ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

করোনা মোকাবিলা: ইতিহাস, বিজ্ঞান ও স্থানিক অভিজ্ঞতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২০
করোনা মোকাবিলা: ইতিহাস, বিজ্ঞান ও স্থানিক অভিজ্ঞতা

এক.
দীর্ঘকাল বেকার হয়ে থাকা বিমানগুলোর মতই যেন জিরিয়ে নিচ্ছে গোটা পৃথিবী। কিন্তু রোগ শোক ও মৃত্যু থেমে নেই, টালমাটাল ইউরোপ ও আমেরিকা। করোনা ভাইরাস সবাইকে এক করেছে- গ্লোবাল নর্থ ইজ দ্য নিউ সাউথ। আমরা দেখতে পাচ্ছি হোমোজেনাস অর্থমান ডলারে কিছুই ঠিক হচ্ছে না, মূলত ঠিক করার দরকার ছিল বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কাঠামোর একইরকম মান। আমাদের মনে প্রশ্ন, গরিব-নোংরা ‘অপর’ লোকেরা আজ বুঝছে না কোয়ারেন্টিন মানে, নাকি বিজ্ঞানী ও গবেষকরাই কখনো বুঝতে চাননি মানুষের ভাষা?

আমরা হতবাক- বুদ্ধির কৃত্রিমতা কিংবা পারমাণবিক অস্ত্রের বড়াই কাজে আসছে না, দরকার পড়ছে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ‘ছোটলোকি’ জ্ঞান। ওয়ান পার্সেন্টের হাতে ট্রিলিয়ন ডলার আর মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ পুষ্টিহীন, তাদের পানি নাই, টয়লেট নাই, তারা হাত ধুবে কেমন করে? পেটেই তো খাবার নেই- কী অদ্ভুত এক বিশ্বব্যবস্থা।

কিন্তু সভ্যতার নির্মাণে এই বৈষম্য এক দিনে আসেনি, এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস।  

আজকের এই নয়া-ঔপনিবেশিক পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা হয়ে উঠতে পারে অতীতের যে কোনো সময়ের সাপেক্ষে অধিকতর জটিল। তাই উপনিবেশবাদ আর ক্ষমতার সম্পর্ক কেমন করে প্রভাবিত করেছে এসব প্যান্ডেমিক রোগের প্রসার আর রোগ-পরবর্তী পৃথিবীর ইতিহাসকে- তা নিয়ে আলাপ করাটা এখন ভীষণ জরুরি। ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর আর গুটিবসন্তসহ আরও যেসব প্যান্ডেমিক জন্ম দিয়েছিল পৃথিবীর গভীর ও দীর্ঘ অসুখ- তাদের মধ্যে সবচেয়ে ডাকসাইটে হল কলেরা। পৃথিবীব্যাপী কলেরা একাই সময়ে সময়ে সাতটি প্যান্ডেমিকের জন্ম দেয়, এদের প্রথমটিই ‘দ্য গ্রেট বেঙ্গল কলেরা’। গঙ্গা বেসিনের দক্ষিণে কলেরার প্রকোপ ছিল বহু আগ থেকেই। খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে তখন প্রায় সবাই, তাদেরই কারো দ্বারা জল হয় ঘোলা। উপর থেকে নিচের দিকে যত নেমে আসে পানির দূষণ-স্রোত, তত বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। হাজার বছর ধরে আমাদের গ্রামগুলোতে এই জীবাণুরূপী ‘ওলাবিবির’ খোঁজ পাওয়া যায় গল্প-উপন্যাসেও।

