ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

যারা চির অন্তরালে তাদের জানুন

আব্দুল ওদুদ চৌধুরী, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১১
যারা চির অন্তরালে তাদের জানুন

ঢাকা ‍ঃ ১৯৭১ সাল। আমি রাজশাহী সরকারি কলেজের ডিগ্রি পাস কোর্সের ছাত্র।

আমি বিএসসি পরীক্ষার ফি জমা দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ি আসি। আমার বাড়ি তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী জেলার নাটোর মহকুমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সিংড়া থানার চলনবিলের  চৌগ্রামে।

সমগ্র দেশ জয় বাংলার স্লোগানে মুখরিত। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেবেন সমগ্র দেশবাসী তার ভাষণ শোনার জন্য উদগ্রীব। বঙ্গবন্ধুর সেই কালজয়ী ভাষণ রেডিওতে শুনলাম।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। তাঁর ভাষণে বিমোহিত হলাম। ২৬ মার্চ শুনলাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হানা দিয়ে বাঙ্গালি পুলিশ, ইপিআর ও বাঙ্গালি সেনা সদস্যদের  হত্যা করছে।

অনেকে প্রাণ রক্ষায় পালিয়েছে। আমরা গ্রাম্য যুবকেরা বঙ্গবন্ধুর আহবানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালাম। শুনতে পেলাম পাকিস্তানি বাহিনী বগুড়া থেকে আমাদের গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়া বগুড়া নাটোর রাস্তা দিয়ে আসছে।

গ্রামের সাঁওতালেরা তীর ধনুক, আর আমরা কয়েক ভাই বাবার বন্দুক, গ্রামবাসী লাঠি বল্লম নিয়ে কাঁচা রাস্তার ওপর প্রতিরোধের জন্য দাঁড়ালাম। কিন্তু সেদিন কোন পাকি সেনা আসেনি।

আমার বাবার বন্দুকে মাত্র ৯টি গুলি ছিল। অন্যদের হাতে বল্লম ও তীর ধনুক। দলে দলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আমাদের গ্রামের হাইস্কুলে আশ্রয় নিতে এলেন।

জানতে পারলাম রাতে আমাদের গ্রামের মুসলিম লীগের লোকজন কাফন সরদারের নেতৃত্বে স্কুলে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর আক্রমণ করবে।

আমরা বন্দুক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সমস্ত রাত তাদের পাহারা দিই। তাদের দ্রুত ভারতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিই। এরপর আমাদের গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া কোনও ব্যক্তির ক্ষতি করার সাহস কেউ পায়নি।

জানতে পারলাম শাজাহান মামা, শাহাদত মামা, হারানভাই, নিঙ্গইনের নিমাই তার আরেক ভাই ভারত যাওয়ার জন্য আমাদের গ্রামে এসেছে এবং আমাদের খোঁজ করেছেন। খবর পাওয়া মাত্র পড়নের একটি মাত্র লুঙ্গি এবং আমার এক মামার দেওয়া ৫০ টাকা নিয়ে আমি এবং আমার বড়ভাই ওয়াজেদ তাদের সঙ্গে ভারত অভিমুখে রওনা দেই।

এখানে বলা বাহুল্য যে, আমাদের এলাকাটি বাংলাদেশের মধ্যখানে অবস্থিত। এখান থেকে বর্ডার প্রায় ১৩০ কি.মি দূরে। অবিরাম বৃষ্টি। এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধ। স্থাপনদীঘী স্কুলে আমরা যাত্রা বিরতি করি এবং নিমাইয়ের আনা চাল-ডাল রান্না করে খাই।

রাত যাপনের পর পুনরায় রওনা হই। বগুড়া জেলার কুণ্ডগ্রামের স্কুলে আবার রাত যাপন করি মাথার নিচে ইট দিয়ে। পরদিন ভোরে পাঁচবিবির পশ্চিম দিকের মাঠ দিয়ে যাওয়ার সময় দুই ব্যক্তি এসে পাঁচবিবির দিক দিয়ে যাওয়ার জন্য বলে আমাদের বিভ্রান্ত করে এবং পাট খেতের এক প্রান্ত থেকে একব্যক্তি হাতের ইশারায় পাঁচবিবির দিক দিয়ে যেতে নিষেধ করে। আমাদের  দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে বলে। আমরা পাট খেতের মধ্য দিয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে মঙ্গলবাড়ীয়া বর্ডার অতিক্রম করি।

