ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

হরতাল : কিছু কথা

হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৩
হরতাল : কিছু কথা

`হরতাল` শব্দটি বাংলাদেশে অতিমাত্রায় আলোচিত সমালোচিত একটি শব্দ।   ঐতিহ্যবাহী এ কর্মসূচিটির প্রতি আমজনতার প্রতিক্রিয়া অনেকটাই গতানুগতিক।

স্থবির জনজীবন আর হঠাৎ কোনো অনাকঅঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকার চিত্রটি এখন খুবই স্বাভাবিক। সাথে থাকে সরকারী দল ও বিরোধী দলের হরতাল নিয়ে অবাস্তব বক্তব্য । মিডিয়ার মধ্যেও থাকে ফোকাসিংযের রকমফের।   মাননীয় হরতালবিরোধী সাংবাদিক সাহেব একটা খালি জনহীন  রাস্তায় দাড়িয়েও কিংবা কখনো কখনো কষ্টেসৃষ্টে প্রশাসনের সহযোগিতায়  কয়েকটা গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলবেন, "জনজীবন স্বাভাবিক, জনগণ হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে । " আর বিরোধীদলমনস্ক মিডিয়া বলবে, "জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবেই হরতাল পালন করছে, তাই তারা কেউ রাস্তায় নামেনি । "

বাস্তবে এখানকার কোনও পক্ষের বক্তব্যই পুরো সত্য নয়। আসলে জীবনযাত্রা সত্যিই ব্যাহত হয়েছে আর কিন্তু সেটা যতটা না বিরোধী দলের সাথে সহমত জ্ঞাপণে, তার চেয়ে বেশি নিজের জানমালের ভয়ে।   অথচ মহামান্য রাজনীতিবিদেরা এ নিয়ে খুব বেশি ভাবেন বলে মনে হয় না।   তাদের কাছে তাদের দলীয় রাজনীতিটাই বড়।   `এসময় আন্দোলনের স্বার্থে সাধারণ জনগণ যাতে এই সাময়িক কষ্টগুলো একটু সহ্য করে নেন, জনতার কষ্টে তারাও সমব্যথী" এ কথাগুলো বলার মতো ভব্যতা এদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্য এখনো গড়ে ওঠেনি। এই অপসংস্কৃতির আশু পরিবর্তন হওয়াটা জরুরি।

যে কোন সরকারের আমলেই হোক না কেনো  হরতাল দেশের উন্নতির পক্ষে অন্তরায় ।   কিন্তু কথা হলো যদি হরতাল বন্ধ করে দিয়ে বিরোধীদলগুলো বিক্ষোভ সমাবেশ কিংবা কোন অহিংস আন্দোলনের ডাক দেয় তাহলেও কি মিডিয়া এবং সরকার একই ভাবে তাদের কর্মসূচী মূল্যায়ন করবে?  অবশ্যই না। অবচেতনে আমাদের মানসিকতাই এমন হয়ে গেছে। খুবই ধংসাত্মক কিছু না  হলে দেশে এখনো খুব একটা কিছু হয়নি কিংবা আন্দোলনটা অতটা জোড়ালো হয়নি এমনটাই ভাবার পক্ষপাতী আমরা। তার ওপর আবার কোথাও জড়ো হলেই নিরাপত্তা বাহিনী রক্ষীবাহিনীর মতো আচরণ করে। নিরাপদে নিজের অধিকারের কথাটুকু বলার কিংবা ন্যায্য দাবীটুকু তুলে ধরার অধিকার এখন সব বাংলাদেশীদের নেই।   সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগের গনজাগরণের মত রুজী রুটির নিশ্চয়তা আর সম্পূর্ণ মিডিয়া সাপোর্ট নিয়ে আন্দোলন করার রাজকপালতো  আআর সবার থাকে না। !  তাই রাজনৈতিক দলগুলোও হয়তো হরতাল  দিয়েই যাবে। কিছু অতিউৎসাহী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গিয়েও সরকারী হরতাল কিংবা সরকারী সহযোগীতায় সরকারবিরোধী আন্দোলন করানোর লোভও সামলাতে পারেন না। এই সরকারের আমলে অন্তত ছয় দিন সরকারীভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। বেসরকারী হরতালেতো ফাকঁফোকর থাকে কিন্ত  গতবছরের বারই মার্চের আগের সরকারী হরতাল কিংবা সাম্প্রতিক ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণে বামদলের নামে সরকারী হরতালে কোন ফাঁকফোকর ছিলো না।   যেখানে পুলিশ আর এম পি মন্ত্রীরাই পিকেটার সেখানে আর রাস্তায় গাড়ি নামানোর সাধ্য কার? 

এ অপসংস্কৃতির যত দ্রুত শেষ হবে ততোই ভালো।   কিন্তু সমস্যা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যবোধেরও পরিবর্তন হয়। আমরা যারা আমজনতা আমরা চাই এ দেশের পরিবর্তন হোক কিন্তু সেটা ধনাত্মক পরিবর্তন। পাঠ্যবইয়ের ইতিহাসের মত যেনো মানুষের সর্বজনীন কল্যাণের মানসিকতার পরিবর্তনও নিয়মিত না হয় এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।   নাহয় আমাদের এই বকবকানি উলুবনে মুক্তোই ছড়িয়ে যাবে। । অবশ্য এতোদিনে সম্ভবত এ দেশের উলুবনগুলো মুক্তোর খনিতে পরিণত হয়ে গেছে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।