ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

জাবির জবরদস্ত ‘নির্বাচন’ ও শিক্ষাস্বপ্নের ‘নির্বাসন’

ড. ফজলুল হক সৈকত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১২
জাবির জবরদস্ত ‘নির্বাচন’ ও শিক্ষাস্বপ্নের ‘নির্বাসন’

রূপকথার গল্পের মতো সব জল্পনা-কল্পনা, ভীতি ও রোমাঞ্চের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সম্পন্ন হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল প্রত্যাশিত ভিসি প্যানেল নির্বাচন। অবশ্য রূপকথায় পুলিশের অস্তিত্ব না থাকলেও এ নির্বাচনে তাদের সরবতা জাতি অবলোকন করার ‘সৌভাগ্য’ অর্জন করেছে।

এই না হলে গণতন্ত্র! আমাদের সোনার বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথ ও তার অবাধ (!) চর্চা ঠেকায় সাধ্য কার! কার মাথায় দুটো ঘাড় আছে যে একটা নিজের জন্য রেখে আর আরেকটাকে বলি হতে দিয়ে এই ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন’কে আটকাবে? বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রপরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে ‘নাবালক’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচনের ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাহস ও সাফল্য’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যদিও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার আগ্রহের খবর আপাতত আমাদের সামনে নেই। হাইস্কুলে নির্বাচন শেষ করে অতঃপর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্র চর্চায় বর্তমান ‘প্রগতিশীল’ সরকার বেশি সময় নেবেন না বলে ধরে নেওয়া যায়।

সংখ্যাগত দিক থেকে নির্বাচনে ভোট দানকারী ব্যক্তির (ভোটার) উপস্থিতি গ্রহণযোগ্যই বটে। খবরে প্রকাশ, ৯২ জন সদস্যের মধ্যে ৬৩ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আর কর্তৃপক্ষ প্রয়োগ করেছেন তাদের সমূহ ‘সামর্থ্য ও সদিচ্ছা’। কিন্তু উপস্থিত সদস্যদের ভোটাধিকার বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংকট নিরসনের দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বর্তমানে জাবির ভিসিও প্যানেলে নির্বাচিত হয়েছেন- এই খবরটিও চমকপ্রদ বটে! তিনি ‘তত্ত্বাবধায়ক ভিসি’র চেয়ারে বসার অল্প কয়দিন পরই যখন ভিসি প্যানেল নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন, তখন মনে হয়েছিল শিক্ষাভুবনে চলমান জটিলতা ও স্থবিরতা নিরসনে সরকার সঠিক লোককেই দায়িত্ব দিয়েছেন। তাঁর কাণ্ডজ্ঞানের প্রশংসায়ও আমরা কেউ কেউ পঞ্চমুখ হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু খানিকটা সময় গড়িয়ে যখন আমরা মূল কাহিনিতে প্রবেশ করতে থাকলাম, তখন দেখা গেল নাটকের বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত, কেবল বদল হয়েছে কুশীলব। বিরতিতে এককাপ চা-কফি পান করার মতো আমরাও সামান্য সময় পরেই আলস্য কাটিয়ে উঠলাম।

