ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ২২ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

মেঘের ডাকে বৃষ্টি নয় বজ্রপাত!

এ কে এম রিপন আনসারী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১২
মেঘের ডাকে বৃষ্টি নয় বজ্রপাত!

অকালে পরবাসী সাগর-রুনি সাংবাদিক দম্পতির রেখে যাওয়া একমাত্র সন্তান মেঘ। প্রাকৃতিক নিয়মে মেঘ চায় বৃষ্টি।

কিন্তু মেঘ না চাইলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বৃষ্টির পরিবর্তে নেমে আসছে বজ্রপাত। প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে বাস্তবতার এই অনাকাঙ্খতি সমীকরণ বাংলাদেশে কি ধরনের রাজনৈতিক দুর্যোগ নিয়ে আসে তা আগাম বলা মুশকিল। কারণ, যে কতবার সংবিধান ও গণতন্ত্র ল-ভ- হয়েছে প্রত্যেকবারই আকস্মকি বজ্রপাত হয়েছে। সাগর-রুনি হত্যাকা-ের প্রকৃত আসামি গ্রফেতার ও ন্যায় বিচারের পরিবর্তে যদি মৌলিক অধিকার খর্ব হয় তবে গণতন্ত্র অনিশ্চিত হবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হলে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ফলে অতীতের মত সুবিধাবাদী তৃতীয় শক্তির উত্থান উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সাংবাদিক তনয় শিশু মেঘের আহ্বানে বৃষ্টির পরিবর্তে বজ্রপাত আসতে পারে। যদি মিডিয়া না থাকে বা মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় তাহলে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরী করবে কে?

বাংলাদেশে বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়েছে একাধিকবার। কিছুদিন আগেও একটি বজ্রপাত সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় মধ্য আকাশে আটকে গেছে। প্রাকৃতিক নিয়মে যে ধরনের বজ্রপাত আসে সেগুলো আকাশের মেঘ থেকেই পৃথিবীতে আসে। কিন্তু আকাশের মেঘ পৃথিবীতে নেমে যদি বৃষ্টিকে ডাকে তবে বৃষ্টির স্থলে বজ্রপাত আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

কথা গুলোর প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে। অপরাধ সংঘটিত হয়। এটি স্বাভাবিক নিয়ম। তবে অপরাধের মাত্রা ও ঘনত্ব বেশি হয়ে গেলে প্রতিক্রিয়া পড়ে ব্যাপক আয়তনে। এই অপরাধটিকে যদি রসায়ন বিজ্ঞানের একটি পদার্থ মনে করি তবে বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বলতে বাধ্য যে, মিশ্রিত উপাদানের মাত্রা বেশি হয়ে যাচ্ছে। বৈজ্ঞানিক সূত্রে নির্ধারিত পরিমিত উপাদান অপরিমিতভাবে মিশ্রিত হলে ঐ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে পদার্থ তৈরী হওয়ার কথা তা না হয়ে অন্য পদার্থ সৃষ্টি হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি কৃত্রিম হয়ে যায়। ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অনাকাঙ্খতি ভাবেই কৃত্রিম পদার্থের জন্ম হয়। আমি রসায়নের ছাত্র নই। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত রসায়ন পড়তে হয়েছিল। যারা রসায়নের ছাত্র তারা ভাল বলতে পারবেন মাত্রাতিরিক্ত উপাদানের মিশ্রনে রাসায়নিক বিক্রিয়া হলে কি ধরনের বিপজ্জনক পদার্থের সৃষ্টি হতে পারে।

সাগর-রুনির একমাত্র আদরের শিশু সন্তান মেঘ তার বাবা-মায়ের রক্তাক্ত নিস্তেজ দেহ দেখেছে। অবুঝ সন্তানের চোখের সামনে  বাবা-মায়ের মৃত্যু যন্ত্রনার এই দৃশ্য, শিশুটির  মনে কি ধরনের ঘৃনার জন্ম হতে পারে তা এখন বোঝা যাবে না। পাঠকদের প্রশ্ন করতে চাই, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। তবে মেঘ যে বয়সে যা দেখেছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তা দেখেন নি। তিনি অনুভব করেছেন স্বজন হারানোর ব্যথা যে কত ভয়ঙ্কর। এই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে মেঘ বেশি অভিজ্ঞ। মেঘের অভিজ্ঞতা আর প্রধানমন্ত্রীর অভিজ্ঞতা এক কিন্তু ভিন্ন। প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে বাস্তবতার সংঘর্ষে আকাশের মেঘ এখন মাটিতে। মেঘের ডাকে বৃষ্টি হয় কিন্তু আমাদের মেঘের ভাগ্যে বৃষ্টি কি জুটছে বৃষ্টি না বজ্রপাত!  যদি বজ্রপাত হয় তবে মেঘের জন্য প্রযোজ্য নয় নিছক আমাদের জন্যই।
 
সাংবাদিক সমাজসহ সকল মানুষের দৃষ্টি ও ভাবনা মেঘের ভবিষৎ নিয়ে। মেঘকে ঘিরে যে ইতিহাসের জন্ম হয়েছে এবং ইতিহাসের অধ্যায় যে ভাবে বেড়ে চলছে তা যদি অব্যাহত থাকে তবে আমাদের মেঘ একদিন বাংলাদেশের ইতিহাসে বড় স্থান করে নিতে সক্ষম হবে। ইতিমধ্যে পিতা-মাতা হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে পিতা-মাতার পেশার উপরই আঘাত আসা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডাকাতির এজাহার করতে গিয়ে ডাকাতের ফেলে যাওয়া গরুটিই শুধু নয় ভিটেমাটি চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথার্ৎ মেঘ চায় বৃষ্টি, চলে আসতে চায় বজ্রপাত। এই বজ্রপাত যদি আসে তবে তা অবশ্যই দেশ ও জাতির জন্য বিপদের অশনিসংকেত বহন করবে। দেশ প্রেমিক নাগরিক হিসেবে আমরা মেঘের ডাকে বজ্রপাত চাই না। আমরা চাই মেঘের ডাকে বৃষ্টি এসে সভ্যতাকে শান্তি বিলিয়ে দিক।

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় মহামান্য হাইকোর্টে বাদী যে যে প্রতিকার চেয়ে রিট মামলা করেছিলেন চাহিদার চেয়ে প্রাপ্তি বেশি হয়ে গেছে। বিজ্ঞ আদালতের আদেশকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাই এবং শ্রদ্ধাকরি। সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল আদালত যদি এই রকম প্রতিকার দেন তবে জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন অবশ্যই ঘটবে। তবে আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(খ) এ বলা আছে, সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য। মহামান্য হাইকোর্টকে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণের জন্য সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ এই ক্ষমতা দিয়েছে। একই সাথে অনুচ্ছেদ ২৬ ক্ষমতা দিয়ে বলেছে, মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন বা আইনের অংশ বাতিল করে দিতে।
 
আমরা আশা করি, সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ২৬ থেকে ৪৭ পর্যন্ত মৌলিক অধিকারগুলো আদালতের আদেশেই বলবৎ থাকিবে। সে বিশ্বাস ও আস্থা জাতির অবশ্যই রয়েছে।

এ কে এম রিপন আনসারী
[email protected]

বাংলাদেশ সময় ০৯৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।