ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রাজনৈতিক চর্চায় ফিরে আসুন

কামাল শাহরিয়ার, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১২
রাজনৈতিক চর্চায় ফিরে আসুন

দেশের বর্তমান রাজনীতির কথা উঠলেই গা শির শির করে ওঠে। ভয়ে আঁতকে উঠি।

বর্তমানে দেশের রাজনীতির অবস্থা দেখে শ্রদ্ধাবোধ উবে যাচ্ছে।  

তাহলে আমাদের কি শেখার আর কিছু নেই। আর শিখলে তা হবে দেশের জন্য মহা ক্ষতিকর?  দেশের বর্তমান রাজনীতির চর্চা আমাদের পরবর্তী সময় পর্যন্ত থাকলে- আমি অন্তত নিশ্চিত করে বলতে পারি দেশ মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।

তবে বর্তমান সময়ের রাজনীতিকরা যদি তাদের রাজনৈতিক (নীতিগত) আদর্শ কিংবা কার্যক্রম পরিচালন করেন। তাহলে সে রাজনৈতিক চর্চা আমাদের সময়ে দেশের ভালো কাজে লাগবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তো সেখানেই!

যারা আমাদের রাজনীতি শেখাবেন তাদের আদর্শগত রাজনীতি কোন পথে চলছে তা বোঝার সামর্থ আমার নেই। কিন্তু কিছুটা বুঝতে পারছি। আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতিকদের (বিশেষ করে বড় দুই দল) গণতন্ত্র এবং মূল ধারার রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটাচ্ছে।

আবার তাদের বিচ্ছুরণটাও বেশ মজার। দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে দুই দিকে বিচরণ। এটা দেশের জন্য যে কতো অমঙ্গল তা কি তারা বুঝতে পারছে না?

বাংলাদেশের মানুষতো এ রকম নোংরা রাজনীতি চায়নি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল কি এই নোংরা, প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি জন্ম দেয়ার জন্য?


নিশ্চয় না। কিন্তু আমাদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল সেটা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। কেউ কেউ আবার এমন জায়গায় অবস্থান নিচ্ছেন যা দেশের স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানে চলে গেছে।

যাক, আমি এই দিকে যেতে চাইছি না। আমার মূল লেখার টার্গেটটা হলো- দেশের বর্তমান রাজনীতিতে প্রধান দুই দলের সংঘাতময় অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমি দুই দলের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।

বিশেষ করে বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-জামায়াত জোট দ্বন্দ্ব সঙ্কুল অবস্থা সৃষ্টি করে দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তবে একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখা যাচ্ছে- বিরোধী জোটের বোধহয় প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি যেকোনো কাজের বিরোধিতা করা।

তা না হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কেন বিএনপি জামায়াতের পক্ষ নিয়ে কাজ করবে? কারণ, বিএনপিতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। যাঁরা যুদ্ধাপরাধের বিচার চান।

বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেই তো মুক্তিযুদ্ধে একটি সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। তাই ভাবতে অবাক লাগে  কী করে খালেদা জিয়া জামায়াতের সুরে সুর মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চাইছেন!  

এ নিয়ে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, এখন জামায়াতীদের মদতে বিএনপি চলছে। তাদের উক্তি একটু খোলাসা করে বললে বলতে হয়- বিএনপিকে দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে জামায়াত যুদ্ধাপরাধের বিষয়টিকে পাশ কাটাতে চাইছে।

অন্তত সময়ক্ষেপণ হোক- এটা জামায়াতের লক্ষ্য। তাদের ধারণা, তাতে এ সরকার হয়তো বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করে যেতে পারবে না। আগামী মেয়াদে অন্য কেউ এলে তারা বেঁচে যেতে পারে।

তাই কথায় কথায় অনৈতিক কর্মসূচিও দিচ্ছে দল দু’টি (বিএনপি ও জামায়াত)। আর সরকারি দলও মনে হয় এখন রাজনৈতিক সহনশীলতা রক্ষা করতে চাইছে না। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে তারাও।

আগামী ১২ মার্চ ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। এর আগে থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি (১২ মার্চ ব্যতিত) ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। হয়ত আমাদের ভাগ্যটা ভালো একই দিনে কর্মসূচি দেয়নি দুই দল।

তাহলে কি যে মহাবিপদে পড়ত নগরবাসীসহ দেশবাসী। এটা থেকে কিছুটা রক্ষা পেলেও রাজনীতির মাঠ যে গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে তাতে বলাই যায় কখন যে কি ঘটে যায়। তারপর আবার এ সবের ফাঁকে ফাঁকে শিবিরের তাণ্ডব যেন দেশের সর্বস্তরের মানুষের চোখের ঘুম হারাম করে দেয়।

