ঢাকা, রবিবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ জুন ২০২৪, ১৫ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

টাকায় এখন আওয়ামী সার্টিফিকেট মেলে!

আবিদ রহমান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১১
টাকায় এখন আওয়ামী সার্টিফিকেট মেলে!

রাজা-বাদশাদের রাজত্বে টাকা দিয়ে বাঘের দুধ-চোখ কেনা যেতো। এখন রাজা-বাদশাদের চেয়েও ধনী কোটিপতিরা আছেন অগুনতি।

 

বাংলাদেশের নব্য কোটি পতিদের ধন-সম্পদের পরিমান দেখলে-জানলে পুরোনো জমানার মৃত রাজা-বাদশারা কবরে পুনরায় হার্টফেল করতেন। এখন রাজা-বাদশাদের রাজত্ব নেই। এখন গণতান্ত্রিক পারিবারিক রাজত্ব। এখন লীগ-দলের রাজত্ব। আগে এক বিত্তশালীর একক রাজত্ব ছিলো। এখন হাজার বিত্তশালীর রাজনৈতিক প্রতিপত্তি। এখন টাকা ঢাললে বাঘের চোখ-দুধ হয়তো মেলেনা কিন্তু মেলে আইনের উর্ধ্বে থাকার, বিনিয়োগের লক্ষ-কোটিগুন অনায়াস কামানোর অফুরান সুযোগ।

আলোচিত জয়নাল হাজারীর ফেনীর নিয়ন্ত্রণ এখন আর তাঁর হাতে নেই। জ্ঞাতি ভাই নিজাম হাজারী ছিনিয়ে নিয়েছেন সেই সাম্রাজ্য । যুবলীগের এই দাপুটে নেতা জয়নালের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ফেনীবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এখন ফেনীতে টেন্ডার থেকে শুরু করে টেম্পোর চাঁদাবাজি সবই নিজাম হাজারীর নিয়ন্ত্রণে।

বাহাত্তর-তিয়াত্তরে জেলখাটা আমাদের এক পরিচিত রাজাকার পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ভাগ্য পরিবর্তনে ঠিকেদারীতে নামেন। খুব ভালো সুবিধা ক’রতে না-পারলেও খুব খারাপও করেন নি। নিজাম হাজারীর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জমানায় বিশ পার্সেন্ট নজরাণা গুনে এখন সবচেয়ে দাপুটে কন্ট্রাকটর এই জেলখাটা রাজকার। এবছর প্রায় সাত-আটকোটি টাকার কাজ পেয়েছেন।

টাকায় অন্য কিছু না-মিললেও এখন আওয়ামী সার্টিফিকেট মেলে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীরা সন্তুষ্ট হলে ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ রাজাকারের লেবেলটি মুহূর্তে উধাও। আর আওয়ামীরা খেপলে মুক্তিযোদ্ধাদের শরীরেও রাজাকারের দূর্গন্ধ ছড়ায়। আল বদর নামে পরিচতি মেলে। আওয়ামী নীতি নির্ধারকদের অধিকাংশই এখন রাজাকার-শান্তি কমিটির বৈবাহিক সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজন।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধীদের বিচার ও শাস্তির ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামীরা গদিনশীন হয়েছেন। তিন বছর কেটে গেলো। বহু ঢাকঢোল পেটানো তদন্ত, কমিটির পর কমিটি আর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল হলো। বিচারের কাজকর্ম কিন্তু সেই তিমিরেই।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সংজ্ঞাট কী? মানদন্ড? বিচারের প্রক্রিয়া একেক দেশে একেক রকমের। কোথাও মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ। কোথাও শিরশ্ছেদ বৈধ। কোথাও ’জাস্টিস ডিলেইড’ হয়না। কোথাও পিতার মামলা পুত্র লড়ে। কাকে সন্তুষ্ট করার জন্যে আওয়ামীরা এই ’প্রহসনে’ নেমেছেন? বিচারক-অভিযুক্ত-বাদী-স্বাক্ষী-উকিল-ব্যারিস্টার সব ই দেশি কেবল আদালত বা ট্রাইব্যুনালটি আন্তর্জাতিক ! আন্তর্জাতিক করার যদি এতোই খায়েস থাকে তাহলে বিদেশ থেকে বিচারক আমদানি করা হোক, যেভাবে অভিযুক্তরা বিদেশ থেকে আইনজীবী ভাড়ায় আনতে চেয়েছে।

