ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বসন্তের ইশতেহারে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি

প্রতীক বর্ধন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৩
বসন্তের ইশতেহারে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি

ঢাকা: শাহবাগ থেকে স্লোগান ভেসে আসছে, ‘জয় বাংলা’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ’৭১-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’।

রক্তে প্রলয় শুরু হয় যায়।

১৯৭১-এর বসন্তে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কৃষক-শ্রমিক-জনতা, সেই আকাঙ্ক্ষাকে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন এ যুগের তরুণরা। মাঝখানে ৪২ বছর পার হয়ে গেলেও সেই বসন্তের আঁচে আজ শাহবাগে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।

এরই মধ্যে তারা জয় বাংলা স্লোগানটি আওয়ামী লীগের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করেছে। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধও আওয়ামী লীগের মালিকানা থেকে মুক্ত হয়ে তার প্রকৃত মালিক অর্থাৎ জনগণের কাছে ফেরত যাবে, আমি নিশ্চিত।

ধর্ম, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সংবিধান:
শাহবাগের তরুণরা ’৭১-এর চেতনায় ফেরত যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা। ১৯৭২-এর সংবিধানের অন্যতম মূল নীতি ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা। তার সঙ্গে ছিল জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র, যা জনগণ আর মুক্তিযুদ্ধের দাবিকে একপ্রকার ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মানেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। সে কারণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে আলাদা করে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলার দরকার নেই।

তবে আমাদের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা মোটেও ইংরেজি ‘সেক্যুলারিজম’-এর অনুবাদ নয়।

‘সেক্যুলারিজম’-এর বাংলা করা যায় ‘ধর্ম বিযুক্তততা’। অর্থাৎ যে রাষ্ট্রের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিষয়াদিতে ধর্মের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ একই রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। সেদিক থেকে বিচার করলে আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে যে ‘সেক্যুলারিজম’-এর কথা বলা হয়েছিল তার অর্থ হচ্ছে, সবাই নিজের ধর্ম পালন করবে, যা একটি ব্যক্তিগত বিষয়।

অর্থাৎ ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। এটা কোনো ধর্মবিযুক্ত রাষ্ট্র নয়। একটি বুর্জোয়া বিপ্লবে স্বাভাবিকভাবে এর বেশি কিছু আশা করাও যায় না। এ কারণে আমাদের দেশে ব্যক্তিগত বিষয়াদি যেমন- বিয়ে, উত্তরাধিকার প্রভৃতি ধর্মীয় আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।

এদিকে সংবিধান থেকে পরবর্তীকালে জিয়া ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’-কে তুলে দেন। আর এরশাদ রাষ্ট্রধর্মের বিধান সৃষ্টি করে ‘ইসলাম’-কে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা দিয়ে সংবিধান সংশোধন করেন।

একটি দেশে একটি বিশেষ ধর্মকে যখন রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে অন্য ধর্মের মানুষেরা অপর-এ পরিণত হয়। যা কোনভাবেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র- লক্ষণ হতে পারে না। ফলে আমরা এক মারাত্মক স্ববিরোধিতার খপ্পরে পড়েছি। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয়াদিতে ধর্মীয় আইন জনগণের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে। ফলে আমরা যদি নিজেদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করি, তাহলে অবিলম্বে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রধর্মের বিধান বাতিল ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনঃপ্রিতিষ্ঠত করতে হবে।            

জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি:
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বহু বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে এদেশের মানুষ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জন করে। তার জন্য ত্যাগও কম করতে হয়নি। আকাঙ্ক্ষা ছিল, বৈষম্যহীন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করা, যেখানে সব মানুষ সমঅধিকারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপরিচালনায় অংশগ্রহণ করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সে আশা আমাদের পূরণ হয়নি, বলাই বাহুল্য। কারণ, যাদের হাতে নেতৃত্ব গেছে তারা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন।

