ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

শিক্ষক লাঞ্ছিত, আমি কি সম্মানিত?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
শিক্ষক লাঞ্ছিত, আমি কি সম্মানিত?

আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা এখন হরহামেশাই শিক্ষার্থীর হাতে লাঞ্ছিত হন। এবং সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত হয়ে পত্রিকা অফিসে আসে।

আমাদের গ্রামে একটা প্রবাদ আছে… ‘ভালো মানুষ মাইর খায়, ধুলা ঝেড়ে ঘরে যায়/ খারাপ মানুষ মাইর খায়, পথে পথে গেয়ে (বলে) যায়’। আজকে শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছে শব্দটা লিখবো কি লিখবো না, অনেক বার ভেবেছি।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিখেছি। কারণ না লিখলে আবার যারা লাঞ্ছিত হয়েছেন তারা ভাববেন আমি পক্ষপাতিত্ব করেছি।

তারা লাঞ্ছিত হয়েছেন এটা জাতিকে জানানো সম্মানের না অপমানের, তা ভাবার সময় তাদের নাই। তবে জাতিকে জানাতে হবে যে, তাদের শিক্ষার্থীরা বেয়াদব। কিন্তু এখানেও ভাবেন না যে, নিজেদের শিক্ষার্থীদের বেয়াদব বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া কতোটা অপমানের। এর মানে কি এটা দাঁড়ায় না যে, শিক্ষকরা কী শিক্ষা দেন, তাদের শিক্ষার্থীরাই তাদের গায়ে হাত তোলে? আপনারা একবারও কী বিষয়টা ভেবেছেন?

কেনো বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে? আর কারা এর পেছনে মদত দিচ্ছে? জাহাঙ্গীরনগরে শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা এটাই প্রথম না। এর আগেও তোলা হয়েছিলো। এবং সেখানে শিক্ষকদেরই একটা অংশ শিক্ষার্থীদের মদত দিয়েছিলেন।

মনে আছে কি, শরীফ স্যারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালে রাতের অন্ধকারে (বিদ্যুত চলে যাওয়ার (?) পর) শিক্ষকদের উপর হামলার কথা? ওই ঘটনায় কারা মদত দিয়েছিলেন? সবাই না জানলেও আপনারা নিজেরা তো জানেন! বিচার করেছিলেন ওই ঘটনার?

এরপর আনোয়ার স্যারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালে দিবালোকে শিক্ষকদের উপর সশস্ত্র হামলা? মনে আছে? কারা ওই হামলাকারীদের মদত দিয়েছিলেন? একবার ভাবুন। করেছিলেন ওই ঘটনার বিচার? না করেন নি। কারণ তারা ছিলো একটি নির্দিষ্ট গোত্রের।

যদি ওই সময় ওই ঘটনাগুলোর বিচার করতেন, তাহলে আজ কি আবারো আপনারা আক্রান্ত হতেন? নিশ্চয়ই না। সাধারণ শিক্ষার্থী বলেন, আর ছোট দলভুক্ত গোত্রের শিক্ষার্থীই বলেন, ওরা আগের ঘটনাগুলো দেখে বুঝতে শিখেছিলো যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পেটালে কিছু হয় না।

কিন্তু ওরা জানতো না যে, বিচার হয় না আসলে একটা শ্রেণীভুক্ত শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভাঙ্গা সবার জন্য জায়েজ নয়। তাই ওরা গতকাল রাতে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার করতে গিয়ে ফেঁসে গেলো। হয়তো লাঞ্ছিত করেছিলো দুয়েক জন, কিন্তু ‘হাই কোর্ট’ (আদালত) দেখলো ৪৩ জন। তবে যারা পূর্বের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছেন, তাদেরকে আমি ধিক্কার জানাই। কারণ এটা আপনাদের কাছ থেকে কাম্য নয়।

সম্মানিত শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ, শিক্ষক পেট‍ানো ও ভাঙচুরের জন্য এখন যেভাবে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন, ভবিষ্যতেও এটা বাজায় রাখবেন। তাহলে আপনারা লাঞ্ছিত হয়েছেন এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তি আর আমাদের দেখতে হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।