কিন্তু উপমহাদেশ ছাড়িয়ে বিদেশমুখী যাত্রা শুরু করলেই আপত্তি শুরু হয়। বেঙ্গল কলেরা দিয়ে শুরু হওয়া প্যান্ডেমিক পুরো উনিশ শতকজুড়েই ফিরে ফিরে আঘাত করতে থাকে ইউরোপকে। ‘বর্বর ও অসভ্য’ এ রোগে চূর্ণবিচূর্ণ হচ্ছিল তখন ইউরোপের আভিজাত্য। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর অত্যন্ত নিম্ন জীবনমান নিয়ে বেঁচে থাকা কারখানার শ্রমিকরা সহজেই হয় কলেরার শিকার। পৃথিবীর অন্য যে কোনো প্রান্তের মতই ধনী লোকেরা তখন তাদের ওপর দোষ চাপাতে থাকে এবং শুরু হয় বঞ্চনা, অত্যাচার আর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বাংলার কলেরা মৃত্যু আর ধ্বংসের পর সমৃদ্ধিও এনেছিল ইউরোপে। ধীরে ধীরে সেখানে তৈরি হয় নতুন এক জ্ঞানের শাখা- মডার্ন পাবলিক হেলথ, স্যানিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং আসে তারই সহায়ক হিসেবে। নতুন নীতিমালা তৈরি হয়, প্রণয়ন হয় আইন। এগুলোর সবগুলোই যে কলেরা ছড়িয়ে পড়বার কারণেই হয়েছিল তা নয়। কিন্তু তার প্রভাব যে ছিল তা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। সেই দেশগুলো সফল হলেও ‘পিছিয়ে পড়া’ এই উপমহাদেশ এখনও লড়াই করে যাচ্ছে কলেরা ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের সঙ্গে। প্রায় দু’শ বছর পরে এসে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ যখন ওপেন ডেফিকেশন ফ্রি হয়, এমনকি তখনও ভারতে ৪০ ভাগ মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করছিল। তাই মনে প্রশ্ন জাগে, করোনা ভাইরাস পশ্চিমের দেশগুলো থেকে এক সময় দূর হলেও পুরো বিশ্ব থেকে দূর হবে তো? নাকি এর চিহ্ন বয়ে বেড়াতে হবে গরিব দেশগুলোকে বহুকাল? 

দুই.
অদ্ভুত বিষয় এই যে আজকের দিনে সামান্য হাত ধোয়ার বার্তাই জরুরি হয়ে পড়ছে মানবজাতিকে বাঁচাতে। সাদামাটা অথচ জীবনরক্ষায় ভীষণ কার্যকর এই হাত ধোয়াকে ‘বিজ্ঞান’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে কিন্তু পোড়াতে হয়েছিল অনেক কাঠখড়। জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সবচেয়ে সহজ এ উপায়টি যিনি আবিস্কার করেছিলেন তিনি ইগনাজ সেমেলওয়েইজ। হাংগেরীয়ান এই বিজ্ঞানী ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি থেকে মেডিসিনে ডিগ্রি নেন এবং পরবর্তীতে হয়ে উঠেন ধাত্রীবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ। ইউরোপজুড়ে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে চিকিৎসকরা তখন উদগ্রীব ছিলেন। ১৮৪৭ সালের দিকে এই বিজ্ঞানী সিদ্ধান্তে আসলেন যে অন্য মৃতদেহ স্পর্শ করে আসা চিকিৎসকদের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ মায়েরা প্রসবপরবর্তী জ্বরে ভুগে মারা যান। সাথে সাথে তিনি ক্লিনিকে নিয়ম করেন যে পরপর দু’টি রোগী দেখার মাঝে ডাক্তারদের ক্লোরিনেটেড লাইম (ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট) দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। এই ব্লিচ তিনি ব্যবহার করেছিলেন অনেকটা অনুমানের ভিত্তিতেই। কারণ এটির মাধ্যমেই তিনি মৃত-জৈব দুর্গন্ধটি হাত থেকে পুরোপুরি দূর করতে পেরেছিলেন। চিকিৎসকদের হাত ধোয়ার অভ্যাস এক বিস্ময়কর ফলাফল বয়ে নিয়ে এল ভিয়েনার ক্লিনিকে। খুব দ্রুত ক্লিনিকটিতে মৃত্যুর হার নেমে আসে প্রায় শূন্যের কোটায়।  

তৎকালীন চিকিৎসক সমাজ সেমেলওয়েইজের প্রস্তাবনার তীব্র বিরোধিতা করেন। শুধু পরিচ্ছন্নতার অভাবে চাইল্ডবেডে মায়েরা মারা যাচ্ছেন একথা তারা উড়িয়েই দেননি বরং তারা সেমেলওয়েইজকে ব্যঙ্গও করতে শুরু করেন। এর বিপরীতে সেমেলওয়েইজও ইউরোপের মেডিক্যাল এস্টাবলিশমেন্টকে তীব্রভাবে আক্রমণ করতে থাকেন। সেমেলওয়েইজের লেখা একমাত্র বইটিকেও ক্রিটিকরা ‘থিওলজির’ সাথে তুলনা করেন যা ‘বিজ্ঞান হয়ে উঠতে পারেনি’। এক সময় ক্রমাগত ‘বিজ্ঞানযুদ্ধে’ ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। ব্যবহার আর কাজকর্ম ক্রমেই অসংলগ্ন হয়ে পড়লে তার জায়গা হয় ভিয়েনার এক পাগলাগারদে। মানুষকে হাত ধোয়া শিখাতে চেয়েছিলেন সেমেলওয়েইজ, কিন্ত শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হতাশাগ্রস্ত হয়ে এক অন্ধকার ঘরে গার্ডদের হাতে মার খেয়ে হাত পা বাঁধা অবস্থায় এক করুণ মৃত্যু হয় তার।

