সম্প্রতি দক্ষিণ ক্যারোলিনার কনওয়ে শহরে ঘটেছে এমন অমানবিক ঘটনা।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, ১০ বছর ধরে শ্বেতাঙ্গ ববি পল এডোয়ার্ডসের ‘জে অ্যান্ড জে ক্যাফেটেরিয়া’য় বিনা বেতনে সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টা করে কাজ করেছেন কৃষ্ণাঙ্গ জন ক্রিস্টোফার স্মিথ।
৩৯ বছর বয়সী স্মিথ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, তার আইকিউ ৭০-এর চেয়েও কম। দক্ষিণ ক্যারোলিনার জেলা আদালতে দায়ের করা এক অভিযোগে বলা হয়, একবার এডোয়ার্ডস লোহার চিমটা ফুটন্ত তেলে ডুবিয়ে স্মিথের ঘাড়ে ছ্যাঁকা দেন। এছাড়া তিনি প্রায়ই বর্ণবাদী ও বাজে ভাষায় গালাগালি করতেন স্মিথকে।
চলতি বছরের নভেম্বরেই জোর করে দাস বানিয়ে রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এডোয়ার্ডসকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে স্মিথকে ২ লাখ ৭২ হাজার ৯শ’ ৫২ মার্কিন ডলার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তাকে।
রায়ের পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র স্পেশাল এজেন্ট জোডি নরিস বলেন, এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে এভাবে দাস বানিয়ে দিনের পর দিন অত্যাচারের ঘটনা অত্যন্ত জঘন্য।
নাগরিক অধিকার বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক ড্রেইবান্ড বলেন, এই সময়ে এসেও এদেশে একজনকে জোর করে দাস বানিয়ে রাখা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়ার মতো না। দাসপ্রথা বিলুপ্তির দেড় শতাব্দী পর এমন ঘটনা অচিন্তনীয়।
স্মিথ ১৯৯৬ সালে প্রথম জে অ্যান্ড জে ক্যাফেতে ডিশওয়াশার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২। প্রথমদিকে তাকে বেতন দেওয়া হতো। তখন ক্যাফেটির মালিক ছিলেন এডোয়ার্ডসের ভাই। এডোয়ার্ডস ক্যাফের ম্যানেজার হওয়ার পর থেকেই স্মিথের ওপর নির্যাতন শুরু হয়।
স্মিথ বলেন, আমার সঙ্গে এডোয়ার্ডসের স্ত্রী, মা, বাবা, ভাই-বোন সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু, তার সঙ্গে কিছুতেই বনিবনা হতো না।
এডোয়ার্ডস ম্যানেজার হওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে স্মিথের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। স্মিথকে রেস্তোরাঁর পেছনে একটি ছোট্ট ঘরে বসবাস করতে বাধ্য করেন তিনি।
ক্যাফের নিয়মিত খদ্দের ও একসময়ের কর্মী জিনেইন কেইন্স বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান। তিনি বলেন, একদিন স্মিথ রান্নাঘর থেকে এসে বারে কিছু খাবার নামিয়ে রাখে। সেসময় তার ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই।
কর্তৃপক্ষ জানার পর ২০১৪ সালের অক্টোবরে স্মিথকে ওই রেস্তোরাঁ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু, ততদিনে ১৭ বছর হয়ে গেছে নির্যাতনের।
বর্ণবাদের বিপক্ষে কাজ করা সংগঠন দ্য ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব কালার্ড পিপল (এনএএসিপি) স্মিথকে সহযোগিতা করে। এখন তিনি কনওয়ের অন্য একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন।
স্মিথ বলেন, আমি অনেক আগেই সেখান থেকে চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, আমার যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। পরিবারের কেউ, এমনকি মাকেও দেখতে যেতে পারিনি। তাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল আমার।
এডোয়ার্ডসের ব্যবহার সম্পর্কে তার পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন বলেও অভিযোগ করেন স্মিথ। তিনি বলেন, তারা সবাই জানতেন তিনি আমার সঙ্গে কী করতেন।
এডোয়ার্ডস ছাড়াও ভাই আর্নেস্ট এডোয়ার্ডস ও তার রেস্তোরাঁ নিয়েও মামলা চলছে। ইতোমধ্যে নতুন ম্যানেজার নিয়োগ দেওয়া হলেও রেস্তোরাঁটি এখনো এডোয়ার্ডস পরিবারের মালিকানাধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৯
এফএম/একে