তো, জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনকিভাবে আমাদের এই বহু আকাঙ্ক্ষা রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতা করেছে। তারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সহেযাগীর ভূমিকায় নেমেছিল, কোথাও কোথাও নিজেরাও মূল হন্তারক হিসেবেও কাজ করেছে। ঘৃণ্যতম যুদ্ধাপরাধ করেছে তারা।

স্বাভাবিকভাবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীকালে, জিয়া ও এরশাদের সামরিক সরকার জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে।

পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগও তাকে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে, এখনও করছে। এখন কথা হচ্ছে, যারা এই রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতা করেছে তারা কিসের ভিত্তিতে এদেশে রাজনীতি করে। আর জামায়াত এখন পর্যন্ত ১৯৭১ সালে তাদের ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।
 
স্বাভাবিকভাবে, জামায়াতের গঠনতন্ত্রও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া যাক। জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রে এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে:

‘বাংলাদেশে তথা সারা বিশ্বে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা মানবজাতির কল্যাণসাধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল প্রদর্শিত দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য অর্জন করাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য|’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশর সংবিধান কখনই বলে না তা দ্বীন কায়েম করবে। একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত বিধান বাস্তবায়ন করলে তা ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে। সংবিধান অনুযায়ী আমাদের দেশ ’গণতান্ত্রিক’, এরূপ রাষ্ট্র কখনই তা করতে পারে না। উপরন্তু, আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, রাষ্ট্র ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গের ভিত্তিতে কখনও বিভাজন সৃষ্টি করবে না। আর জামায়াতের গঠনতন্ত্র বিষয়ক ইসির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে:

“জামায়াতে ইসলামীর সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ২ ধারার ৫ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যতিত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, ... কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না...’

ইসির গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা কমিটির মতে, এ ধারার মাধ্যমে জনগণের রায়ে নির্বাচিত সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের ৫ ধারার ৩ উপধারায় জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘... বাংলাদেশে ইসলামের সুবিচারপূর্ণ শাসন কায়েম করিয়া সমাজ হইতে সকল প্রকার জুলুম, শোষণ, দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটানোর আহ্বান। ’ কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশ গণতান্ত্রিক রীতিতে পরিচালিত হবে; এখানে ইসলামের ‘সুবিচারপূর্ণ শাসনব্যবস্থা’ কায়েমের কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করে ইসি কমিটি।

নির্বাচন কমিশনের মতে, জামায়াতের গঠনতন্ত্রে অন্তত সাতটি ধারা রয়েছে যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তে বলা হয়েছে, দলীয় গঠনতন্ত্রের উদ্দেশ্যসমূহ সংবিধানের পরিপন্থী হতে পারবে না। এছাড়া ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য থাকতে পারবে না। অর্থাৎ আমাদের সংবিধান অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বিধানের ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার কথা বলে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের আইন দ্বারা যদি একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাহলে আন্য ধর্মের অনুসারীদের ক্ষেত্রে কী হবে? এ প্রশ্নকে কী করে এড়ানো সম্ভব!

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের যে স্লোগান, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই নীতির সঙ্গেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সাংঘর্ষিক। আর ধর্মবিযুক্ত রাষ্ট্রর কথা না হয় বাদই দিলাম। যদিও কোনো ধর্মেরই সে রকম পূর্ণাঙ্গ কোনো বিধান নেই। তা আদতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে সংহত করার লক্ষ্যে জনগণের জন্যে প্রণীত একরকম আফিম-দাওয়াই।

কিন্তু ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে কী হয় তা আমরা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে দেখেছি। দেশকে পুনঃঔপনিবেশিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে তাই আলাদা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।

শাহবাগ আন্দোলন
অতীতে বিভিন্ন সময় গণবিক্ষোভের যে স্ফূলিঙ্গ আমরা দেখেছি, তা আজ দাবানল হয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইঞ্চিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা কোনো হঠাৎ সৃষ্ট ব্যাপার নয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় গর্ব। তো সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের এই পরম আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতা ও যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের বিচার  হবে তা দীর্ঘদিনের গণদাবি।