সেমেলওয়েইজের গল্প আমাদের বিভিন্নভাবে ধাক্কা দেয়। তৈরি করে ফিলোসফি অব নলেজের নতুন অধ্যায়। ইমপিরিকাল নলেজের মূল্য তৈরিতেও ইতিহাসে এর অবদান আছে। জ্ঞানের নির্মাণ এবং স্বীকৃতির প্রচলিত বয়ানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে এই গল্প। ইঙ্গিত দেয় জ্ঞানবিজ্ঞান জগতে লুকিয়ে থাকা এলিটিজমের। দীর্ঘকাল পরে হলেও হাত ধোয়ার বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখন পাবলিক হেলথের গুরুত্বপূর্ণ হাইজিন কম্পোনেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ওয়াটার এবং স্যানিটেশনের সঙ্গে হাইজিন মিলিতভাবে ‘ওয়াশ’ ইন্টারভেনশন হিসেবে পঠিত ও চর্চিত হচ্ছে। করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য এখন যেমন বারবার হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে, তেমনি এটিকে সব সময়ের জন্যই একটি স্বভাবে পরিণত করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত, বিশেষত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে দরিদ্র মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।  

গবেষণা বলছে, কেবল সঠিক নিয়মে হাত ধুয়ে ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুর হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। আমরা আরও বুঝতে পারি, ক্ষমতা কাঠামোতে দুর্বল দেশগুলোর বিজ্ঞানীদের পক্ষে নতুন বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন কত কঠিন। কিন্তু সত্য এই যে, স্বল্পমূল্যে ও সহজে জীবন বাঁচানো খাবার স্যালাইন তৈরি হয়েছিল আমাদের দেশ থেকেই।  

তিন.
পশ্চিমের ‘সোশ্যাল ডিস্টেন্স’ কিংবা ‘স্টে অ্যাট হোম’ প্রক্রিয়া আমাদের মত দরিদ্র দেশগুলোতে কতটুকু কার্যকর সেসব নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা কথা হচ্ছে। কিন্তু মূলত অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছে। এমনকি বিক্ষোভও করছে। বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান সবখানেই মানুষের ইর‍্যাশনালিটির প্রমাণ মেলে। সুতরাং করোনা মোকাবিলার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ার কারণ কেবল বহুল প্রচারিত দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের অশিক্ষা ও কুসংস্কার নয়। বরং মডার্ন ইকনোমিকস মানুষকে কমই র‌্যাশনাল বিয়িং হিসেবে দেখে, মানুষের ইর‌্যাশনাল কাজ কর্ম নিয়ে উল্টো বিস্তর গবেষণা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। নোবেল লরিয়েট ড্যানিয়েল কায়নেম্যান তার সাইকোলজি অব জাজমেন্ট অ্যান্ড ডিসিশন মেকিং সংক্রান্ত অনেক কাজের জন্য বিখ্যাত। তার বিভিন্ন ইমপিরিকাল ফাইন্ডিংয়ের মধ্যে একটা হচ্ছে লস এভার্সন থিওরি- সহজ ভাষায় এটি হচ্ছে, লস এভয়েড করাকে লাভের চেয়ে বেশি প্রেফার করা। যেমন- ৫০০ টাকা পাওয়ার চেয়ে ৫০০ টাকা না হারানোকে মানুষ সুবিধাজনক মনে করে। টয়লেট ব্যবহার করলে আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এভাবে না বলে খোলা জায়গায় পায়খানা করলে ডায়রিয়া বেশি হবে, ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, পয়সা খরচ বেশি হবে- এভাবে বলার ফলাফল বাংলাদেশেই প্রমাণিত হয়েছে। কমিউনিটি লেড টোটাল স্যানিটেশন (সিএলটিএস) নামক মুভমেন্ট সফল হওয়ার পেছনে এসব বড় কারণ হিসেবে কাজ করেছিল। একইভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বাসায় থাকলে রোগ থেকে বাঁচবেন, এটা না বলে বাইরে বের হলে মারা যাওয়ার আশঙ্কা বাড়বে বলে মেসেজিং করা যেতে পারে।  

