ওই তো সেদিন, যেদিন মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড না হওয়ায় কসাই কাদের হাতের দু`আঙুল তুলে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে আমাদের ভাসিয়ে নিয়েছিল লজ্জার সমুদ্রে! মুহূর্তের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল বাংলার আকাশে-বাতাসে। এখনো যে দেশে সৎ ও সত্যিকারের মানুষ জীবিত আছে তারই প্রমাণ মিলেছিল অনলাইন ছাড়িয়ে শাহবাগে।
প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরে রাস্তায় নেমে এসেছিলো এক ঝাঁক তরুণ। তাদের সঙ্গী হয়েছিলো সব বয়সের মানুষ, আমজনতা। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে ৫ ফেব্রুয়ারির সেই ক্ষণ।
ব্লগার ও অন লাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক(BOAN) এর ব্যানারে নেমে আসা তরুণরা ছিল সংগঠকের ভূমিকায়। গুটিকয়েক মানুষের আন্দোলন অনলাইন ছাড়িয়ে মুহূর্তেই রঙ ছড়ায় বাংলাদেশের প্রতিটি শহর-গ্রামে। যে ছেলে-মেয়েরা জীবনে কখনো মিটিং মিছিলে যায় নি, তারাও সামিল হয় গণ-মানুষের গণমিছিলে। দাবি জানায় ফাঁসির।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যখন খুনি-ধর্ষক কসাই কাদেরকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন, তখন কসাই কাদের দু’আঙুল তুলে জাতিকে ধিক্কার দিতে থাকেন। সেই ধিক্কার সহ্য করার ক্ষমতা কারো ছিল না!
একাত্তরেরও একইভাবে আমাদের অপমানিত করেছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। ভাইয়ের সামনে বোনকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে পাশবিক নির্মমতায়।
স্বাধীনতার চার দশক পর যেন সেই পাশবিকতারই মঞ্চায়ন ফের। তাই লজ্জা ও প্রতিবাদ রুপ নেয় গণরোষে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে রায় বদলে যাবজ্জীবন থেকে ফাঁসি হলো কাদের মোল্লার। ঠিক করা হলো দিনক্ষণ। কিন্তু ফাঁসির জন্য নির্ধারিত সময়ের মাত্রা ঘণ্টা দুয়েক আগে বাংলার আকাশে বাতাসে আবারো হতাশা ছেয়ে গেলো।
কসাই কাঁদের মোল্লার স্ত্রী সানোয়ারা জাহান মঙ্গলবার দিবাগত রাতে স্বামীর দেখানো কায়দায় ডান হাতের দু’টি আঙুল উপরের দিকে তুলে দিয়ে জাতিকে আবারো লজ্জায় ভাসালেন। এই ভি চিহ্ন দেখানোর মানে হচ্ছে, জয় তাদেরই! মানবতা-বিরোধী অপরাধীরাই আবারো অপমানিত করল বাংলার ১৬ কোটি মুক্তিপাগল ও ’৭১ এর চেতনার ধারকদের।
এমদাদুল হক তুহিন: ব্লগার, কবি, [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৩