ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ককটেলই সকল ক্ষমতার উৎস

শাখাওয়াৎ নয়ন, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৩
ককটেলই সকল ক্ষমতার উৎস

ঢাকা: জনগণ নয়, ককটেলই সকল ক্ষমতার উৎস। সবার উপরে ককটেলতন্ত্র তাহার উপরে নাই।

রাজপথ দখল করতে ককটেলের চেয়ে আর কোনো নিয়ামক হাল আমলে দেখা যায়নি। এমনকি জনগণেরও দরকার নেই। সারা বাংলাদেশে মাত্র ২০০ লোকই যথেষ্ট।

গণতন্ত্রের প্রবক্তারা এখন কি বলবেন? তারা হতবাক। ক্ষমতার উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মত পাওয়া যায়। ভারতীয় এক ঋষির মতে, ‘নাভীমূলই সকল ক্ষমতার উৎস’। কিন্তু চীন দেশের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নেতা মাওসেতুং বলেছেন, ‘বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস’। তাঁর সাথে বাংলাদেশের হালআমলের ককটেলতন্ত্রের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

কিন্তু মাও সেতুং সাহেব তার বোঁচা, থ্যাবড়ানো নাক এবং ছোট ছোট চোখ দিয়ে আমাদের দেশের রূপ, রসের গন্ধ ঠিকমত বুঝতে পারেননি। অথবা তাঁর ছোটখাট গোল মাথার মস্তকে অনুধাবন করতে সক্ষম হননি। বাংলাদেশ তো আর চীন দেশের মতো পাহাড় পর্বতে ভরা দুর্গম কোনো দেশ না। বন্দুক শিল্প একটি বিরাট কলকারখানার বিষয়। এই দেশে চাইলেই বন্দুক বানানো যায় না, বন্দুক লুকিয়েও রাখা যায় না। একই ভাবে সমতল ভূমির এই দেশে বন্দুক বানানোর কারখানা স্থাপন করবে কোথায়? বন্দুক ক্রয় কিংবা বানানোর চেয়ে ককটেল বানানো অনেক সহজ কাজ।

তাই জামায়াত শিবিররা বর্তমানে ককটেলকে ঈমান ও ইসলাম রক্ষার নামে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার কাজে ব্যবহার করছে। বরাবরের মতো বিএনপিও রাজাকারদের ককটেলতন্ত্র বাস্তবায়নে পূর্ণ সমর্থন এবং অংশগ্রহণ করছে। সম্প্রতি বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে বেশ কিছু আধুনিক মানের ককটেল পাওয়া গেছে। এটা ভূমি থেকে ভূমিতে এবং ভবনের ছাদ থেকে পুলিশের কিংবা মানুষের ওপর নিক্ষেপণযোগ্য। আগের মডেলের ককটেলের চেয়ে এগুলো অনেক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং আধুনিক। এগুলো প্রচণ্ড শব্দ তৈরি করতে পারে। দ্রুত আগুন লাগাতে সাহায্য করে। হতাহতের দিক থেকেও বহুগুণ ক্ষমতাসম্পন্ন।

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এরকম একটি আবিষ্কারকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার অবৈধ এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বলছে। পাকিস্তান হলে এই মহান আবিষ্কারকে আব্দুস সালামের নোবেল বিজয়ের সমতুল্য অবদান হিসেবে গণ্য করা হতো। ভবিষ্যতে বিএনপি রাজাকার জোট ক্ষমতায় এলে এই বিশেষ ধরনের ককটেল আবিষ্কারের জন্য উদ্ভাবককে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হতে পারে। কারণ জাতীয় জীবনে এর কার্যকারিতা অপরিসীম। বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য। তারা চাইলে বাংলাদেশকে ককটেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবেও ঘোষণা করতে পারে। আফগানিস্তান, পাকিস্তানের সঙ্গে নিজ নিজ দেশে যে কোনো ধরনের উপাসনালয়ে এমনকি মসজিদে উক্ত ককটেল ব্যবহার করে নিরীহ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যার একটি দীর্ঘমেয়াদী যৌথ সামরিক চুক্তি করতে পারে। একই সঙ্গে প্রতিবছর শীতকালে উক্ত ককটেল ব্যবহার করে ত্রিপক্ষীয় সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

কথিত আছে, ইতোমধ্যে ককটেলকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা “পবিত্র ককটেল” অথবা “ককটেল মোবারক” বলেন। তারা দাবি করেন, ইহা যেহেতু ঈমান ও ইসলাম রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তাই এর অবমাননা পবিত্র ইসলাম ধর্মের অবমাননার শামিল। তাদের মতে, শাহবাগের বিপথগামীরা অহিংস আন্দোলনের নামে নাস্তিকতা, হিন্দুত্ব গ্রহণ করেছে। অহিংস আন্দোলন একটি হিন্দুবাদী ভারতীয় আন্দোলন। মহাত্মা গান্ধী তো মুসলিম ছিলেন না। তার পথ যারা অনুসরণ করেন তারা বেদাত, নাস্তিক, বেশরিয়তী কাজে লিপ্ত। তারা পথভ্রস্ট। তারা জাহান্নামের পথ গ্রহণ করেছে। আর যারা ককটেল বানানো এবং নিক্ষেপের মতো সত্য ও সুন্দরের পথ গ্রহণ করেছে তাদের জন্য দুনিয়াতে আছে টসটসা যুবতী আর কচকচা টাকা এবং বেহেস্তে অপেক্ষা করছে অগণিত ডানাকাটা হুরপরী। কেউ যদি ককটেল মোবারক বানাতে গিয়ে কিংবা নিক্ষেপ করতে গিয়ে নিজে নিজেই মারা যান, তিনি শহীদ হবেন। আর কেউ যদি উক্ত পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান, তিনি হবেন শহীদ কুলের শিরোমনি।
   
লেখক: ব্লগার, ঔপন্যাসিক, পিএইচডিরত গবেষক। ইউনিভার্সিটি অফ নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।