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তা এই বিচারের পক্ষে তীব্র জনমত সৃষ্টি করে। এবার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর মানুষ একটু আশান্বিত হয়েছিল।

বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর তা আরও সংহত হয়েছিল। কিন্তু কুখ্যাত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার পর মানুষের ধৈয্যের বাধ ভেঙে যায়। রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মানুষের হৃদয়ভঙ্গের তীব্র আর্তনাদ দেখেছি। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে শাহবাগে জমায়েতের খবর ছড়িয়ে পড়ে- তারপর ইতিহাস।

১০ম দিনের মতো এই আন্দোলন চলছে। নাওয়া-খাওয়া রেখে স্লোগান দিয়ে চলছে লাকি-বেনজীর-সুমনা-সামিয়াসহ আরও অনেক অগ্নিকন্যা। এই আন্দোলন কোথায় গিয়ে থামবে তা বলা মুশকিল। সরকার এরই মধ্যে নড়েচড়ে বসেছে। কাদের মোল্লার সাজা বৃদ্ধির আবেদন করার জন্য আইন সংশোধন করা হচ্ছে। পরবর্তী যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হলে হয়তো আপাতত তা থামবে।

জাহানার ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যে বেঈমানী করেছিল তার স্মৃতি এখনও আমাদের হৃদয়ে দগদগে ক্ষতস্থানের মতো হয়ে আছে। জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আঁতাতের কথা কিন্তু বাতাসে ভাসছে। আন্দোলনের প্র্রেক্ষিতে তা হয়তো কিছুটা পরিবর্তিত হবে। কিন্তু মৌলিক কিছু হবে না তা বোঝাই যায়। তাই সাবধান থাকতে হবে।

শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে আবেগ অনুভূতির প্রকাশ অনেক হলো। এখন কথা হচ্ছে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। ফলে তারা যে সব ক্ষমতার উৎস এই বোধটি আবার নতুন করে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র গণবিরোধী রাজনীতির কবর রচনা করতে পারে এই জাগরণ।

এখন এই পুরোনো চেতনার নব-ঊন্মেষকে একটি দীর্ঘস্থায়ী রূপ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে নিজে থেকে সব অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে হলে, সবার জন্য একই ধারার শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। নিজেদের জ্ঞানতত্ত্ব গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে ঔপনিবেশিকতা।

সমাজে আর্থিক বৈষম্য দূর করতে হবে। রোধ করতে হবে দুর্নীতি। সর্বোপরি, জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আগামীতে এসব দাবিতেও আন্দোলন করতে হবে। নেতা এই আন্দোলন থেকেই তৈরি হবে। বামপন্থীরা দয়া করে ছিনতাই করার মানসিকতা পরিহার করবেন আশা করি। শত ফুল ফুটতে দিন। আপনারা যদি জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনারাই একদিন এর নেতা হবেন। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রত্যাবর্তন করতে চায়। এই আন্দোলনকারীরা পরবর্তীকালে যদি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মাঠে নামেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন, ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার বিরুদ্ধে মাঠ নামেন- তখন সরকার বাহাদুর কী করবেন?

এরই মধ্যে, ’৭১ ও জয় বাংলা স্লোগান রাজাকারী ও আওয়ামী দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হয়েছে। এখন সামনে কঠিন সময়।

আওয়ামী-মুনতাসীর মার্কা ইতিহাস ঝেড়ে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস লিখতে হবে। প্রস্তুত থাকুন, তা নইলে এই গণজাগরণ ভেস্তে যাবে।

দুনিয়াব্যাপী নিপীড়নের বিরুদ্ধে যে গণআন্দোলন সৃষ্টি হচ্ছে তার প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করছি। শাহবাগ আন্দোলন সারা দুনিয়ার নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে আমাদের প্রাণের যোগ ঘটাবে।

Protik-Bardhan


প্রতীক বর্ধন: প্রাবন্ধিক
[email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।