আমি মনে করি এ সংঘাত করে কি লাভ। গণতান্ত্রিক দেশে একটা দল তাদের কর্মসূচি দিয়েছে এটা তাদের অধিকার। সেখানে অন্যপক্ষ কিংবা সরকারের উচিত যথাযথ সহযোগিতা করা।

তবে সেখানে কথা থাকবে শিবির কিংবা দলীয়ভাবে ভাঙচুর বা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করলে তা প্রতিহত করার ব্যবস্থা রাখা। সেটা অবশ্যই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই সম্ভব।

তাদের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা না রাখলেই ভালো হয়। আগামী ১২ মার্চের কর্মসূচি নিয়ে নগরবাসীর ঘুম চলে গেছে সেটা নিশ্চই বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়ত অনেকেই বলবেন ঐ দিনে তো আর আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দেয়নি। কিন্তু কথা হলো দিতে কতক্ষণ।

কেননা এর আগে বিএনপির গণমিছিল সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একই দিনে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণার পর সহিংসতার আশঙ্কায় রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ।

সেটা নিয়ে সরকার ও বিরোধীদল একে অপরকে দুষেছে। সরকার পক্ষ বলছে- বিএনপি গণমিছিলের নামে নাশকতার ষড়যন্ত্র করছে। এমন গোয়েন্দা তথ্য তাদের হাতে আছে। আর বিরোধীদলের অভিযোগ, দলটির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ভণ্ডুল করতে সরকারি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগ সমাবেশের কর্মসূচি দেয় এবং ডিএমপি এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

আর এসব কারণেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো গভীর সংকটের আবর্তে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
 
বর্তমান সময়ে দেখতে পাচ্ছি, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও তার জোট শরিক যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতসহ কয়েকটি ধর্মীয় উগ্রবাদী দল।

তারা হরতালসহ নানা ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির পাশাপাশি রাজপথে আকস্মিক জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুরে লিপ্ত হচ্ছে। গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর পূর্বঘোষণা ছাড়াই জঙ্গি স্টাইলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির চক্র।

১৮ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের নামে ঢাকাসহ ৮ জেলায় আকস্মিক চোরাগোপ্তা তাণ্ডব চালায় বিএনপি-জামায়াত। এদিন সিলেটে এক বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে মারা হয়।

এরইমধ্যে ঘটে যায় দেশের রাজনীতির জন্য পিলে চমকানো ঘটনা। সেনাবাহিনী গত ১৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, কিছু প্রবাসী বাংলাদেশির ইন্ধনে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন ‘ধর্মান্ধ’ কর্মকর্তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করার প্রয়াস চালায়। যা সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক চেষ্টায় প্রতিহত করা হয়েছে।

ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন।

তবে বিএনপি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা গণতান্ত্রিক পন্থা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে নয়। এমনি অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, বিরোধীদলের সরকার পতনের হুমকি, সরকারি দলের কঠোর হাতে দমনের হুমকিতে চলছে দেশ।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ‘সরকার পতনের’ আন্দোলন সফল করতে বিএনপি-জামায়াত জোটের এই মরিয়া চেষ্টা আর আন্দোলন দমনে ক্ষমতাসীনদের হার্ডলাইনে অবস্থান দেশের নাজুক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলবে।

তাদের আশঙ্কা, এই সংকটের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে ধাবিত হচ্ছে রাজনীতির ভবিষ্যৎ। কিন্তু এমন ত্রিশঙ্কু অবস্থায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই।

স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই অভিভাবকদের। এমন দ্বন্দ্বসঙ্কুল বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিতে কখন কোথায় যেন কী ঘটে যাবে এ আতঙ্কই যেন সবাইকে কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে।

বিশেষ করে নগরবাসীর আতঙ্কের আর অন্ত নেই। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে- শুধুমাত্র সরকারি ও প্রধান বিরোধীদল রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার দেখালেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।


তাদের সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করছে আমাদের আতঙ্কমুক্ত হওয়ার নিশ্চয়তাটি। তাই, সরকার ও বিরোধীদলের কাছে আমাদের দাবি, দেশের মানুষকে বাঁচান, শান্তিতে রাখুন।

এটি ধ্রুব সত্য যে, শুধু আপনারাই পারেন দেশের মানুষকে  বাঁচাতে। অন্তত দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে আপনার  রাজনৈতিক আদর্শে ফিরে আসুন। যাতে আমরা আদর্শগত রাজনীতি শিখতে পারি।

আর দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারি। এমনটা শুধু আমার নয় দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা ও দাবি।

বাংলাদেশ সময় : ১২৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।