করোনাভাইরাস কি বাড়বে আগামী শীতে? বা সেকেন্ড ওয়েব কি আসছে? অতীত ইতিহাস আমাদের সতর্ক থাকারই হুঁশিয়ারি দেয়। মধ্যযুগে দেখা গেছে, মহামারীর প্রকোপ বারবার ফিরে এসেছে।
সাম্প্রতিককালে সার্স ও মার্স-এর মতো ভয়াবহ ভাইরাসের দ্বিতীয় দফা প্রাদুর্ভাব এড়ানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সোয়াইন ফ্লু-এর মতো অনন্য বড় ফ্লু মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। তাহলে এবার পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে? দুটো ভাইরাস তো কখনো একরকম হয় না। কিন্তু আমরা জানি আক্রান্ত ব্যক্তি যখন অন্যের সংস্পর্শে আসে তখন ছোঁয়াচে রোগ ছড়ায়।
যদি ভাইরাস আক্রান্ত একজন গড়ে একজনের বেশি লোককে সংক্রমিত করে তাহলে প্রাদুর্ভাব ছড়াতেই থাকবে। এটাকেই বলা হয় রিপ্রোডাক্টিভ বা আর (R) সংখ্যা। আর এই সংখ্যা একজন বা তার নিচে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সামাজিক দূরত্ব মানা বা যোগসূত্র খোঁজার মতো পদক্ষেপ আগামীতে আমাদের জীবনের অংশ হতে যাচ্ছে।
আরো জানা দরকার, কোভিড-১৯ যাদের হয়েছে তাদের দেহে ইমিউনিটি কতদিন স্থায়ী হয়। এছাড়াও আমাদের জানা দরকার বিভিন্ন মৌসুমে এই ভাইরাসের বিস্তারে রকমফের হয় কি না? বিশেষজ্ঞরা দেখছেন, এই ভাইরাস আচরণ বদলে আরো বেশি বা মারাত্মক হয়ে উঠেছে কি না?
করোনার নতুনভাবে সংক্রমণ শীতকালে হবে কি না এটাও চিন্তার বিষয় আমাদের সকলের। শীতকাল আসছে করোনা সংক্রমণ বাড়বে এমন ধারণ চলছে। আবার কেউ বলছে সেকেন্ড ওয়েভ- এখন সচেতন মানুষ বলতেই একটাই শব্দ করোনার সেকেন্ড ওয়েব কি হচ্ছে? আমরা এমন কেন ভাবছি তাও চিন্তা করতে হবে।
আমরা সাধারণভাবেই জানি, যে কোনও ধরনের ভাইরাল অসুখই শীতে বাড়ে। কোভিড-১৯ ও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই সেকেন্ড ওয়েভ-এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কম তাপমাত্রায় ভাইরাস প্রভাব বিস্তার করতে পারে বেশি। আর পরিবেশে আর্দ্রতা কম থাকায়, কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে ভাইরাস অনেক বেশি দূরত্ব অবধি ছড়াতে পারে। তাই এখন যদি ১ মিটারের দূরত্ব নিরাপদ মনে হয়, তখন আর তা হবে না। আর শীতকালে ঘন ঘন হাত ধোওয়া বা বাইরে থেকে এসে স্নান করতেও কষ্ট। শীতকালে আমরা বাড়ির জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখতে পছন্দ করি। একঘরে অনেকে থাকি, যাতে ঠাণ্ডা কম লাগে। এসবগুলোই পরিবারের অন্যদের সংক্রামিত করতে পারে। শীতকালে এমনিতেই সর্দি, কাশি, ফ্লু খুবই সাধারণ বিষয়। এগুলোর সঙ্গে করোনা ভাইরাসের লক্ষণের সাদৃশ্য রয়েছে। এরসঙ্গে যোগ করুন দূষণ বৃদ্ধিকে। হাঁপানি, সিওপিডি বা অ্যাঞ্জাইনা বা হার্টের ব্যথা শীতে বাড়ে। ফলে এঁদের যদি কোভিড হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।
কিন্তু যথারীতি স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক ব্যবহার করি তাহলে করোনার শীতকালভীতি থেকে আমরা সহজেই রেহাই পাব। তবে আশা করা যায় আগামী কয়েক মাসে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমবে। কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ঢেউ আসবে কিনা নিশ্চিত নয়? সফল ভ্যাকসিনের আবিষ্কার পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে কিন্তু সেটা না হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ঢিলে দিলে ভাইরাস দ্রুত ও নতুন করে ছড়াতে পারে।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কনসালট্যান্ট-অক্সফাম বাংলাদেশ, প্রধান উদ্যোক্তা ও নির্বাহী-চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল।