ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বাংলাদেশের গার্মেন্টস ও আমাদের ভবিষৎ

মোঃ পারভেজ আহমেদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৩
বাংলাদেশের গার্মেন্টস ও আমাদের ভবিষৎ

ঢাকা: গত চার দিন ধরে বন্ধ রয়েছে গার্মেন্টস শিল্পের হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান। গোটা দেশ আর তার অর্থনীতি নির্ভরশীল যে শিল্পের ওপর সেই পোশাক কারখানাগুলোকে বাঁচানোর কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ এখনো চোখে পড়ছে না।

সাভার দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোকে সুনির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা সরকার কিংবা বিজিএমইএ এখনো দেয়নি। আহতদের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা দরকার, এ ব্যাপারেও সরকার, বিজিএমইএ ও মালিকপক্ষ চুপ করে আছেন, যদিও আহতের চিকিৎসা চলছে।

এতবড় শিল্পে যেখানে হাজার হাজার গার্মেন্টস কারখানায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন সেখানে যথেষ্ট সর্তকতা সত্ত্বেও বছরে ১-২টি দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নাও হতে পারে কারণ এই দেশের রন্দ্রে রন্দ্রে রয়েছে দুনীর্তি। যে কারখানাগুলোতে দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন বেঁচে আছে একটি দুর্ঘটনা তার জন্য যেন এমন কাল হয়ে না দাঁড়ায় যে গোটা কারখানা ধ্বংস হয়ে যায় তা সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। এদেশ তাহলে আর মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। কিছু মানুষ এমন আচরণ করছেন যেন গোটা পোশাক কারখানা ধ্বংস হয়ে যাক বন্ধ হয়ে যাক তাহলেই ভালো হয়। অথচ একবার ভাবুন এই দেশে এমন আর কোন শিল্প কিংবা ব্যবসায় উঠে এসেছে যে কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করতে পারবে? নিজেদের দেশের স্বার্থে হলেও আমাদের পোশাক কারখানাকে বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে আসুন না হয় কেউই আমরা বাঁচতে পারবো না।

গোটা দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। গার্মেন্টেস শিল্প বন্ধ করে দুর্ঘটনা কমানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাহলে অন্যান্য সকল শিল্পও পর্যায়ক্রমে এভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।
বরং ভবন নির্মাণ বিধিমালার যথার্থ প্রয়োগ, ভবন নির্মাণের সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি  এবং সর্বগ্রাসী দুনীর্তি রোধ করার মাধ্যমে এই জাতীয় দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। বড় বড় পোষাক শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কারখানা সমূহ দিনের পর দিন বন্ধ রাখার কারণে ক্রেতারা অসংখ্য শিপমেন্ট বাতিল করবেন। এ কারণে ব্যাপক আর্থিক লোকসানের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে পোশাক শিল্প। যত তাড়াতাড়ি কারখানাসমূহ খুলে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল। কারাখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের জন্যও অসুবিধা, কারণ মাস শেষে মালিক যদি বেতন দিতে না পারেন তাহলে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সাহায্যকারী নেই। যারা কারখানা ভাংতে উস্কানী দেয় তারা হীন জঘন্য চক্রান্তকারী ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের উদ্দেশ্য হলো দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এই সেক্টরকে ধ্বংস করে পুরো জাতিকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা। কারণ আর এমন কোনো শিল্প নেই যে শিল্প গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেলে বেকার কোটি কোটি শ্রমিকের দায়িত্ব নিতে পারে। সরকার ট্রেড ইউনিয়ন করার কথা বলছে, সরকার কোনো কোনো গোষ্ঠীর চাপে এসব কথা বলছে বুঝা যাচ্ছে, কিন্তু নিজ বৃহত্তর স্বার্থে কিছু কিছু জায়গায় কোনো আপোষ করা উচিত হবে না। ট্রেড ইউনিয়ন এমনই একটি স্পর্শকাতর ইস্যু যে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে ট্রেড ইউনিয়নের অভিজ্ঞতাগুলো দেখেন আমাদের আদমজী-সহ আপনি উৎসাহমূলক কিছুই পাবেন না, কেবল ধ্বংস আর ধ্বংসই পাবেন। শ্রমিকদের জন্য ভালো কিছু করতে চাইলে ট্রেড ইউনিয়ন নয়, প্রয়োজন সদিচ্ছা কারন ট্রেড ইউনিয়ন চালু হলেই তা চলে যায় একশ্রেণীর লুটেরা স্বার্থন্বেষীদের হাতে যারা শুধু ধ্বংস আর লুট-পাটই করে। শ্রমিক দরদী এসব নেতা নেত্রী আসলে কারা? তারা কেহই শ্রমিক নয় বরং সবাই কোটিপতি। শ্রমিকরা কখনই ধ্বংসে জড়িত নয় বরং শ্রমিকদের রূপ ধারণ করে কিছু কিছু গোষ্ঠী এসব করে বেড়ায়। প্রকৃত শ্রমিকরা বুঝে যে বাংলাদেশে একমাত্র গার্মেন্টস কারখানাগুলোই তাদের শেষ ভরসার জায়গা, আর কোথাও প্রকৃত পক্ষে তাদের জন্য কোনও ভরসা বা আশ্রয় নেই। না সরকার, না অন্য কোনো শিল্প যারা প্রকৃতপক্ষে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দায়িত্ব নিতে পারে। আর ট্রেড ইউনিয়নের শ্রমিক দরদী নেতা বা নেত্রীগণতো গার্মেন্টস শিল্প আদমজীর মত ধ্বংস করে দিয়েই গায়েব হয়ে যাবেন তাদের আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না। দায়িত্বশীলদের ছেলেমানুষী মানায় না। পোষাক শিল্প রক্ষায় সরকার, মালিক ও শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং নির্বাচিত সরকারকে দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বার্থে শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে হবে। দেশের ভবিষৎ বিপদের কারন হতে পারে এমন কোন সিদ্ধান্ত সরকার নেবেন না। ট্রেড ইউনিয়ন করা হলে দেশের গামের্ন্টস শিল্পের কি পরিণতি হবে তা কি সরকার বুঝে না?