লকডাউনের মধ্যে একজন ধর্মীয় নেতার জানাজায় লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ কী করে হলো– সমবেত জনতার সেই ইর‌্যাশনাল বিহেভিয়ারের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ প্রয়োজন। চিন্তায় অপটিমিজম বায়াসের কারণে মানুষ মনে করে তার জীবনে নেগেটিভ ঘটনা ঘটবার সম্ভাবনা কম। জমায়েত লোকেরাও হয়তো মনে করছে তারা করোনায় আক্রান্ত হবেন না। কিন্তু কেন তাদের এটি মনে হলো সেটি খুঁজে বের করা দরকার। হতে পারে তাদের রিস্ক মেজারমেন্টে ভুল ছিল। যেহেতু মানুষ বুঝতে পারছে না তার আক্রান্ত হওয়ার প্রকৃত সম্ভাবনা কত, তাই তারা কম্পারেটিভ মেজারমেন্ট করছে। ‘অন্যদের’ তুলনায় তার আক্রান্ত হওয়ার চান্স কম কারণ সে ভালো বা ধার্মিক মানুষ।  

নিজে নিজে দাঁড় করানো স্টেরিওটাইপ চিন্তার কারণেও এমন বায়াস আসতে পারে। এই যে অনেক মানুষ ভাবছেন ইহুদি নাসারাদের করোনা ভাইরাস বেশি হয়– এখানে মানুষ নিজেকে কল্পিত ‘খারাপ’ মানুষের সাথে তুলনা করছে। বলাবাহুল্য এই চিন্তা অযৌক্তিক। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, নিজেকে ব্যক্তি হিসেবে চিন্তা করা আর অন্যদের গোষ্ঠী। নিজের ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য থাকায় নিজেকে ব্যক্তি হিসেবে ভাবা সহজ হয়। এজন্য যারা হিন্দি সিরিয়াল দেখে তাদের করোনা ভাইরাস হবে এমন তথ্যও মানুষ মেনে নিচ্ছে। এখানে এমন একটা গ্রুপের কথা ভাবা হচ্ছে- তারা একজন না বরং একদল মানুষ এবং তারা যেন সারা দিন কেবল হিন্দি সিরিয়ালই দেখে।  

আরেকটা কারণ হতে পারে নিজেরা নিজেদের বড় করে দেখা। বাংলাদেশে করোনা আসবে না, কারণ এখানে অনেক ধর্মীয় আলোচনা হয়। এখানে বাংলাদেশিরা নিজেদের ওপর ডিজায়ারড এন্ড রেজাল্ট আরোপ করছেন। মানুষ মনে করে সে ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু অন্যরা পারে না। কারণ অন্যদের সে ব্যক্তি মানুষ ভাবছে না, ‘অন্যরা’ হিসেবে দেখছে। এভাবে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারণে অপটিমিজম বায়াস তৈরি হতে পারে।

র‌্যাশনালভাবে গরিব মানুষদের খাবার বা অর্থ সাহায্য দিয়ে লকডাউনকে রিওয়ার্ডিং করার পাশাপাশি মানুষের ইর‌্যাশনাল বিহেভিয়ারগুলি নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। যদিও সেটি আরো জটিল। এজন্যে মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে হবে এবং বাসায় থাকার প্রতি বরং এক ধরনের অপটিমিজম বায়াস তৈরি করা যেতে পারে। গ্রামে গ্রামে সিএলটিএস সফল হলে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হত— ‘এই গ্রামের কেউ খোলা মাঠে পায়খানা করে না’। একইভাবে এইরকম মেসেজ বারবার দেওয়া যেতে পারে– ‘আমি বাসায় থাকি, আমার করোনা হবে না। এই লকডাউন শেষে আমরা নতুন জীবন পাব’।  

ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের মোকাবিলায় সবার জন্য স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে আমাদের তৈরি এই সামাজিক প্রক্রিয়াটি সমাদৃত হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। তাই পশ্চিমের সরাসরি অনুকরণ নয়, বরং তার সাথে নিজেদের জ্ঞান ও পদ্ধতিগুলোর সংমিশ্রণে করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করা আমাদের জন্য উচিত হবে।

লেখক: ওয়াশ প্রফেশনাল, ওয়াটারএইডে কর্মরত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।