‘বেড়ায় ফসল খায়’ এ ধরনের গল্প গ্রামের দেশের লোকদের কাছে পরিচিত। ‘শিয়ালের কাছে মুরগী বরগা দেওয়া’র কাহিনিও আমরা ছোটবেলায় শুনেছি। ওইসব উপাখ্যান কখনো আমার কেন জানি না বিশ্বাস হতো না- তেমন কোনো ঘটনাক্রম চোখে দেখেনি বলে; জাবি ভিসি প্যানেল নির্বাচনে এবার ওসব গল্প-উপাখ্যানের বাস্তব প্রতিফলন দেখলাম। সহজভাবে বললে, বেশ ভালো লাগলো। সবচেয়ে মজার খবর হলো- যে ভিসি মাত্র মাস দুয়েক আগে গণ-আন্দোলনের মুখে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন, তিনিও এই নির্বাচনের প্রার্থী ছিলেন এবং সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিতও হয়েছেন। আর মেয়াদ-উত্তীর্ণ সদস্য দিয়ে ভোট-কার্যক্রম চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার একটা জবরদস্ত মহড়া অবশ্য দেখা গেল। কর্তৃপক্ষের ভাবগতিক বোধহয় এরকম যে, ভোটারের আবার মেয়াদ-উত্তীর্ণ কী? ভোটার কি ওষুধ কিংবা ফলের জুস না-কি যে গায়ে ও মোড়কে মেয়াদ লেখা থাকবে!  কাজেই কাজী সাহেবের গরু গোয়ালঘরেই থেকে যায় ‘চরম হেফাজতে’। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও শত শত শিক্ষককে জিম্মি করে, তাদের কিছু কিছু জিজ্ঞাসা ও আপত্তির ব্যাপারে ধোঁয়াশার মধ্যে নিপতিত রেখে, এই নির্বাচন সময়মতো (!) সম্পন্ন হলো বটে, কিন্তু জাতির ভাগ্যাকাশে যুক্ত হলো ‘স্বপ্ন নির্বাসনের’ নতুন ইশারা। আমাদের গর্বের ইতিহাসের অনেক অস্পষ্টতা ও গোঁজামিলের কাতারে যোগ হলো আরো একটি ‘অস্পষ্টতা’। আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি এমনতরো গণতান্ত্রিক পথে হয়, তো আমাদের কপালে যুক্ত আরেক ভাগ্যতিলক! সে দিকেই আমরা ধাবিত হচ্ছি কি-না কে জানে। অবশ্য আমাদের বর্তমান প্রসঙ্গ আগামী জাতীয় সংসদ কিংবা কোনো সাধারণ নির্বাচন নয়। একটি ‘অসাধারণ’ নির্বাচন সম্পন্ন হবার ঘটনা এবং জাতির শিক্ষা-বিষয়ক স্বপ্নের ‘কল্পিত নির্বাসন’ আমাদের আজকের অভিলক্ষ।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা কৌশলগত কারণে খানিকটা বিরতিতে গেলেও তারা পিছিয়ে পড়েছেন- এমনটা আমাদের মতো সাধারণ ও আমজনতার পক্ষে ভাবা কঠিন। আর এও জানা যে, ‘মরা’ পদ্মার ওপর সেতু তৈরির নানা কৌণিক রাজনীতির কলকব্জার চাপে এরই মধ্যে অস্থির হয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। পদ্মাসেতুর জন্য টাকা সংগহ অভিযানের ছাত্রলীগের সভায় রাবির ভিসি উপস্থিতির খবরও মিডিয়ার বদৌলতে জনগণের কাছে পৌঁছে গেছে। জীবনও দিতে হয়েছে সোহেল নামক এক প্রজাকে।

রাজা-রাজরাদের দীঘি খননে কিংবা মহাসড়ক ও বড় বড় ভবন-নির্মাণে অজানা কোনো দেব বা দেবতা না কি রক্ত চাইতো- এসব ঘটনা হয়তো অনেকের মনে থাকবে। সম্ভবত ‘স্বপ্নের পদ্মাসেতু’ তার প্রথম চাওয়া রক্ত পেল সোহেলের শরীর থেকে। আর সে হিসাবে এই সেতুর কাজ এবার এগোবে গড়গড় করে। পদ্মার কোলঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা রাবি পালন করেছে পদ্মা মায়ের দাবির দরদী আদেশ! ‘জয়তু পদ্মা, জয়তু রাবি’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য চলছে ছাত্র-আন্দোলন; গণতান্ত্রিক উপায়ে ভিসি প্যানেল নির্বাচনের জন্য খোদ সরকার সমর্থক শিক্ষক নেতা আদালতে মামলা ঠুকেছেন। প্রশাসক কাম ভিসিদের দৌরাত্ম্য ও অপকর্ম রোধকল্পে সোচ্চার হয়ে মাঠে নেমেছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। আত্মীয়করণ, উদার দলীয়করণ, অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে ভিসি-প্রোভিসিদের বিরুদ্ধে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি-ট্রেজারারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ ‘ঘুপসি’ নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে; এসব বিষয়ে গাজীপুরের সংসদ সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির সরকার সমর্থক বলে পরিচিত শিক্ষক-কর্মচারী নেতারা একাধিক মামলা পর্যন্ত করেছেন। শোনা যায়, মামলার বাদী ‘অবাধ্য’ চাকুরেদের পানিশমেন্ট পোস্টিং দিয়েছে কর্তৃপক্ষ; অবশ্য মাননীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ‘অ্যাকশনে’ যেতে পারেননি, সম্ভবত না-বলা কোনো ‘কৌশলগত’ কারণে।