তখন হাতের ইশারা দেওয়া ব্যক্তি জানালেন, ঐ দুই ব্যক্তির সঙ্গে গেলে আপনাদের মেরে ফেলা হত। আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমরা পশ্চিম দিনাজপুরের জেলা শহর বালুরঘাটে রাত যাপন করি।

দুইদিন অপেক্ষার পর আমরা বালুরঘাট থেকে মুর্শিদাবাদ অর্থাৎ বহরমপুরে যাই। বহরমপুর মুর্শিদাবাদের জেলা শহর। সেখান থেকে আমরা শিকারপুর নামক স্থানে যাই। কোথায় থাকবো, কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সেখান থেকে আমরা দুই ভাই বিচ্ছিন্ন হয়ে মালদহ শহরে আসি।

সেখানে রাজ হোটেলে নাটোরের জননেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাদের আদমপুর ক্যাম্পে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। আমরা আদমপুর ক্যাম্পে অবস্থান গেলাম। আদমপুর ক্যাম্পটি মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। অপর তীরে বাংলাদেশের ভোলাহাট থানা। আমাদের ওই ক্যাম্পে থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হল।

আমরা মাঝেমধ্যেই নদী পার হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসতাম এবং রাজাকারদের ধরে নিয়ে যেতাম। রাজাকারদের ভাগ্যে কি ঘটতো তা এখানে উল্লেখ করলাম না। এ ব্যাপারে ভোলাহাট এলাকার কিছু মুক্তিকামী নারী সদস্য আমাদের খবর দিয়ে সাহায্য করত।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ঐ এলাকাটি ৭নং সেক্টরের অধীনে ছিল এবং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কাজী নুরুজ্জামান। ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে একদিন খবর পাই ভোলাহাট এলাকায় রাজাকারদের সঙ্গে পাক সেনারা বৈঠক করছে।

ঐ রাত্রেই আমরা প্রায় ৩০ জন সেই এলাকা ঘিরে ফেলি এবং সুযোগ বুঝে ভোরের দিকে ফায়ারিং শুরু করি। এতে তিনজন পাক সেনাসহ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। ওই ঘটনার পর আমি কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ভোলাহাট থেকে তানোড় বাগমারা হয়ে রাণীনগর থানার প্রত্যন্ত এলাকা আবাদপুকুরের দিকে যাই সেখানে অধ্যাপক ইউনুস আলীর বাহিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। আমরা তাদের দলে যোগ দেই।

তাদের নিকট জানতে পারি পাক সেনারা আবাদপুকুরের দিকে আসছে। অধ্যাপক ইউনুসের বাহিনী ছাড়াও সেখানে আরও কয়েকটি বাহিনী উপস্থিত হয়। সকলে পরামর্শ করে পাক সেনাদের মোকাবেলার জন্য অবস্থান নেই। জায়গাটির নাম পারুলভিটা।

ওই স্থানে পাক সেনারা পৌঁছামাত্র তিন দিক থেকে তাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। পাকসেনারা সকলেই সেখানে প্রাণ হারায়। আমাদের বেশ কিছু সঙ্গী সেই যুদ্ধে শহীদ হন। আমরা সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর আমার এলাকায় রওনা হই। ১৬ ডিসেম্বরে বাড়ি আসি এবং কমান্ডার অধ্যাপক ইউনুস সাহেবের নিকট অস্ত্র জমা দেই।

আমাদের গ্রামের ও ইউনিয়নের শান্তি কমিটির ও রাজাকার সদস্যরা সবাই মোটামুটি শিক্ষিত ও স্বচ্ছল পরিবারের সদস্য ছিল। মনেহয় শুধু তারা নয়- এটা সমস্ত দেশেরই চিত্র। তারা খুবই ঠান্ডা মাথার লোক ছিলেন। তারা আমাদের উঠতে বসতে সালাম দিত। আমরা গর্ববোধ করতাম । ক্ষমা চাওয়ায় ক্ষমা করে দিলাম।

১৯৭২ সালে বিএসসি পরীক্ষা দিলাম। দ্বিতীয় শ্রেণী পেলাম। ডাক্তারি ভর্তি হতে পারলাম না। ১৯৭৩-৭৪ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হলাম।

