ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ২২ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

জাবি উপাচার্যের সাফল্যের তিন বছর

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১২

ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন বছর পার করেছেন। তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অফিসার, কর্মচারিরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন।

রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়।

তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে উপাচার্য তার দায়িত্বের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, ভাবনা ও পরিকল্পনা বিবৃত করেছেন। উপাচার্য বলেন, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরুর পর ২০১১ সালে জাঁকজমকপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ৪০তম প্রতিষ্ঠা-বার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়েছে। উপাচার্য বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার বিভিন্ন সভায় যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছিল ইতিমধ্যে তার বেশকিছু পূরণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সেশনজট নেই বললেই চলে। বিগত তিন বছরে অনির্ধারিত কারণে একদিনও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকেনি। অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত র‌‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পাবলিক ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দ্বিতীয়।

উপাচার্য বলেন, বর্তমান কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করার জন্য অনুষদ, ইনস্টিটিউট, বিভাগ ও আবাসিক হল নির্মাণ করা হয়েছে।

শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, বিভাগীয় সভাপতির যৌক্তিক চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে শিক্ষকরা নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যেভাবে নিয়োগ হয় তা নিয়ে প্রশ্ন করার অর্থ হলো পুরো প্রক্রিয়াকেই চ্যালেঞ্জ করা। যতক্ষণ পর্যন্ত না এর চেয়ে কোনো উন্নত প্রক্রিয়ায় চালু করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া বা বিধানকেই অনুসরণ করতে হয়।

তিন বছরে প্রায় ২০০ শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, বিগত তিন বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজারেরও বেশি। নয়টি নতুন বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বিগত কর্তৃপক্ষের সময়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ওই নিয়োগ দেওয়া যায়নি। এর ফলে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। বর্তমান কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা দূর করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ছাত্রীদের জন্য ৭৫০ আসন-বিশিষ্ট ‘শেখ হাসিনা হলে’র নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রী হল’ নির্মাণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।

তিন বছর পূর্তির প্রাক্কালে উপাচার্য আনন্দের সঙ্গে জানান যে, গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফেসিলিটিজ (অবকাঠামো উন্নয়ন) প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় এবং এই প্রকল্পের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৭৯ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এই প্রকল্পসহ জাহাঙ্গীরনগর ইতিমধ্যে ১১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। অবকাঠামো প্রকল্পের অধীনে ৫২৫ আসন-বিশিষ্ট একটি ছাত্রী হল এবং একটি ছাত্র হল, উভয় হলের জন্য প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের কোয়ার্টার নির্মাণ, শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারির জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র ভবন নির্মাণ, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র সম্প্রসারণ, রসায়ন ভবন সম্প্রসারণ, কলা ও মানবিক অনুষদ ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা সম্প্রসারণ, জিওলজিক্যাল সায়েন্স বিল্ডিং এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন সম্প্রসারণ, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির গ্রাউন্ড ফ্লোর সম্প্রসারণ, প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ এবং ট্রান্সফরমার স্থাপনসহ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের জন্য বই ও জার্নাল কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সমুন্নত রাখতে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য বর্তমান প্রশাসন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনৈতিক হানাহানি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বর্তমান প্রশাসন ইতিমধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে অর্ধশতাধিক ছাত্রকে বহিষ্কার করে। ফলে ধারাবাহিক সন্ত্রাস ও হানাহানির ঘটনা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।

উপাচার্য বলেন, অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি গৃহীত কঠোর ব্যবস্থার প্রতি একটা হুমকি বলে প্রতীয়মান হয়। এই ঘটনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে মর্মাহত ও ব্যথিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে আসামিদের নাম উল্লেখপূর্বক হত্যা মামলা দায়ের করে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা প্রমাণিত হলে হত্যাকাণ্ডের পরের দিন সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন জন দোষী ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ৭ জন দোষী ছাত্রের ছাত্রত্ব বাতিল করে আজীবনের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও তাদের সারাজীবনের জন্য জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

এছাড়াও হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় ছয়জন ছাত্রের দুই বছরের জন্য ছাত্রত্ব বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।     

উপাচার্য বলেন, বর্তমান কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়মিত করার উদ্যোগ নেয় এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান স্থগিত করতে হয় সৃষ্ট প্রতিকূল পরিবেশের কারণে। বর্তমান কর্তৃপক্ষ স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ছাত্রছাত্রীর বহুকাঙ্ক্ষিত পঞ্চম সমাবর্তন আয়োজন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

উপাচার্য বলেন, সবার সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতায় স্বল্পতম সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করতে বর্তমান কর্তৃপক্ষ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অংশীদার হওয়ার আহবান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad