ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

“দৈনিক হুমকি, সাপ্তাহিক চাঁদাবাজি ও মাসিক স্টেজে আরোহন” (শেষ কিস্তি)

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১২
“দৈনিক হুমকি, সাপ্তাহিক চাঁদাবাজি ও মাসিক স্টেজে আরোহন” (শেষ কিস্তি)

দু’একটা উজ্জ্বল ও সৎ ব্যতিক্রম ভিন্ন প্রবাসের সাংবাদিকতা মানেই নিত্যদিন বিভিন্ন সংগঠনকে হুমকি প্রদান আর সপ্তাহান্তে চাঁদা আদায়। বিভিন্ন অজুহাতে ’অফেরৎ যোগ্য’ ধার গ্রহন, বিনে পয়সায় ’দারু পান’ আর নিজের ও পরিবারের ’অপ্রকাশিত’ সব প্রতিভার উন্মেষ ঘটানো।


 
মেলবোর্ণ থেকে প্রকাশিত হয় ত্রৈমাসিক ’অন্যদেশ’। শুভ্র, ধ্রুব আর অঞ্জু ভাবী নিজেদের বেত নের টাকা খর্চ্চা করে প্রকাশ নাটা অব্যাহত রেখেছে। এই তিনজন এতোটায় লো প্রোফাইল তাদের মেলবোর্ণের ’বিশিষ্টজন ও বুদ্ধিজীবীরা’ চেনেনই না। টরেন্টো থেকে শহীদুল ইসলাম মিন্টুর সম্পাদনায় প্রকাশিত ’দ্য বেংগলী টাইমস কিংবা আমেরিকা থেকে মাহফুজুর রহমানের ’বর্ণমালা’ সম্পর্কে কোথাও কোনো উচ্চবাচ্য শোনা যায় নি। কিন্তু বাদ বাকীর বেশীর ভাগের শরীরে দূর্গন্ধ!
 
হাতে-কলমের অভিজ্ঞতায় অষ্ট্রেলিয়াকে উদাহরণ হিসেবে টানা  বাস্তব সম্মত হবে।

হাতে কলমের অভিজ্ঞতায় সিডনীকে বিবেচনায় নিলে প্রবাসের অন্য শহরের প্রিন্ট ও ওয়েব পত্রিকা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব। সিডনীর পত্রিকাগুলোর সম্পাদকের পরষ্পরের ’সতীন’ । একে অন্যের চরিত্র হননে তারা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের চেয়েও বাড়া। কিছুদিন গালাগালি আর, ’তুই রাজাকার’ ধরনের গালিগালাজ চলে। পরে ’চাঁদাবাজি’ ও ’সামাজিক-রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রনের’ বৃহৎ স্বার্থে হ্যাপি এ্যন্ডিং হয়। কাকতলীয়ভাবে সব সম্পাদকই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিন্তু কোনো ব্যাচ মেটের নাম স্মরণে আনতে ব্যর্থ হন। ’নির্বোধ’ পাবলিকেরতো স্মরণে নেই ১৯৮৫-৯০ সালে ফরিদপুরের কলেজগুলোও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিলো। সেখান থেকে পাশ মানেইতো কাগজে কলমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ দেয়া! অগ্রজ কবি ও একটি জাতীয় দৈনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন বন্ধু জানালেন, তাদের এলাকার ধর্ষনের মামলার পলাতক আসামী সূর্য ডাকাত এখন সিডনীর এক কাগজের সম্পাদক। ডাকাত ও সম্পাদক? এইসবই বোধকরি প্রবাসী বাংলাদেশী মহলে সম্ভব?
 
এইসব প্রবাসী সম্পাদক ও সাংবাদিকদের মূল আয়ের সূত্রটা কি? কী কী সুবিধাপ্রাপ্ত হন একজন প্রবাসী সম্পাদক?  আয়ের সূত্রটা বড্ড ইন্টারেষ্টিং। বিভিন্ন ব্রাকেট সংগঠনের বিপক্ষে বিভিন্ন নেতিবাচক, মিথ্যে ও এক পেশে সংবাদ প্রচারণা সেইসব ওয়ানম্যান নেতাদের ’সামাজিক মর্যাদায়’ হেঁচকা টান লাগায়। কিংবা লিখবো হুমকিটাই দেখা দেয় নিখাদ আতংক হয়ে। বিপক্ষের কাছে লজ্জ্বায় মাথা কাটা যায়  যায় দশা। দৈনিক এইসব হুমকির অত্যাচারের বদলে সপ্তাহে কিছু নগদ গুনে দেয়াটা কেবল লাভজনকই নয়, স্বস্তিকর। কারণ ’ব্ল্যাক মেইলে’ অভ্যস্ত পত্রিকাগুলো পরষ্পরের বিরুদ্ধে পাতানো খেলায় শিকার গাঁথেন। একবার কোথাও কোনো সংবাদ ছাপা হলে কোথাও প্রতিবাদ ছাপা হবেনা। শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণে অক্ষম, কথাবার্তায় সামান্য সৌজন্যতাবোধ হীনেরা মাসোহারার ভিত্তিতে বিভিন্ন সংগঠনের বিশাল ’নাম সর্বস্ব’ নেতা। নিয়মিত ছবি ছাপা হয় ওনাদের। ক্রমাগত ও অব্যাহত ছবি আর বিবৃতি ছাপার গুনে একজনতো একটি বৃহৎ রাজনীতি দলের অংগ সংগঠনের আন্তর্জাতিক নেতা বনে গেছেন। জনা দশেক লোকের ভীড়ে এই ’ মহীয়সী’ নেতাকে খুঁজে নিতে বাড়তি চোখ লাগবে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েলেও ’হাদিয়ায়’ কাজ চলে। ছোট খাটো স ংগঠনের নেতাদের কথা বাদই দিলাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারী যেভাবে ওয়েব পত্রিকাগুলোকে মাসোহারার ভিত্তিতে তোয়াজে নামে, তাতে মালুম হয়, ’ডাল মে কুছ কালা হ্যায়‘।
 
