ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

অন্যান্য দল

যা থাকছে ‌‌'যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া'র ঘোষণায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮
যা থাকছে ‌‌'যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া'র ঘোষণায় একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন (ফাইল ফটো)

ঢাকা: একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তাদের পাঁচ দফা দাবি ও নয় দফা লক্ষ্য ঘোষণা করবে। একসঙ্গে কাজ করার কথা বলে আসা ওই দুই জোটের সে ঘোষণায় কী থাকবে তা নিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো হয়। যদিও ওই বিজ্ঞপ্তিতে নাম এবং পরিচয় উল্লেখ থাকলেও দুই নেতার কারোরই স্বাক্ষর দেখা যায়নি। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'বর্তমানে একটি জনসমর্থনহীন, অনির্বাচিত সরকার দেশ শাসন করছে। সন্ত্রাস, গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশ প্রশাসন ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে।

জনসমর্থন নিয়ে কেউ যাতে ক্ষমতায় না আসতে পারে সেজন্য তারা জনগণের অবাধ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অধিকারসহ গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আগামী নির্বাচনে যে কোনোভাবে জয়লাভের জন্য ইভিএম পদ্ধতি প্রবর্তন, ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ একের পর এক কূটকৌশল অবলম্বন করছে। সন্ত্রাস, গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যা এবং নির্বিচারে জেল-জুলুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকারসহ, মৌলিক, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারসমূহ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরিতে ‘কোটা সংস্কার’ এবং ‘নিরাপদ সড়ক’-এর দাবিতে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারি নামধারী ছাত্র সংগঠন অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে দমনে লিপ্ত। এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, ভিন্নমতের কাউকে নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। রাষ্ট্রের আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগসহ সমগ্র রাষ্ট্র্র যন্ত্রকে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বেচ্ছাচারী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহ হরণ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে দেশ, জাতি ও জনগণকে মুক্ত করে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে-বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের কোনো বিকল্প নেই। '

এতে বলা হয়, 'প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সব স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি ও নাগরিক সমাজসহ জনগণকে সুসংগঠিত করে যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য নিম্নবর্ণিত অভিন্ন দাবি আদায় এবং লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস গণআন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গিকার ব্যক্ত করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিচ্ছি। ' 

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত দাবিগুলো হলো- 'আসন্ন জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা অর্থাৎ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। '

'অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। '

‘কোটা সংস্কার’  এবং ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-ছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে এবং গ্রেফতারদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না। ' 

'নির্বাচনের একমাস আগ থেকে নির্বাচনের ১০ দিন পর পর্যন্ত মোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যাস্ত করতে হবে। ' 

'নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে, গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর যুগোপযোগী সংশোধনের মাধ্যমে গণমূখী করতে হবে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। '

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত লক্ষ্যগুলো হলো- 'বাংলাদেশে স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং একব্যক্তিকেন্দিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের লক্ষ্যে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর করা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদসহ যুগোপযোগী সংশোধন করা এবং জনগণের ক্ষমতায়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করাসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা। ' 

'দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোর হাতে দমন এবং ইতোপূর্বে দুর্নীতির দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ' 

'দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসাবে বিবেচনা করা। ' 

'কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা। ' 

'রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। '

'জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। ' 

‘সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব-কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এ নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পারিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ দেওয়া। ' 

'বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পূনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা। '

'অভিন্ন দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে জোটবদ্ধ নির্বাচন ও সৎযোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা স্পষ্ট অঙ্গীকারসহ জাতীয় নেতারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিস্তারিত লক্ষ্য ও কর্মসূচি প্রণয়ন করে জনসম্মুখে প্রকাশ, প্রচার ও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে নিতে হবে। ' 

বাংলাদেশ সময়: ০২০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮
এমএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য দল এর সর্বশেষ