১৯৭৪ সালের জুন মাসের দিকে বাড়িতে ঘুমিয়ে আছি। খুব সকালে আমার সবচেয়ে প্রিয় নানী এসে বলল টুকুকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে পাশ্বেই  মায়ের মামাতো ভাইদের বাড়ি গেলাম। দেখলাম বাড়ি থেকে প্রায় ৬শ’ গজ দুরে একটি বাগানে পুলিশ টুকু মামাকে তাল গাছে উঠতে বলছে।

টুকু মামা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মামা বলতে থাকলেন আমি তাল গাছে উঠতে পারি না। তারপর তারা মামাকে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে সংবাদদাতা ষড়যন্ত্রকারী পরিবারের এক সদস্যকে তাল গাছে উঠানো হল ও চারটি রাইফেলের গুলি নামানো হল। টুকু মামা এ কাজ করতে পারে না জানিয়ে প্রতিবাদ করলাম। কোন ফল হল না বরং আমাকেও বলা হল তুমিও থানায় চল।

আমাদের গ্রাম থেকে থানা ৭ কি.মি দ’রে পায়ে হেঁটে থানায় পৌঁছালাম। ওসি মজিবর রহমান নাটোরে অবস্থিত সেনা ক্যাম্পে ফোনে জানালেন টুকু তার ভাগ্নের আশ্রয়ে থাকে তাকেও থানায় এনেছি। তাকে পাঠাবো কিনা? জবাব নিশ্চয়ই সম্মতি সূচক ছিল।

আমাকে ও টুকু মামাকে আর্মি ক্যাম্পে দেওয়া হল। নাটোর পিটিআই স্কুলে সেনা ক্যাম্পটি ছিল। মাঠের উত্তর প্রান্তে দুইজন সেনা কর্মকর্তা থাকতেন। মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে থাকতেন সাধারণ সৈনিকরা।

সেনা কর্মকর্তাদের নিকট আমাদের দুইজনকে হাজির করা হল। তারা আমাদের আরও অস্ত্রের সন্ধান দিতে বললেন। আমরা বললাম আমাদের নিকট কোনও অস্ত্র নেই । এটা শুনে অফিসার সাধারণ সৈনিকদের হুকুম দিলেন মাঠের দক্ষিণ প্রান্তের আমগাছে টাঙ্গাও এবং তথ্য বের কর। আমাদের আম গাছের নিকট নেওয়া হচ্ছিল। পথিমধ্যে এক সেনা কর্মকর্তা আমাকে রেখে যাওয়ার জন্য বললেন।

আমাকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হল। কোন তথ্য না পেয়ে আমাকে একটি লিখিত বিবৃতি দিতে বলা হল। সহৃদয় এক লেফটেন্যান্ট পদের অর্ফিসার নির্ভয়ে আমাকে লিখিত জবানবন্দি দেওয়ার আশ্বাস দিলেন এবং বললেন আপনাকে আর কোনও নির্যাতন করা হবে না।

আমি নির্ভয়ে জবানবন্দি দিলাম যে, যুদ্ধ শেষে কমান্ডারের নিকট অস্ত্র জমা দিয়েছি। আমার জানামতে কারও নিকট কোনও অস্ত্র বর্তমানে নেই। পরে জানলাম টুকু মামাকেও গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের সাধারণ সেনা ক্যাম্পে থাকতে দেওয়া হল।

দেখলাম শুনাইখারার আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান চাচার ছেলে আফতাবকেও সেনা ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। আমাদের পরদিন জেলখানায় দেওয়া হল। সেখানে প্রবেশ করা মাত্র কয়েকজন আসামি আমাদের অত্যাচার করবে বলে টানতে লাগলো সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধেয় ফয়েজ চাচা (বর্তমান এমপি পলকের পিতা) এবং আমাদের গ্রামের মমতাজ (চুরির দায়ে জেলে) এসে আমাদের উদ্ধার করেন।

ফয়েজচাচা বাড়ি থেকে আনা খাবার আমাকে খাওয়াতেন। আমি ফয়েজ চাচা এবং মমতাজ মামার নিকট চিরকৃতজ্ঞ। আল্লাহ যেন তাদের বেহেস্ত নসিব করেন। পাঁচদিন জেলে থাকার পর নটোরের শ্রদ্ধেয় এমপি স্বর্গীয় শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর হস্তক্ষেপে আমি ছাড়া পাই।

