ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রেক্ষিত জামায়াত শিবির ও কতিপয় ব্লগার

সাকিব হাসান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৩
প্রেক্ষিত জামায়াত শিবির ও কতিপয় ব্লগার

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। ৮৩% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে, মুসলমানদের ধর্মানুভুতিকে পুজি করে, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে জামায়াত শিবির দেশটাকে এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সকল ধরনের হিংসা, বিদ্বেষ , ধংসাত্বক কর্মকাণ্ডকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তথাকথিত ধর্ম রক্ষার নামে দেশে বিশৃংখলা, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপপ্রয়াস কখনো কোন সুশীল সমাজ মেনে নিতে পারবে না। ইসলামের নামে তারা, পবিত্র মসজিদে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করছে, মসজিদের টাইলস ভাংছে, বোমাবাজি করছে, প্রানের শহীদ মিনারে হামলা চালাচ্ছে, জাতীয় পতাকা পোড়াচ্ছে, ছিড়ছে, স্বাধীন বাংলাদেশে তারা পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিচ্ছে, পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে মিছিল দিচ্ছে, । তথাকথিত ইসলাম রক্ষার নামে তারা যে দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা দেখে সাধারন মানুষের বিবেক আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এদের উদ্দেশ্য কি তাহলে ইসলাম রক্ষা নাকি ইসলামকে পুজি করে যুদ্ধ অপরাধী রাজাকারদের রক্ষা করা? যে রাজাকারদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বাঙ্গালি হারিয়েছে তাদের সুর্য সন্তানদের, সম্ভ্রব হারিয়েছে লাখ লাখ মা বোন। ইসলামে আছে, “যে ব্যাক্তি অন্যায়ভাবে কোন ব্যাক্তিকে হত্যা করলো, সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করলো” । এই সব পাপীদের পক্ষে হরতাল দিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। হরতাল হোক জাতীয় ইস্যুতে যেমন হলমার্ক, ডেসটি্নি, পদ্মাসেতু ইত্যাদি ইস্যুতে। কিন্তু যুদ্ধ অপরাধীদের বাচাতে কেন হরতাল? যুদ্ধ অপরাধী ইস্যুতে কোন “কিন্তু” চলবে না। তাহলে, ইসলামের নাম দিয়ে রাজনীতি করে এরা ইসলামের কোন দিকটি মেনে চলছে?

এবার আসি ব্লগার প্রসংগে, এটা সত্যি বাংলাদেশের ৫০% মানুষ এখনো জানেনা ব্লগ কাকে বলে, কি জিনিস। কিন্তু এই ধরনের মানুষকে প্রধানত টার্গেট করে তাদের মধ্যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, “ব্লগাররা নবীজিকে গালি দেয়”। সম্প্রতি, ১৮ জন ব্লগারকে হত্যার অনুরোধ করে এবং হুমকি দিয়ে ফেসবুকে যে পোস্ট করা হয়েছে সেই তালিকার মধ্যে দুই জন ছাড়া কেউই কখনো ইসলাম বিরোধী কিছু লিখেননি, বাকি ১৬ জনের কোন প্রমান শিবির দেখাতে পারবে না কিন্তু তারা সামাজিক মিডিয়া এবং স্বাধীনতা বিরোধী কতিপয় দালাল পত্রিকাতে ক্রমাগত নির্লজ্জ মিথ্যাচার চালাচ্ছে। আর তারা যে ইসলাম বিরোধী পোস্ট করেছে সে গুলো ২০১২ সালের দিকে করা। ইসলামকে নিয়ে কটুক্তির শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে, এটা জঘন্যতম অন্যায় কারন আমাদের নবীজি, অন্য ধর্মের দেবতাকে পর্যন্ত গালি দিতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু শিবিরদের প্রতি প্রশ্ন হলো, এই ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন টি ২০১২ সালে কেন হলো না? তখন কোথায় ছিল এরা। আজ যখন রাজকারদের বিচার হচ্ছে, তরুণ প্রজন্ম এক হয়েছে, দেশপ্রেম জাগ্রত হয়েছে তখন কেন এই তথাকথিত ধর্মান্ধতা? কেন ধর্মের দোহাই দিয়ে শান্তি প্রিয় মুসলিমদের বিভক্ত করা হচ্ছে, আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, প্রান দিতে হচ্ছে নিরীহ মানুষকে?

যারা প্রকৃত মুসলিম, যারা কোরআনে বিশ্বাস করেন, বিশ্বাস করেন ইসলামকে তাদেরকে বলছি, ব্লগার মানেই নাস্তিক না, প্রকৃত সত্য না জেনে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য পাপ। কতিপয় লাইনচ্যুত ব্লগারদের জন্য সমগ্র ব্লগারদের ঘৃনার চোখে দেখবেন না। ব্লগারদের ঘৃন্য করে তোলার জন্য তারা বিভিন্ন ভুয়া আইডি খুলে সেখানে ধর্ম অবমাননা কারী লেখা লেখছে শাহবাগের তরুণ নেতাদের নাম দিয়ে। এদের মিথ্যাচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না।

আমরাও মুসলিম, ইসলাম কোন দলের নিজস্ব সম্পত্তি না। এটা আল্লাহর দান। তাই প্রকৃত ইসলামকে ভালোবাসুন, বিকৃত ইসলামকে না। আর ইসলামকে যারা নিজেদের সার্থে ব্যাবহার করছে, পবিত্র মসজিদকে রাজনৈতিক কাজে ব্যাবহার করছে, এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। সরকারের উচিত এই মিথ্যাচার ও হুমকিমুলক কাজে জড়িত পত্রিকা, ফেসবুক পেজের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া, বন্ধ করে দেওয়া। আর এটা না পারলে দেশ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখিন হবে। তখন পরিস্থিতিনিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। দেশে আজ তরুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ঐক্যবদ্ধ, আসুন তাদের সহায়তা করি, দেশকে ভালবাসি। গড়ে তুলি রাজাকার মুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ। বাংলার মাটিতে ৭১ এর ঘৃন্যগোষ্ঠীর কোন স্থান হতে পারে না। জয় বাংলা, জয় ইসলামের।

লেখক : একজন তরুন ব্লগার([email protected])

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।