ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

সব সাংবাদিক পরিবারেই এক ভীতি!

আবদুল হামিদ মাহবুব, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১২
সব সাংবাদিক পরিবারেই এক ভীতি!

রাত সাড়ে নয়টায় প্রেসক্লাব থেকে আমাকে ফোন করে আমাদের সভাপতি এম এ সালাম বললেন সেখানে  যেতে। আমার শরীরটা ভালো নয় বলে না যাবার জন্য অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা করলাম।

কিন্তু কি একটা জরুরি বিষয়ে আমার মতামত ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না বললেন। আমার মতামতের জন্য প্রেসক্লাবের অন্য সদস্যরা বসে আছেন বলায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও রওয়ানা দিলাম।

প্রেসক্লাবে যাবার জন্য তাড়াহুড়া করে যখন কাপড় পরছি তখন আমার ছেলে জিজ্ঞেস করলো: বাবা কোথায় যাবে? তার প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়েই আমি কাপড় পরা শেষ করলাম। যখন ঘর থেকে বের হচ্ছি পিছন থেকে আবার আমার ছেলেটি বললো; ‘তুমি তো বলার প্রয়োজন মনে করছো না। কিন্তু তুমি যতক্ষণ বাইরে থাকো আমরা তো বাসায় টেনশনে থাকি। ’ তার মাও (আমার স্ত্রী) আরো কি কি বললো দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ায় সব শুনতে পেলাম না।

প্রেসক্লাবে যাবার পথে ছেলের কথাগুলো বার বার কানে বাজছিলো। সেখানে গিয়ে জানলাম তথ্য সচিব আমাদের প্রেসক্লাবে আসার প্রোগ্রাম দিয়েছেন। কি ভাবে কি করা হবে সে বিষয়ে আমার মতামতের জন্য ডাকা হয়েছে।

সভাপতি সালাম ভাই আমার বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত দিয়ে চলে গেলেন। আমি অন্যদের সাথে আড্ডায় মজে গেলাম। আড্ডা শেষে বাসায় ফিরলাম রাত তখন সাড়ে এগারাটা বাজে। আমার ছেলেটিই আমাকে গেট খুলে দিলো। কিন্তু সে আমার সাথে কোনো কথা বললো না। তার আচরণে বুঝলাম, সে আমার উপর রেগে আছে, নয়তো বিরক্ত হয়ে আছে। আমি আমার ছেলেকে জানি, এ রকম কোনো অবস্থা হলে সে সারারাত ঘুমাবে না। বিছানায় পড়ে থেকে ছটফট করবে। আমার জন্য টেবিলে রাখা খাবার খেয়ে ছেলের বিছানায় গেলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। ছেলে আমার ছটফট করছে। মাথায় হাত দিয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছে? আমার হাত সরিয়ে দিয়ে পাশ ফিরে শুলো। আবারও তাকে টেনে সোজা করে বললাম, ``তুমি বিছানায় ছটফট করলে আমারও ঘুম হয় না। কি হয়েছে আমাকে বলো। ``

ছেলে আমার উত্তেজিত স্বরে বললো; ``তুমিতো আমাদের কোনো কথারই পাত্তা দেও না। তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম কই যাচ্ছো; কিছুই না বলে চলে গেলে, এখন আর জিজ্ঞেস করছো কেনো। `` আমি বললাম, ``বাবা আমি প্রেসক্লাবে গিয়েছিলাম। এভাবে তো আমি সব সময়ই যাই। তুমিতো দেখেছো সংবাদের খোঁজ পেলে রাত দেড়টা দুইটায়ও বের হয়ে গেছি। `` ছেলেটি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। বললো: `` বাবা তোমাকে বললেও তুমি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেবে না। অন্ততঃ সাবধানে থেকো, আর কখন কোথায় যাও আমাদের একটু বলে যেও। কাজের সময়তো তুমি মোবাইল ফোনও ধর না। আমরা অন্যদের কাছ থেকে যাতে তোমার খবরটা নিতে পারি তার জন্য জানিয়ে যেও। ``

আমি দেখলাম কষ্টে তার ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে। তাকে হালকা করার জন্য তার মশারির ভেতর বসে আমি অনেকক্ষণ গল্প করলাম। তাকে কথা দিলাম এখন কোথায় কখন যাচ্ছি সব তাকে বলে যাবো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। আমার ছেলেটি ঘুমিয়ে গেলো।

স্ত্রীর পাশে এলাম এখানেও খটমট কথা শুনলাম। রাত অনেক হয়ে গেছে। আমিই মেজাজ দেখিয়ে বললাম, ``ঘুমাতে দাও তো!`` তিনি চুপ করলেন।

ওই রাতে আমার সারারাতই ঘুম হলো না। আমাকে নিয়ে স্ত্রী ও ছেলের এই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার বিষয়টি বার বার মাথায় ঘুরছিলো।

তাদের যে এই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার কারণ তো আমি জানি। বর্তমান সময়ে সাংবাদিক নির্যাতনের সংবাদ পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে দেখে তাদের ভিতরে আমাকে নিয়ে এই ভীতির সৃষ্টি হয়েছে।

আমিতো আমার পরিবারের কথা লিখলাম। আমি নিশ্চিত সারা দেশের সকল সাংবাদিকদের পরিবারই এখন একই ভীতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু কোনো ভীতিই কোনো কালেই সাংবাদিকদের দমাতে পারেনি। কলম কখনো স্তব্ধ হয়নি।

রাষ্ট্রের কর্ণধারদের বলছি: আমরা নির্যাতিত হবো, আমরা মরবো, কলম তবু বন্ধ হবে না।

লেখক: ছড়াকার ও সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময় ১০৩৫ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১২
সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ` জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।