সব মিলিয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এককথায় বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। এসব বিষয়ে কয়েকদিন ধরে জাতীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে খবর-সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় ও মতামত। টেলিভিশনে চলছে সংবাদ প্রচার এবং আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রণালয় প্রকৃত ঘটনার দিকে নজর না দিয়ে বরং ‘কৌশলে’ নিজেদের লোকদের দিয়ে যে-কোনভাবে চালাতে চাইছেন এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বোধ করি সরকারের মধ্যে এই ভয় আছে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্র ও নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন চলতে দিলে তৈরি হবে নতুন নতুন নেতৃত্ব এবং ফলত বেগবান হতে পারে বিরোধী রাজনৈতিক জোটের আন্দোলনের ধারা ও গতি। তাহলে তো বলা যায় এক হিসাবে ঠিকই আছে; কারণ কে চায় নিজের উদ্যোগে বিপদ ডেকে ঘরে আনতে? কিন্তু ভাবুন তো, যদি রাজনীতির কথাই ধরা যায়- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্রের চর্চা হলে সরকার সমর্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কি উপকৃত হবেন না? আর তাতে কি সরকারের ক্ষতি? আর সবচেয়ে বড় কথা- সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সর্বোচ্চ অভিভাবক। এসব প্রতিষ্ঠানের ভালোমন্দ দেখভাল করার দায়িত্বও সরকারের।

আমরা কি ভেবে নেব- রূপকথার সাতসমুদ্র ও তেরো নদী পারি দিয়ে যেমন রাজকুমার পেতে চায় তার স্বপ্নেদেখা রাজকন্যাকে, তেমনি শিক্ষামন্ত্রণালয় এবং সরকার যাবতীয় আন্দোলন-অভিযোগ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যেতে চাইছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত ভুবনে? ধীরে ধীরে, পোড় খেয়ে খেয়ে, (এমসি কলেজের আগুনে পোড়াও এর সাথে যুক্ত হতে পারে) আমরা বুঝতে শিখছি- প্রাথমিক সমাপনী, অষ্টম শ্রেণির সমাপনী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ‘সোনালী’ এ-প্লাসের আনন্দ-গড়িয়ে চাপিয়ে জাতিকে শিক্ষার বিরাট ক্যানভাস উপহার দেবার যে কাহিনি ও সংলাপ তৈরি হয়েছে, মন্ত্রী (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা) আগামি চারছরের মধ্যে জাতিকে ১০০ শতাংশ শিক্ষিত করার যে স্বপ্নের বীজ ও বীজতলার দুর্লভ মাটি আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন, তার অন্তরালে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। লাখ লাখ মানুষকে আধাশিক্ষিত এবং ফলত পঙ্গু হিসেবে দাঁড় করিয়ে জাতির মেরুদণ্ডকে যে সোজা করা যাবে না- সে কথা যেকোনো সচেতন নাগরিকের পক্ষেই অনুধাবন করা আর যাই হোক তেমন কোনো কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে না।

আমরা আদার ব্যাপারী। সে আদা আবার একেবারে দেশি। বিদেশি আদার কারবার আমাদের ধাতে সয় না। কাজেই জাহাজের খবর নিয়ে আমাদের কোনো কাজ নেই। সমুদ্রের অতল ও বিশালতার সাথেও তাই স্বাভাবিক কারণেই আমাদের কোনো পরিচয় নেই। সত্যি কথা বলতে কি এতো সময়ও আমাদের হাতে নেই; আবার ওরকম ব্যাপারাদি নিয়ে ভাববার সাহস ও সামর্থ্য থেকে আমাদের অবস্থান অনেকটা দূরে। তবে, কোনো জটিলতায় না গিয়ে কেবল সরল বিশ্বাসে বলতে পারি- আর কোনো রাজকুমারের রাজ্য ও রাজ্যকন্যা জয়ের গল্প আমরা শুনতে চাই না। আমরা চাই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাডেমিক প্রশাসক নির্বাচনে প্রত্যাশিত ও নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হোক। আমাদের প্রত্যাশা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের পথ পরিহার করে পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোনিবেশ করবেন। আমাদের আশা, দেশের শত শত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর ঘাড় থেকে নেমে পড়ুক সেশনজট নামক ভূতের যাবতীয় ডিম ও বাচ্চা। ক্যাম্পাসে বিচরণরত সব ‘শকুন’ ও তাদের মাথার ‘উকুন’ থেকে জাতিকে মুক্তি দেবার জন্য যোগ্য কাণ্ডারির আজ বড় প্রয়োজন। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোপিত স্বপ্নের বীজগুলো যেন নির্বাসনে না যায়, সে দিকে নজর দেওয়ার বোধহয় সময় হয়েছে এখন। জাবির ভিসি প্যানেলের নির্বাচনের ফলাফল শেষপর্যন্ত কতোটা ফলপ্রসূ হবে জানি না। কেবল কামনা- বাংলাদেশের কোটি জনতার শিক্ষালাভের সাধ ও স্বপ্ন যেন ‘নির্বাসনে’ না যায়!

লেখক: সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।