আমাকে সেনা ক্যাম্পে দেওয়ার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নূরুল ইসলাম ঠান্ডু ভাই, মাজেদুর রহমান চাঁদ এবং আজম ভাইয়ের নেতৃত্বে মিছিল হয়।

১৯৭৪ সালের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু নাটোর উত্তরা গণভবনে শেখ রাসেলসহ আগমন করেন এবং ২/৩ দিন সেখানে অবস্থান করেন। আমাকে উত্তরা গণভবনে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শ্রদ্ধেয় শংকর গোবিন্দ চৌধুরী আমাকে বঙ্গবন্ধুর নিকট নিয়ে যান এবং আমাকে অন্যায়ভাবে অত্যাচারের বিবরণ বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে বুকে টেনে নিলেন এবং হুঙ্কার ছেড়ে তোফায়েল ভাইকে ব্যবস্থা নিতে বললেন। আমি বঙ্গবন্ধুর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতগুলো জারজ সন্তান আমাদের পিতৃ-মাতৃ-ভাই-বোনহারা করল। আমি এবং সিংড়ার অপর একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন প্রাণভয়ে একসঙ্গে এলাকা ত্যাগ করলাম এবং প্রায় তিন মাস বিভিন্নস্থানে কাটানোর পর এলাকায় ফিরে আসি।

ইতোমধ্যে জানতে পারি- বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের হালের গরু নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নেমে আসে রাজাকারদের হামলা ও নির্যাতন। রাজাকাররা সব মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকাত হিসেবে অপপ্রচার করতে থাকল।

তাদের অপপ্রচারে এই বিষয়টি দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকল। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিলে বা সনদ দাখিল করা হলে চাকুরি হত না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে ভয় পেতাম। আমার জানামতে কোনও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার শাসনামলে কোনই চাকরি পায়নি। কারণ জিয়া জানতো কোনও সাধারণ লোক তার কথায় মুক্তিযুদ্ধ করেনি।
 
অবশ্য জেনারেল এরশাদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকুরির ব্যবস্থা করলেন এবং আমরা সামরিক বাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল স্বাক্ষরিত সনদ দাখিল করে চাকরির আবেদন করলাম।

১৯৭৮ সালের শেষের দিকে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে সুপারভাইজার পদে চাকরি পাই। পরে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পাই।

আমার ১৯৮৪ সালে জাকির খান চৌধুরী (হারুন) চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ও অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক যৌথ স্বাক্ষরিত সনদ রয়েছে। ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত আমার নাম আছে। জাতীয় তালিকা বই নং নাটোর-৮৮এর ৪৯ নং ক্রমিকেও আমার নাম আছে। অথচ শুধুমাত্র চাকরির সুবাদে এলাকা থেকে তিনশ কি.মি দূরে অবস্থান করায় যোগাযোগ না করার কারণে আমার নাম লাল মুক্তি বার্তায় উঠানো হয়নি। যে কারণে আমার নাম গেজেটভুক্ত হয়নি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেছেন- চাকরির সময় যারা মুক্তিযোদ্ধা সনদ জমা দিয়ে চাকরি নিয়েছেন শুধুমাত্র তাদেরই চাকরি দুই বছর বৃদ্ধি করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যাকে বলব- ১৯৭৫ পরবর্তী জিয়ার শাসনামলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর যে অত্যাচার-অবিচার করা হয়েছে তা আমাদের মত ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানুন।

কারণ জিয়ার শাসনামলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে সাহস পায়নি চাকরি পাওয়াতো দূরের কথা। এমনকি মুক্তিযোদ্ধারা ভাল পরিবারে বিয়েও করতে পারেনি।

আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আমার নাম গেজেটভুক্তকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে জিয়ার আমলের মুক্তিযোদ্ধা সনদ জমা না দিয়ে চাকরি নিয়েছেন তাদের পরবর্তীকালে প্রাপ্ত সনদ আমলে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স সীমা ৬৪ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা হোক।

আব্দুল ওদুদ চৌধুরী,এ জি এম (জি.এস),জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

বাংলাদেশ সময় : ১৫০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad