ঢাকা, রবিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিলেতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

গাজী মহিবুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৭ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১২
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিলেতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ম্যানচেস্টার থেকে: দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশবাসীর মতো যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিরাও উদ্বিগ্ন। বিলেতে রয়েছে বাংলাদেশের বাইরে দেশিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সবচেয়ে বড় ঘাটি তথা প্রবাসী রাজনৈতিক সংগঠন।

আছে বাংলা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ছড়াছড়িও। সঙ্গত কারণে প্রতিদিনই বিলেত থেকে প্রচারিত টিভি চ্যানেলগুলোতে চলছে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে লাইভ টক-শো, আলোচনা অনুষ্ঠান এবং রাজনীতির ময়না তদন্ত।

বিলেতে দেশীয় রাজনীতির প্রবাসী শাখাগুলো প্রতিনিয়ত পক্ষে-বিপক্ষে সভা-সমিতি, মিটিং, মিছিল এমনকি ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে স্মারকলিপি পেশ থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সবধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আছে দলীয় কোন্দলও। দলের গুরুত্বপুর্ণ পদ পাওয়ার জন্য লবিং, গ্রুপিং। আবার কখনো তা সহিংসতায় রুপ নিচ্ছে।

সব মিলিয়ে বিলেতে এখন এক বাংলাময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বৃটেনের ম্যানচেষ্টার, বার্মিংহাম, ওল্ডহাম, রচডেল, হাইডসহ নর্থওয়েষ্ট এবং ওয়েষ্ট মিডল্যান্ডে বাঙ্গালী অধ্যুষিত অধিকাংশ এলাকাতেই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ কিংবা যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র উদ্যোগে স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে, রেস্টুরন্টে আবার কখনো কখনো হাইকমিশন সম্মুখে চলছে সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক মিটিং, প্রতিবাদ সমাবেশ ইত্যাদি।

বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকে শুরু করে গত ১৬ ই মে বিএনপির ৩৩জন কেন্দ্রিয় নেতাকে একসাথে জেলে পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিলেতে বসবাসরত বাংলাদেশি রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

এখানে বাংলাদেশের মতো রাজপথের রাজনীতি না থাকলেও ঘরে খাবার টেবিল থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত যেখানে একজন বাংলাদেশির সাথে আরেকজনের দেখা হচ্ছে আলোচনার বিষয়বস্তু ঘুরে ফিরে সেই বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি-ই।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিনিধি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও যুক্তরাজ্য বিএনপি এর ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, ওল্ডহাম, রচডেল, হাইড ও টেমসাইড শাখার নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন। দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে এমনই ছিল তাদের প্রতিক্রিয়া/মতামত।

ম্যানচেস্টার:
আওয়ামী লীগ সভাপতি এনাম ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি যেখানে বিশ্বের অনেক দেশের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, একটি বিদেশি সংস্থার জরিপে যেখানে দেখা গেছে দেশের ৭৭% মানুষ সরকারের কর্মকাণ্ডে আস্থা রেখেছে  সেখানে বিরোধীদল কোন ইস্যু না পেয়ে নিজেরাই ইস্যু তৈরি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করছে।

বিএনপি সভাপতি কামাল হোসেন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব দেশবাসীকে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের একদলীয় শাসনের কথায়ই মনে করিয়ে দেয়। সরকারের এহেন স্বৈরাচারী মনোভাবে প্রবাসীরা আতংকিত।

বার্মিংহাম/ওয়েস্ট মিডল্যান্ড:
বিএনপির সভাপতি এম এ লতিফ তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে- বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধীদলকে এমন অগণতান্ত্রিক ভাবে রাজনৈতিক হয়রানির ঘটনা আর ঘটে নাই। সরকার সম্পূর্ণ একগুঁয়েমির মাধ্যমে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বিরোধীদলকে নিপীড়ন, নির্যাতন করে গণতন্ত্রকে কলংকিত করছে। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হওয়া দরকার।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ কবির উদ্দিন বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল করার জন্য জামায়াতের যোগ সাজশে বিরোধীদল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পায়তারা করছে।

ওল্ডহাম:
বিএনপি সভাপতি জামাল উদ্দিন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিরোধীদলকে দমাতে সরকার সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। সরকারের এই মনোভাবের পরিণতি ভাল হবে না।

তিনি আরো বলেন, প্রবাসীরা মনে করে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, সরকার ইলিয়াস আলীকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিবে এবং মিথ্যা মামলায় আটক কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি দিবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জিল খান বলেন, যেকোন হত্যাকা-, গুম এই ধরনের কর্মকাণ্ডের পক্ষে আমরা না কিন্তু তার মানে এই না যে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে একটি অস্থিতিশীল, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিরোধীদল জ্বালাও, পোড়াও, মানুষ পুড়ে মারার মতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাবে। যুদ্ধাপরাধীদের বাচানোর জন্যই মূলত এসব ষড়যন্ত্র।

রচডেল:
আওয়ামী লীগ সভাপতি আঃ হাশিম ভুইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বিরোধীদল আন্দোলনের নামে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এতে  বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।  

বিএনপি সভাপতি মোঃ জয়নাল আবেদীন প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যত তাড়াতাড়ি এই সরকার বিদায় নিবে দেশের জন্য ততই মঙ্গল।

হাইড/টেমসাইড:
আওয়ামী লীগের আহবায়ক হাজী মোঃ আজাদ মিয়া বলেন, বিরোধীদল নিজেরা কাল্পনিক ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে। সংসদে না গিয়ে তারা রাস্তায় গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মেরে গণতন্ত্রের কথা বলে। প্রবাসীরা মনেকরে বিরোধীদল সংসদে গিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে চলমান সমস্যার সমাধান করবে।

বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল আহমদ বাবুল তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বর্তমানে দেশে আইনশৃংখলার যে অবনতি ঘটেছে গত ৪০ বছরের মধ্যে এমনটা আর হয় নাই। অতীতের স্বৈরাচারী সরকারকেও বর্তমান সরকার হার মানিয়েছে। বিরোধীদলের ৩৩ জন কেন্দ্রিয় নেতাকে একসাথে জেলে পাঠানোর ঘটনা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।

বাংলাদেশকে যখন একটি অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে দুনিয়াজুড়ে বলাবলি হচ্ছে, সকল প্রতিকুলতাকে দুরে ঠেলে দেশের অর্থনীতি যখন উর্ধ্বমূখী, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যখন সাফল্যের ধারাবাহিকতা এবং কৃষিতে আবারো বাংলাদেশের কৃষকরা রেখেছে তাদের দক্ষতার প্রমাণ-দেশ এগিয়ে যাচ্ছে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতার দিকে, এমনকি বিলেত প্রবাসী অনেক বাংলাদেশিই যখন পরিকল্পনা করছে দেশে গিয়ে বিনিয়োগ করার এমনই একটি পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন হয়ে উঠেছে আবারো উত্তপ্ত।

বিলেতে বসবাস করেও যাদের মন পড়ে থাকে মাতৃভুমি বাংলাদেশে তারা মনে করেন সরকারি দল এবং বিরোধীদল কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি বাদ দিয়ে একসাথে বসে আলাপ আলোচনার রাজনৈতিক সংকট নিরসন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১২
নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর
[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।