ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অফবিট

জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজ্যতার বলেই সৃষ্টির সেরা মানুষ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজ্যতার বলেই সৃষ্টির সেরা মানুষ! সমসাময়িক নানা প্রজাতির মানব প্রজাতিকে হটিয়ে আমদের প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সটিকে আছে অভিযোজ্যতার ক্ষমতায়। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

এক লাখ বছর আগে আমাদের প্রজাতির মানুষেরা (হোমো স্যাপিয়েন্স) আফ্রিকা থেকে বিশ্বের বাকি অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচু পাহাড় পর্যন্ত হাজার হাজার জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর পরিবেশের বিভিন্ন বৈচিত্র্যের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতাই তাকে এসব স্থান দখলে সহায়তা করে।

এ পর্যন্ত প্রাপ্ত হোমিনিন জীবাশ্মগুলো বলছে, মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস ৬০ লাখ বছরের। সুদীর্ঘ এ সময়কালে বার বার পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে।

জলবায়ুর পরিবর্তনই পৃথিবীর পরিবেশ, সমগ্র ইতিহাস এবং নিখুঁত রাষ্ট্রের সৃষ্টি ও ধ্বংসের মূল কারণ। চারপাশে বিশ্বের বারংবারের এ পরিবর্তন ও পদ্ধতির মাঝেও টিকে থাকার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের। ওই সময়কার সাফল্যের বেশিরভাগ এসেছে নানা বৈশিষ্ট্যের বিবর্তনের হাত ধরে, যা আমাদেরকে বিভিন্ন পরিবেশে আরও উপযোগী করতে সক্ষম হয়েছিল।

দক্ষিণ কেনিয়ার রিফ্ট উপত্যকার পাহাড়ে দৃশ্যমান পলিমার স্তর পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের মানুষের বিবর্তন ও অভিযোজনের ব্যাখ্যা দেয়। অভিযোজ্যতার বলে এসব অস্ত্র-সরঞ্জাম তৈরি-ব্যবহারের সক্ষমতা মানুষকে পরিণত করেছে আরও শক্তিশালী প্রাণীতে।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতসেখানকার বন ও ঘাসের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বাস করা মানব প্রজাতির প্রথম দ্বিপদ হোমিনিন মাটি ও গাছ- দু’টিতেই বসবাস করতে সক্ষম হয়েছিল, যা তাদেরকে নানা সুবিধা দিয়েছিল। আধুনিক মানুষের আগুনের নিয়ন্ত্রণসহ সরঞ্জাম তৈরি-ব্যবহারের ক্ষমতা তাদেরকে শিকারের হাড়-মাংস- চর্বি আরও দক্ষতার সঙ্গে আলাদা, মস্তিষ্কের হাড় ভাঙা এবং পুষ্টিকর কন্দের মতো নতুন উদ্ভিদজাত দ্রব্য সংগ্রহের মাধ্যমে খাদ্যগুলোকে সহজেই খেতে সহায়তা করে। অস্ত্রের ব্যবহারে ভূ-গর্ভস্থ শিকড় পর্যন্ত উত্তোলন করে তাদের খাবার তালিকাকে সমৃদ্ধ করে। তাই নির্দিষ্ট কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণী বিলুপ্ত হলেও তাদের প্রচুর বিকল্প ছিল।

এসবের ফলে বৃহত্তর ও আরো জটিল মস্তিষ্কের সঙ্গে ভাষা থেকে শুরু করে সৃজনশীল সমস্যা সমাধান পর্যন্ত সব ক্ষমতাই অর্জন করে আদি মানুষেরা।

আফ্রিকায় পাওয়া অস্ত্র-সরঞ্জাম ও প্রতীক এবং মস্তিষ্কের আকার বাড়ানো ও সরলপথে হাঁটা নির্দেশ করে- এমন পদচিহ্নগুলো এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত মানুষের উৎসস্থলগুলোর হাজারো সংকেতকে তুলে ধরেছে।

আমাদের বিবর্তনীয় বৃক্ষের অন্য প্রজাতিগুলোর এমন সব বৈশিষ্ট্য ছিল, যেগুলো বিশেষ পরিবেশে আরো বিশেষ ছিল। এসব পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে তারা খুব সফলও ছিল। তবুও ওই স্থানীয় বৈশিষ্ট্যগুলো নতুন অবস্থানে বাসের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতাকে সীমিত করেছে। তারা নতুন ভৌগোলিক অঞ্চলে বাস করতে অস্বাভাবিক জলবায়ু পরিবর্তনের সমন্বয় করতে খুব কমই পেরেছে। পূর্ব আফ্রিকায় প্রাথমিক মানব বংশ, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং শক্তিশালী জলবায়ু পরিবর্তনের সময়কালের সম্পর্কের তালিকা।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতযখনই তারা নতুন অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বা উল্লেখযোগ্যভাবে তাদের অবস্থান পরিবর্তনে ব্যর্থ হয়েছে, তখনই তাদের মৃত্যু ঘটেছে। এর একটি ভালো উদাহরণ হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস্‌ বা নিয়ান্ডারথাল।

এ প্রজাতির সদস্যদের শরীর ছিল ঠাণ্ডা জলবায়ুর উপযোগী। শীতার্ত অঞ্চলে সফল জীবনযাপনে তাদের ছোট-মোটা আকৃতি, বড় নাক এবং পোশাক তৈরি-ব্যবহারের সক্ষমতাসহ সমস্ত বৈশিষ্ট্যই ছিল।

অন্যদিকে আফ্রিকান জলবায়ুতে টিকে থাকার উপযুক্ত শারীরিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি আমাদের প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সদের নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার অত্যন্ত উন্নত ক্ষমতা ছিল। উদ্ভাবনী হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে নিয়ান্ডারথালের জন্য এটি বিশেষভাবে কঠিন হয়ে ওঠে। ঠাণ্ডা পরিবেশের সীমিত ভৌগোলিক পরিসরে অবশেষে বিলুপ্ত হয়ে যায় তারা।

নিয়ান্ডারথাল ও অন্যান্য প্রাথমিক মানব প্রজাতির অভিযোজন যোগ্যতায় আধুনিক মানুষের এসব বৈশিষ্ট্যের কিছু কিছু থাকলেও হোমো স্যাপিয়েন্স ভূখণ্ড পরিবর্তন এবং বেঁচে থাকার স্বার্থে চরম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে নিজেদেরকে আলাদা করে ফেলে।

মানব বিবর্তনীয় ইতিহাসে আমাদের প্রজাতির ইতিহাসের স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজন যোগ্যতাগুলো এভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্যাপিয়েন্সের এ অনন্য বৈশিষ্ট্য এমন একটি মানব প্রজাতি তৈরি করেছে, যা বেঁচে থাকার একটি মডেল হিসেবে তার আচরণ ও পরিবেশকে পরিবর্তনের ক্ষমতা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এগুলো আমাদের ভবিষ্যতের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকেও সমৃদ্ধ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।