ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাংগঠনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম (সভাপতিমণ্ডলী) তুলে দিয়ে সম্পাদকমণ্ডলী পদ্ধতিতে যেতে পারে দলটি।
সিপিবির আগামী কংগ্রেসে এসব বিষয়ে গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আসছে বলে পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এছাড়া ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন নিয়ে পার্টিতে দুই ধরনের মত নিয়ে কংগ্রেসে বিতর্ক উঠতে পারে বলেও জানা যায়।
আগামী ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর দেশের প্রচীনতম রাজনৈতিক দল ও বাম আন্দোলনের মূল ধারার পার্টি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) একাদশ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৮ অক্টোবর কংগ্রেসের উদ্বোধন হবে।
উদ্বোধনী সমাবেশে সারা দেশের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে বড় ধরনের গণজমায়েতের প্রস্তুতি চলছে বলে সিপিবি নেতারা জানান।
সিপিবির একাধিক সূত্র জানায়, গত জাতীয় নির্বাচন বর্জন নিয়ে পার্টিতে দ্বিমত ছিলো। পার্টির কেউ কেউ নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দিলেও ওই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় সিপিবি। তখন অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বিএনপি বর্জন করায় সিপিবি নির্বাচনে যায়নি বলে সমালোচনা হয়। নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে যারা মত দিয়েছিলেন তারা পার্টির সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও এ নিয়ে বাইরের বিভ্রান্তি দূর করতে নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ রয়েছে। কংগ্রেসে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সিপিবির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি ছিলো বিএনপি নির্বাচনে যায়নি বলে সিপিবিও যায়নি। এটা যে সঠিক নয় সেটা পার্টি নেতৃত্ব যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেনি, বিভ্রান্তি দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে। সিপিবি নির্বাচনে যায়নি তার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে। কংগ্রেসে এ প্রশ্ন উঠতে পারে।
এদিকে সিপিবির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিপিবির প্রেসিডিয়াম পদ্ধতি তুলে দিয়ে সম্পাদকমণ্ডলী করার আলোচনা রয়েছে। এটা হলে সভাপতির পদও বিলুপ্ত হবে। আন্তর্জাতিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টিতে প্রচলিত ধারা অনুসরণ করে এ পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। এই পদ্ধতিতে সাধারণ সম্পাদক হবেন পার্টি প্রধান। অতীতেও সিপিবিতে এই পদ্ধতি ছিলো। ১৯৯১ সালের কংগ্রেসে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে সম্পাদকমণ্ডলী পদ্ধতি বাদ দিয়ে সভাপতিমণ্ডলী পদ্ধতি এবং সভাপতিকে পার্টি প্রধান করা হয়।
এদিকে গত কয়েক বছর ধরে পার্টি নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক কর্মী হওয়া বাধ্যতামূলক বিধানের বিষয়টি নিয়ে সিপিবির মধ্যে বিতর্ক চলে আসছে। গত ২০০৮ সালের কংগ্রেসে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে প্রেসিডিয়াম সদস্যের জন্য সার্বক্ষণিক কর্মী হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। এটা নিয়ে নেতাকর্মীদের দ্বিমত থাকলেও কাউন্সিলরদের ভোটে ওই প্রস্তাব পাস হয়। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। এই বিতর্ক দূর করতে এবং পার্টির পেশাজীবী নেতাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের জন্য প্রার্থী হওয়ার গঠনতান্ত্রিক বাধা দূর করতে বাধ্যতামূলক সার্বক্ষণিক বিধান তুলে দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধনীর প্রস্তাব কংগ্রেসে উঠবে বলে জানা গেছে।
তবে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান। এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কংগ্রেসে যে কেউ যে কোনো প্রস্তাব দিতে পারে। এ ধরনের কোনো সংশোধনীর সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। সিপিবি যে রাজেনৈতিক ধারায় চলছে সেভাবেই চলবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিপিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনী প্রস্তাব বাছাই কমিটির আহ্বায়ক মৃণাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কী প্রস্তাব এসেছে এখন বলতে পারছি না। প্রস্তাবগুলো আমরা বাছাই করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাবো। সেখানে অনুমোদন হলে কংগ্রেসে উঠবে। কোনো প্রস্তাব কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনুমোদন না হলে প্রস্তাবকারী নিজেই সেটা কংগ্রেসে তুলতে পারবেন। সিদ্ধান্ত হবে কংগ্রেসে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