মালিকপক্ষকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শ্রমিক নিয়োগ করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে আরোও দায়িত্বশীল হতে হবে। কিছু চাটুকারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে মালিক নিজে সার্বক্ষণিক তত্বাবধায়কের ভুমিকা নিয়ে শ্রমিকদের অভিভাবক হিসেবে তাদের ভালো মন্দ সকল বিষয়ের সঙ্গে নিজকে যুক্ত করতে পারলে আর কিছুই লাগবে না। আমার শ্রমিক ভালো থাকলে আমি ভালো থাকবো-এভাবেই ভাবতে শিখতে হবে। শ্রমিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে দুর্ঘটনা বা অন্যকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজেদের যথাসম্ভব চূড়ান্ত ধৈর্য্য ও ত্যাগ স্বীকার করার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি সাধনে অন্যদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। দুস্কৃতিকারী ও স্বার্থন্বেষীদের  প্ররোচনায় প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর বা রাস্তায় নেমে জান-মালমালের ক্ষতি সাধনে বিরত হতে হবে। সবসময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে ন্যায্য দাবিসমূহ পূরণ করতে হবে। সরকার, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকদের মিলিত আলোচনার ভিত্তিতে যথাশীগ্র সম্ভব ফ্যাক্টরী সমূহ খুলে দেওয়ার ঘোষণা  সম্ভব হলে আজই দেওয়া উচিত। কেউ কাউকে দোষারূপ না করে বরং ভবিষ্যতে এমন আর কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে সন্মিলিত ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন নয় বরং শ্রম আইন সংশোধন এবং শ্রম আদালতের মাধ্যমেই সকল বিরোধ নিস্পত্তি করা যাবে। গার্মেন্টস বাচঁলে দেশ বাচঁবে। গার্মেন্টস ধ্বংস হয়ে গেলে আমরা কেউই ভালো থাকবো না। অর্থনীতি ব্যাংক, বীমা, অন্যান্য সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের অর্থনীতির সার্বিক উপরি কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে।         
 
লেখক: হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল অ্যান্ড এমপ্লয়িজ মোটিভেশনাল স্পিকার,
ডিজিএম (এডমিন এন্ড এইচআর), আমানগ্রুপ। উত্তরা, ঢাকা।
e- mail : [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।