বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত একক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানান বাংলাদেশ সফররত জাপানের সাবেক এ প্যারা অ্যাথলেট। জাপানের হয়ে তিন বার প্যারা অলিম্পিকে অংশ নেন তাকুচি আকি।
তাকুচির 'টুওয়ার্ডস বিল্ডিং ইনক্লুসিভ সোসাইটি' (সমবেত সমাজ গঠনের দিকে) শীর্ষক এ আলোচনা অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন- ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো।
আলোচনাকালে হার না মেনে শারীরিক প্রতিবন্ধী ইয়ক্তিদের জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে তাকুচি বলেন, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আমাকে ২৫ বছর বয়সে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে হয়। এরপরের জীবন শুরুর দিকে খুব কঠিন ছিল। তবে একবার যখন বুঝে গেছি যে, আমাকে এভাবেই থাকতে হবে, তখন নিজেকে তৈরি করেছি। তখন শুধু সামনের দিকে এগিয়েছি। পেছন ফিরে তাকাইনি। আপনারাও থেমে থাকবেন না। এগিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীতে প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে শারীরিক অক্ষমতায় ভুগছেন। জাপানের মতো দেশেও অনেক প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যক্তিদের চাকরি পাওয়া কষ্টসাধ্য। আর যারা কাজ করেন তাদের প্রতিনিয়ত নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে হয়। বিশ্বাস করুন, সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলে আপনারাও পারবেন।
'আমি এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের করুণার চোখে দেখা হয় না। এমন কাউকে দেখলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে না বরং সুস্থ মানুষদের মতো আমরাও একাই চলাফেরা করতে পারবো। অবকাঠামোগুলো এমনভাবে বানানো হোক, যেন আমরা নিজেরাই একা একা চলাফেরা করতে পারি এবং অন্যদের সাহায্য করতে পারি। '
আসন্ন প্যারা-অলিম্পিকে জাপানের বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে তাকুচি বলেন, প্রথমত আমি এটাকে প্যারা-অলিম্পিক বলতে চাই না। এই অলিম্পিক সাধারণ অলিম্পিকের মতোই সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত। তবুও এই আয়োজন হচ্ছে মনঃশক্তি, লক্ষ্য, সাম্য ও অনুপ্রেরণার আয়োজন। জাপান তিনটি স্লোগানকে সামনে রেখে এবার এ আয়োজন করছে। এগুলো হলো- ব্যক্তিগত সেরাটা অর্জন, বৈষম্যের মাঝে একতা আনা ও আগামী দিনের সাথে 'আজ'-এর যোগসূত্র স্থাপন। এসময় প্যারা-অলিম্পিকের বিভিন্ন আয়োজন নিয়ে সচিত্র প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন তাকুচি। বিশেষ করে শ্যুটিং বিষয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এ অ্যাথলেট।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল বলেন, আমরা এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি, এমন সময় জাপানেও অলিম্পিক আয়োজন করছে। আমি আশা করি তারা সফলতার সঙ্গে এ আয়োজন সম্পন্ন করবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এছাড়া শ্যুটিং ও সাঁতারে আমাদের ৬ থেকে ৮ জন অ্যাথলেট অংশ নেবেন। জাপানের সঙ্গে নানা খাতে আমাদের বন্ধুত্ব্বপূর্ণ সম্পর্ক। বরাবরের মতোই আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করি।
অনুষ্ঠানে জাপানি রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো বলেন, প্যারা-অলিম্পিক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই এ আয়োজন করছি আমরা। তাকুচি আকি তিনবার প্যারা অলিম্পিকে জাপানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। টোকিও এই গ্রীষ্মে অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিকের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো প্যারা-অলেম্পিক আয়োজন করতে যাচ্ছে। ১৯৬৪ সালে জাপান শেষবার অলিম্পিক আয়োজন করেছিল। এবার ১৬০টি দেশ থেকে প্রায় ৪০০ অ্যাথলেট এতে অংশ নেবে।
বক্তব্যকালে ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও জাপানের বন্ধন আগামীতে আরও দৃঢ় হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে নাওকি ইতো বলেন, আমরা দুই পক্ষ একে অপরের সাথে 'হিউম্যান স্পিরিট' বিনিময় করতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২০
এসএইচএস/এইচজে