ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এভাবে চলে যেতে নেই, শাকিল ভাই!

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৬
এভাবে চলে যেতে নেই, শাকিল ভাই! মাহবুবুল হক শাকিল

হঠাৎ করেই তিনি চলে গেছেন। এখন নিজ নগরী ময়মনসিংহে মাটির শীতল বিছানায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। জাগবেন না আর কোনোদিন। কবিতাও লিখবেন না।

ময়মনসিংহ: হঠাৎ করেই তিনি চলে গেছেন। এখন নিজ নগরী ময়মনসিংহে মাটির শীতল বিছানায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন।

জাগবেন না আর কোনোদিন। কবিতাও লিখবেন না।

পোস্ট করবেন না ফেসবুকে। ‘মন খারাপের গাড়ি’র চালক মাহবুবুল হক শাকিল সবার মন খারাপ করে দিয়েই চির অনন্তের পথ ধরলেন।  

সকরুণ সুরে সাইরেন বাজিয়ে শেষ শয্যার জন্য তার মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ছুটে চললো নগরীর ভাটিকাশর গোরস্থানে। পেছনে শোকাতুর মানুষের ঢল, ভালবাসা আর আহাজারি।  

তাদের চোখেও যেন জলের স্রোত। এরপর ওই গোরস্থানের মাটির ঘরেই শেষ শয্যা হলো প্রধানমন্ত্রীর এ বিশেষ সহকারীর।

কবরের ওপর মুঠো মুঠো মাটি ছড়িয়ে দিলেন তার বাবা থেকে শুরু করে স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তরা। সম্ভাবনার সব আলো জ্বালিয়ে অপূর্ণতার হাহাকার নিয়ে জাগতিক সব অধ্যায় থেকে চির প্রস্থান করলেন তিনি।

মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরের পর এক সহকর্মী মুঠোফোনে জানান কবিতার কারিগরের চির বিদায়ের মর্মভেদী এ দুঃসংবাদ। সেই থেকে বুকের ভেতর হাজারমন ভারী পাথর চাপানো কষ্ট জেঁকে আছে।

মাত্র ৪৮ বছর বয়সে বিন্দুমাত্র পূর্বাভাস ছাড়াই প্রিয় কবি মাহবুবুল হক শাকিলের অসময়ে প্রস্থানের বাস্তবতাকে আত্মস্থ করতেও সময় লাগছে।  
একই এলাকার বাসিন্দা বলেই কি না অনেক আগে থেকেই শাকিল ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয়। দিনে দিনে গড়ে ওঠে গভীর সখ্যতা-হৃদ্যতা।  

অতিকথন পছন্দ করতেন না। শেখাতেন জীবন উদযাপনের মন্ত্র। প্রায় সময়েই কথা হতো আড্ডাবাজ এ মানুষটির সঙ্গে।  

প্রিয় ময়মনসিংহ নগরীতে এলে সহকর্মী সংবাদকর্মী বন্ধুদের নিয়ে ছুটে যেতাম তার কাছে। একবার ঢাকায় গেলে গণভবন কমপ্লেক্সে তার সঙ্গে না দেখা করে ময়মনসিংহ ফেরা হয়নি।

মনে পড়ছে, কবি সাংসদ তারুণ্য পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পর একবার আমরা ফুল নিয়ে হাজির হলাম তার বাসায়। আহ কী খুশি শাকিল ভাই! 

ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করার সময়েই গালভরা হাসি’র বিচ্ছুরণ তার মুখায়বে। তখনো বোঝা হয়নি কবি’র বোহিমিয়ান জীবনের খেসারত দিতে হবে তারই বন্ধু, সতীর্থ, ভক্ত, অনুসারী, অনুগামী, পরিবার, সমাজ বা জাতিকে।  

আসলেই সমাজে এমন কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদের প্রতিদিনই নতুনভাবে আবিষ্কার করা যায়। তাদের ভেতরে এমন সম্পদ থাকে, যা তারা প্রতিদিন একটু একটু করে দিতে পারেন।  

আমার কাছে ‘খেরো খাতার পাতা থেকে’ এবং ‘মন খারাপের গাড়ি’ কাব্যগ্রন্থের প্রয়াত লেখককে তেমনটিই মনে হয়েছে।  

মাহবুবুল হক শাকিলের বাবা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক। প্রায় ৫৬ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এ মানুষটিকে নিয়ে আরও বছর কয়েক আগে ‘চেনা গন্ডির বাইরের রাজনীতিক, অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা’ শিরোনামে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’এ আমার একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়।  

সেদিনই ‘মাই ফাদার, মাই হিরো’ স্ট্যাটাসে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদনটি শেয়ার করলেন। এর ঠিক পরের দিনই বাংলানিউজের রেফারেন্সে দেশের আরেক শীর্ষ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতিবেদনটি ছাপা হলো।  

শাকিল ভাই ফোন করলেন। বললেন, ‘তোমার নিউজ তো হিট। বাংলাদেশ প্রতিদিনও ছেপেছে। ’ 

‘প্রতিটি মৃত্যুই শোকঘন। মৃত্যু এক অমোঘ শব্দ। তবুও কিছু কিছু মৃত্যু সমাজ জীবনে রেখে যায় অপূরণীয় শূন্যতা। আমার জানামতে সামাজিক পরিমণ্ডলে কবি মাহবুবুল হক শাকিল অনেকটাই অন্তর্মুখী হয়ে কাজ করে গেছেন।  

‘তার অকাল প্রয়াণ বেদনাদায়ক’, বলছিলেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইকরামুল হক টিটু।  

মাঝে মধ্যেই আমাকে ফোন করে নিউজ দিতেন, উৎসাহ দিতেন শাকিল ভাই। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেরদিন রাতেও একইভাবে ফোন করলেন।  

জানালেন, তার বাবা অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকায় ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানের নাম সবার আগে দিয়েছেন। আত্মপ্রচারের রাজনীতির সময়ে উদারতার রাজনীতির এমন দৃষ্টান্ত নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।  

‘অনেকটাই নীরবে হলেও কবিতায় স্বকীয়তার যে নতুন মাত্রা তিনি সংযোজন করেছেন অনাগত ভবিষ্যতে থাকবে তার প্রভাব। মানুষকে মুহূর্তেই আপন করে নেওয়ার সহজাত প্রবণতা ছিল তার। ’

‘ময়মনসিংহ তো বটেই এ দেশের রাজনীতিক, কবি এবং শিল্প ও সাহিত্য জগতের মানুষেরাও গভীরভাবে উপলব্ধি করছেন তারা কী হারালেন?’ আবেগ মেশানো কণ্ঠে এমন মূল্যায়ন প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল আলম খানের।  

আমাদের এবং শিল্প-সাংস্কৃতিক জগতের বাসিন্দাদের ভাবনা, চিন্তা আর সত্তায় মাহবুবুল হক শাকিল মিশে আছেন। অব্যক্ত বেদনাবোধ নিয়ে বলতেই হচ্ছে, এভাবে চলে যেতে নেই, শাকিল ভাই।

তবুও নতুন জগতে আপনি ঘুমান শান্তিতে। আপনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন আমাদের যুথবদ্ধ স্মৃতির মণিকোঠায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৬
এমএএএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।