ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে খালেদা জিয়ার আপোষহীন অবস্থান

জাহিদ নেওয়াজ খান, সাংবাদিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৩
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে খালেদা জিয়ার আপোষহীন অবস্থান

যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আপোষহীন নেত্রীর আপোষহীন অবস্থান। সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তার বক্তব্যই এর প্রমাণ:

১. সংবাদ সম্মেলনে নাটকীয় কায়দায় খালেদা জিয়া ‘স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ, মর্মাহত’ বললেও জামায়াত-শিবির যে পুলিশ হত্যা করেছে, ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে প্রকৌশলীকে খুন করেছে, কলেজ শিক্ষককে হত্যা করেছে, সাধারণ ফল বিক্রেতা-রিকশাঅলার জীবন কেড়ে নিয়েছে, বন্দুক ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে পুলিশ-র‌্যাবের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে সেই বিষয়ে একটি কথাও বলেননি।



২. সাঈদীর ফাঁসির রায় মানতে না পেরে জামায়াত-শিবির যে তার কর্মীদের পুলিশের সঙ্গে এমন সংঘর্ষে নিয়ে গেছে যেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের জীবন রক্ষার্থে গুলি করতে বাধ্য সেই নৈরাজ্যমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি খালেদা জিয়া।

৩. গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর এক সপ্তাহের মাথায় তার দল বিএনপি চোখের লজ্জায় স্বাগত জানালেও এখন জামায়াতের মতোই ওই আন্দোলনকে ফ্যাসিবাদ বলেছেন খালেদা জিয়া।

৪. শুধু তাই নয়, সাঈদীর রায়ের পর সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের যে তা-ব তাকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ বলে তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন খালেদা জিয়া।

৫. একাত্তরে পাকিস্তানী আর তাদের দোসররা যেভাবে ধর্মের অজুহাত দিতো সেই একই কায়দায় অসত্য উচ্চারণে ইসলাম এবং স্বাধীনতাকে পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষ বানানোর কল্পিত অভিযোগ এনেছেন খালেদা জিয়া।

৬. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে পবিত্র ইসলাম, মহান আল্লাহ এবং মহানবী (স.) এর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর কল্পিত অভিযোগও এনেছেন খালেদা জিয়া।

৭. বাইশে ফেব্রুয়ারি ইসলামী দলগুলোর ভেতরে ঢুকে জামায়াত-শিবির যে মসজিদের ভেতর ভাংচুর করেছে, জায়নামাজে আগুন দিয়েছে, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে, পুলিশকে রক্তাক্ত করেছে সেই কথা বেমালুম চেপে গিয়ে সরকারি দলের বিরুদ্ধে মসজিদে ঢুকে মুসল্লি, খতিব ও ইমামদের হেনস্তা করার অভিযোগ এনেছেন খালেদা জিয়া।

৮. ওইদিন জামায়াত তাদের ভেতর ঢুকে নাশকতা করেছে সেই কথা বুঝতে পেরে ইসলামী দলগুলো যে আজ কোনো কর্মসূচি দেয়নি সেই কথাও একবারের জন্য বলেননি খালেদা জিয়া।

৯. ইসলামী দলগুলো যে ঘোষণা দিয়ে বলেছে, শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধিতা নেই, তাদের বক্তব্য শুধু দুই-একজন বিপথগামী ব্লগারের বিরুদ্ধে, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে এবং জামায়াত কোনো ইসলামী দল নয়, সেই কথাও জানার চেষ্টা করেননি খালেদা জিয়া।

১০. বাইশ ফেব্রুয়ারি ইসলামী দলগুলোর কর্মসূচি আর বৃহস্পতিবার সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর সারাদেশে জামায়াতের যে তা-ব তার মধ্যে যে কোনো সম্পর্ক নেই তা উল্লেখ না করে বৃহস্পতিবার জামায়াতের সহিংসতাকেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বলেছেন খালেদা জিয়া।

১১. দুই সপ্তাহ আগেও তার দল অন্ততঃ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে হলেও যে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছিলো তা ভুলে গিয়ে ওই আন্দোলনে সমর্থন জানানোতে মন্ত্রীদের দোষ খুঁজে পেয়েছেন খালেদা জিয়া।

১২. আবারো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সেই পুরনো আন্তর্জাতিক মানের কথা উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের পরিবেশ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনেছেন খালেদা জিয়া।

১৩. আবার তার দলও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে দাবি করে এই বিচারের মাধ্যমে জাতিকে বিভক্ত করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন খালেদা জিয়া।

১৪. তার দল যখন জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনী জোট করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে তখন আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের কথা বললেও এখন তাতে জাতীয় ঐকমত্য গঠন জরুরি ছিলো বলছেন খালেদা জিয়া।

১৫. সরকার তাদের কথায় কান দেয়নি, কারো সঙ্গে আলোচনা করেনি উল্লেখ করে কি বোঝাতে চেয়েছেন খালেদা জিয়া? বিচার কিভাবে হবে, আইনের সংশোধনী কি হবে, তদন্ত কারা চালাবেন, প্রসিকিউশনে কে থাকবেন, বিচারক কারা হবেন; কাদের বিরুদ্ধে বিচার হবে, এসব বিষয়ে কি জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকার পরও বিএনপি এবং এমনকি জামায়াতের সঙ্গেও আলোচনা আশা করেছিলেন কি খালেদা জিয়া?

১৬. যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষেই থাকবেন তাহলে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাসের দিন সংসদে কেনো ছিলেন না খালেদা জিয়া?

১৭. যদি মান এবং নির্ভুল আইন নিয়ে এতোই চিন্তিত থাকেন তাহলে আইন পাস এবং সংশোধনীর দিন কেনো সংসদে ছিলেন না খালেদা জিয়া?

১৮. ‘আমরাও চাই, স্বচ্ছ হতে হবে, আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে’, এতোদিন এসব কথা বলার পর এখন ট্রাইব্যুনালের সব রায়কেই প্রশ্নবিদ্ধ বলেছেন খালেদা জিয়া।

১৯. সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর থেকে সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের যে তা-ব সেই ধারাবাহিকতায় জামায়াতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে শনিবার প্রতিবাদ মিছিল এবং মঙ্গলবার হরতাল আহ্বান করেছেন খালেদা জিয়া।

২০. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত-শিবিরের যে সন্ত্রাস তার বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থাকে জুলুম-নির্যাতন দাবি করে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

২১. অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তাই সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেননি খালেদা জিয়া।

জাহিদ নেওয়াজ খান, বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল আই-[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।