলে একে। এরা আকাশ থেকে উড়ে উড়ে আসে। মাটিতে পতিত হয়। আর কুড়িয়ে সেগুলো স্তুপ করে, পরে কড়াইয়ে ভেজে তৈরি হয় সুস্বাদু সস।

দক্ষিণ মেক্সিকোর ওক্সাকা নগরীতে এ এক বিশেষ ডেলিকেসি। এই বিশেষ পিঁপড়া-সস নিয়ে বিবিসিতে প্রকাশিত একটি ফিচারে বলা হয়েছে- প্রতিবছর বসন্তের প্রথম বৃষ্টির পর লোকেরা আকাশ পানে দৃষ্টিমেলে তাকিয়ে থাকেন কখন আসবে পাখাওয়ালা পিঁপড়েরা।

স্থানীয় ভাষায় ওগুলোর নাম ‘চিকাতানাস’। বৃষ্টির পর এগুলো দলে দলে ছুটে যায় আকাশ পানে। আর গোটা আকাশ ভরে যায় এই পোকায়। ওগুলোর মোটা বড় শরীরে অতি হালকা ছোট ছোট সদ্য গজানো পাখা।

বৃষ্টির পর নতুন গজানো পাখায় যখন প্রথম উড়াল দেয় তখন এই চিকাতানাস (বাংলায় উই পোকা বলা চলে) বেশ উত্তেজনায় থাকে। প্রবল পাখা ঝাপটিয়ে দ্রুতই তা ভেঙ্গে ফেলে।
যে খাবার আকাশ থেকে পড়ে টুপটাপ!- ছবি: সংগৃহীত
পিপিলিকার পাখা হয় মরিবার তরে, সেই আপ্তবাক্যকে সত্যে পরিণত করে সেই নাজুক পাখা ভেঙ্গে পিঁপড়াগুলো টুপটাপ পড়তে থাকে মাটিতে। তখন শুধু কুড়িয়ে সেগুলোকে এক জায়গায় স্তুপ করা। ছোট ছোট শিশুরা মহা আমোদেই তা করে।

তখন সেগুলো ভেজে খাওয়া চলে।

ওক্সাকার সবচেয়ে এক্সক্লুসিভ রেস্টুরেন্ট ক্রিওলোর সেলিব্রেটি শেফ এনরিক ওলভেরা এই সস বানান পরম আন্তরিকতায়। শিখেছেন ছেলেবেলায় মায়ের কাছে। প্রথমেই তিনি বড় কড়াইয়ে পিঁপড়াগুলো ভেজে নেন। এরপর অ্যাভাকাডো পাতা ভেজে তার সাথে নেন চিলি ডি আরবোল নামের বিশেষ মরিচ ও কিছু রসুন। এরপর মোলাকাজেট নামে মেক্সিকান বিশেষ পাত্রে ঢেলে নেন সবগুলো উপাদান। আগ্নেয়পাথরে তৈরি এই বিশেষ পাত্রেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এই পিঁপড়ে সস তৈরিতে।

খাদ্য উপাদন স্বল্প, কিন্তু স্বাদ ও গন্ধে এ এক অসাধারণ খাবার।  

মেক্সিকোয় পোকাকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার সেই মেসোয়ামেরিকান সময় থেকে। তবে উপনিবেশীয় আমলে খাদ্যাভাব ও দারিদ্রও এই অভ্যাস গড়ে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

‘একজন মা যখন পরিবারকে খাবার দেওয়ার দায়িত্বে থাকেন, আর যখন কোনও খাবারই থাকে না, তখন এই পিঁপড়ে ভাজাই হতে পারে সবচেয়ে ভালো খাবার, কারণ এর গন্ধটা যেমন সুস্বাদু তেমনি এতে প্রোটিনও মেলে উচ্চ পরিমানে,’ বলেন এনরিক।

এক সময় ঘরে ঘরে এই খাদ্য তৈরি হলেও রেস্টুরেন্টে খুব একটা মিলতো না, কিন্তু মেক্সিকোর বড় বড় রেস্তঁরাগুলোতে এখন এই খাবার বেশ উচ্চ দামে বিক্রি হয়। সমাজের ধনি উঁচু পর্যায়ের লোকেরা আমোদ করে খায়।

প্রতি পাউন্ড জ্যান্ত চিকাতানাস ৮৫০ পেসো দিযে কেনেন এই শেফ। আর বছরের গুটি কয় দিনই কেবল এই খাদ্য রেস্টুরেন্টগুলোতে মেলে।
যে খাবার আকাশ থেকে পড়ে টুপটাপ!- ছবি: সংগৃহীত
মেক্সিকোর বড় বড় রেঁস্তরায় আজকাল আরও নানা পোকায় তৈরি খাবার মেলে। আর খাদ্য রসিকরা তা খুঁজে খুঁজে খান। তবে প্রোটিনের মাত্রা পোকায় পোকায় তফাৎ রয়েছে। একই সাথে খাবারটি কিভাবে তৈরি হলো তার ওপর নির্ভর করে এর স্বাদ। বলা হয় এক গ্রাম চিকাতানাসে যে প্রোটিন তা এক গ্রাম গরুর মাংসের প্রোটিনের সমান। এছাড়াও পোকা খেলে তার পরিবেশগত প্রভাবও অপেক্ষাকৃত কম। যে কারণে জাতিসংঘ এরই মধ্যে পোকাকে ভবিষ্যতের খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে।

মেক্সিকোর দামি রেস্টুরেন্টে গিয়ে চড়া দামে চিকাতানাস সস খাওয়ার ধুম দেখা দিলেও এই খাবার এখনো দেশটিতে গরিবের খাদ্য হিসেবেই বিবেচিত। শুধু যে সস বানিয়ে খাওয়া হয় তা নয়, মেক্সিকোয় কেউ কেউ ওগুলো স্রেফ বাদামের মতো ভেজে খায়। কেউ পাখা লেজ ছাড়িয়ে স্রেফ মাংসল দেহটি ডলে এক ধরনের ক্রিমের মতো তৈরি করে খায়। কেউ এর সাথে লবন মিশিয়ে একটি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সারা বছর রেখে খেতে পারে। মেক্সিকো সিটির একটি রেস্টুরেন্টে চিকাতানাসে তৈরি মেওনিজ পাওয়া যায় যা বেবি কর্ন দিয়ে পরিবেশিত হয়।

মেক্সিকোর বড় বড় রেঁস্তোরায় উড়ন্ত পিপিলিকা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ স্রেফ একটা ক্রেজ হতে পারে, তবে এও হতে পারে এর মধ্য দিয়ে পোকা হয়ে উঠবে নিয়মিত খাবারের উপাদান। তবে একটি বিষয় অবশ্যই সত্য, প্রতিবছর যখন চিকাতানাসরা আকাশে উড়তে শুরু করবে, সবাই উত্তেজনায় নেমে আসবে বাইরে, আর পড়ে যাবে পিঁপড়া কুড়ানোর ধুম। ঘরে ঘরে প্রস্তুত থাকবে কোমাল নামে আগ্নেয়পাথরে তৈরি সেই বিশেষ পাত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
এমএমকে/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।