প্রশ্নটা হচ্ছে, কেবল কী আর্থিক লাভের জন্যেই প্রবাসে সাংবাদিকতা? বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাটাইতো আসল। দেশ থেকে আসা বিভিন্ন নেতা- মন্ত্রীদের সাথে এক মঞ্চে বক্ততা, ড্রইংরূমে ফ্রেমে বাঁধানো এক্সক্লুসিভ ফটো সেশনের ছবি সাধারণ পাবলিকের মধ্যে জাগায় বিনম্র শ্রদ্ধা। পরের নেতা- মন্ত্রীরা কোনো রিক্সে না-গিয়ে আগের ধারায় চলেন। সম্পাদক ও সাংবাদিক ভাইয়েরা এই সুবাদে নিত্য টাকা ধার নেন। ফেরত না দেবার কারণে বৈশাখী কিংবা অন্যান্য মেলায় ক্ষ্যাপা পাবলিক কলার ধরলেও আয়োজক মহা চোরেরা নিজেদের চুরি জায়েজীকরণে সম্পাদক-সাংবাদিক ভাইদের বাঁচিয়ে দেন। বিখ্যাত লেখক অজয় দাশগুপ্ত,ফজলুল বারী ও আবুল হাসনাত মিল্টন সহ অনেকেই আরো নিঁখুত বর্ণনা দিতে পারবেন। বিটিভি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নামে কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে কিছু সাংবাদিক অন্যের ব উ-মেয়েদের নিয়ে আউটিংয়ে যান।
 
দেশ থেকে শিল্পী আনার নামে আদম পাচার সম্পাদক ভাইদের ’পেশার অংগ’। উঠতি মুখেরা প্রবাসের জীবন-যাপন স ম্পর্কে কিছূ বুঝে ওঠার আগেই ’বেচা-বিক্রি’র কাজ শেষ। সংগীত পরিচালক আর Œঠতি শিল্পীদের বাধ্য করা হয় সম্পাদক কিংবা সম্পাদকের স্ত্রী-কণ্যার গানে কণ্ঠ ও সুর প্রদান। শিল্পীদের সাথে ছবি তুলতে লাগবে কুড়ি থেকে তিরিশ ডলার ফি। টিভি ষ্টারদের ক্ষেত্রে রেটটা প্রায় পঞ্চাশ। দশ ডলার মূল্যের অনুষ্ঠানের টিকেট কমিউনিটির স্ব ঘোষিত নেতারা কুড়ি-পঁচিশ ডলারে ভাগাভগিতে চারশোর মতো টিকেট কিনে আয়োজক-সম্পাদকদের সন্তুষ্ট রাখেন একদিকে। অন্যদিকে কমিউনিটির মানুষেরা বিনামূল্যে টিকেট পাবার বাড়তি আনন্দে স্ব ঘোষিত নেতাদের
কিছুক্ষণের জন্যে সহ্যে আপত্তি করেন না। বউ-বাচ্চা নিয়ে সম্পাদক-সাংবাদিকেরা গড়ে প্রতি মাসে একবার স্টেজে আরোহ ন করেন অন্যের পয়সায়। প্রবাসী সাংবাদিকতার এমনই গুন ! ধমকিয়ে আদায় করা চাঁদায় টিভি ষ্টারদের কানেকশনে নিজেদের নাটকও নির্মান হয়। প্রকাশ হয় গানের অডিও-ভিডিও এ্যলবাম। তবে এক অনুষ্ঠানের পাঁচজন শিল্পীর প্লেনের টিকেটের টাকা তোলা হয় কমপক্ষে নয় দশবার। দৈনিক হুমকি আর সাপ্তাহিক চাঁদাবাজি এবং মাসিক স্টেজে আরোহনে এক এক প্রবাসী সম্পাদকের বছরে প্রায় একটা করে বাড়ী হয় হয় অবস্হা।
 
সূর্য ডাকাত পরিচয় মুছে গিয়ে, ধর্ষ ন মামলা উবে গিয়ে এখন কিছু মানুষ প্রবাসের নাম করা সাংবাদিক। কেচ্ছা আরো আছে। সেটা আরেকদিন।
 
ইমেলঃ [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।