টাকার বিনিময়ে আওয়ামীদের গণতান্ত্রিক বিবেক কেনা যায় অনায়াসে। ’জিয়া আমার বাপ, তারেক আমার ভাই’ সঙ্গীতের গায়িকারা আওয়ামী সাংসদ বনে। সুবিধাবাদীরা রাজনৈতিক স্নেহধন্যরা ভিন রাজনীতির কৃতিমান হলেও একই রাজনৈতিক ক্লাসে চড়তে পারেন। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি হয়। বিজয়ের মাসেই বিদেশী সংগীত শিল্পী ও তারকাদের আসতে হয়  ভিনদেশী সংগীত ও সংস্কৃতির পসরা নিয়ে। নিশ্চিত সিরিজ পরাজয় জেনেও হানাদার পাকিস্তানের ক্রিকেট দল এনে বাংলাদেশকে পরাজিত করার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়া হয়ম, কে সুপিরিয়্যর। ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের পোস্টারে কেবল পাকিদের ছবি! অথচ জাতীয়তাবাদীদের গদ্দীনশীন জমানায় ‘বাংগালী জাতীয়তাবাদীর’ কোনো ভাত ছিলোনা। থাকেও না। থাকবেও না।
 
বহু বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে মন্ত্রীরা আগাম জানান দিয়েছিলেন, স্বাধীনতার, বিজয়ের চল্লিশ বছর পূর্তির সেরা উপহার হবে নরাধম গোলাম আযমের গ্রেফতার।
 
সরকারের আন্তরিকতায়- সততায় সন্দিহান আমাদের সন্দেহ অমূলক ছিলোনা প্রমাণে গোলাম আযম দিব্যি টিকে যায় এই ষোল ডিসেম্বরে। সিদ্ধান্তগুলো কারা নেয়। কত টাকা নগদ হলে সিদ্ধান্তগুলো আওয়ামী লীগ-দেশ ও জাতির বিপক্ষে যায়?
স্বঘোষিত আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে ঝাঁকজমক পূর্ণ তদন্তের পরও প্রশ্নবিদ্ধ বাদী পেশ করে মামলাগুলোকে খেলো বানানোর পেছনে কাদের অসততা থাকে? মামলার অগ্রগতি জানান দেয়, স্বঘোষিত আল্লামা দু¦দ্ধ পোষ্য শিশু। কিন্তু আদৌ কী ব্যাপারটা এরকম? সরকারের নীতি-নির্ধারকেরা কেন কোন প্রশ্নে আপোষহীন ও সৎ হতে পারেন না?

স্বঘোষিত মুফতিরা যখন তখন যাকে-তাকে ’মুরতাদ’ ফতোয়ায় ঘায়েল করে। দুঃসাহস দেখে মালুম হয় মুফতি আমিনীরাই সরকার। তাদের তমুদ্দনী হুংকারের সামনে আওয়ামী বাঘেরা মামু বিড়ালের মতো ভেজা-চুপচাপ। শত হোক সাবেক রাজনৈতিক জোট এই মুফতিরা !
আওয়ামীরা এতো সস্তায় বিক্রি হয় জেনে যুদ্ধাপরাধীরা নিশ্চয় বগল বাজায়। মীর কাশেমেরা সুখের নিদ্রায় মখমলের বিছানায় গড়ান দেন। জামায়াতীরা জানেন, বাঘের চোখ-দুধ হয়তো টাকায় দুস্প্রাপ্য কিন্তু আওয়ামী সমর্থন নয়। সেকারনেই জামায়াতীরা ধনে-জনে বাড়ে। সংগঠিত হয় আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগকে ধ্বংসে।
 
আওয়ামী লীগ কী জানেন, টাকায় আওয়ামী বিবেক কেনা গেলেও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ভোট সব সময় কেনা যায়না।

ইমেলঃ [email protected]

বাংলাদেশ সময় ১২৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।