ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম রাষ্ট্রপতি

প্রফেসর ডঃ এম. কামরুজ্জামান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২২
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম রাষ্ট্রপতি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি। মুজিবনগর সরকার, জাতির পিতার বাংলাদেশের প্রথম সরকার।

পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক ২৫ মার্চের পৈশাচিক গণহ্ত্যার পরে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল ১৯৭১ মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের এমএনএ এবং এমপিএদের অংশগ্রহণে কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও সরকার পরিচালনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। এই মন্ত্রিপরিষদ এবং এমএনএ ও এমপিএ-গণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি করে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেন।   

সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগত চরিত্র, প্রণয়ন পদ্ধতি, সংজ্ঞা বিশ্নেষণ, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের স্বতঃস্ফুর্তভাবে মেনে নেওয়া কিংবা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সব মিলিয়ে দ্ব্যর্থহীভাবে প্রতীয়মান হয় যে, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান যার আলোকে মুজিবনগর সরকার গঠিত ও পরিচালিত হয়েছিল। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামকে গতিশীল করার প্রয়াসে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে বন্দি বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী ও অন্য মন্ত্রীদের নিয়োগ, কর আরোপ ও অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাষ্ট্রপতির সকল ক্ষমতা প্রয়োগ এবং দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে ঘোষণা করা হয়। এ প্রসঙ্গে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে দৃষ্টি নিবন্ধ করা যায়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে ’যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল; এবং যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল; এবং...

বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি; এবং এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; এবং রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন; এবং তার কর ধার্য ও অর্থব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে; এবং বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য আইনানুগ ও নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতারও তিনি অধিকারী হবেন। ...

আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। ’

উপরন্তু বঙ্গভবনের রোল অব অনারেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৬ মার্চ ১৯৭১ হতে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা আছে।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট যে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে স্বাধীন স্বার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি তথা সরকার প্রধান হিসেবে সফলতার সাথে সরকার পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও পূনর্বাসন মন্ত্রণালয়, সংসদ বিষয়ক বিভাগ, কৃষি বিভাগ ও প্রকৌশল বিভাগ গঠন করেন। সরকার পরিচালনার প্রয়োজনে বাংলাদেশের প্রথম সরকার কর্তৃক স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রণালয়সমূহের দায়িত্ব সম্বলিত বিবরণী প্রকাশ করা হয়। শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে তাঁর পিতার মতোই উৎসর্গ করেছেন বাংলার দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য, বাংলার মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়ার জন্য। ১৯৮১ সাল থেকে যিনি তাঁর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে গেছেন স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, জাতির পিতার যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যখন জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস যখন আজ মাথা উঁচু করে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ঠিক সেই সময়ে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অধিকতর গুরুত্বসহকারে পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক বলে আমি মনে করি। তাহলেই সুবিধাবাদীদের প্রশ্রয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা বন্ধ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জনমনে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে।

লেখক: ভাইস-চ্যান্সেলর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
ইমেইল: [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।