ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অন্যান্য দল

জামায়াতকে ‘জাতীয় ঐক্যে’ নেয়া হবে না: ডা. জাফরুল্লাহ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮
জামায়াতকে ‘জাতীয় ঐক্যে’ নেয়া হবে না: ডা. জাফরুল্লাহ

দেশে বইতে শুরু করেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। এরইমধ্যে গড়ে উঠছে বিভিন্ন জোট-ঐক্য। এসব জোট সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবি দাওয়া উত্থাপনের পাশাপাশি আন্দোলনের নানা কর্মসূচিতেও যাচ্ছে। সম্প্রতি এমনই একটি ঐক্য হয়েছে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে। ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ নামে গড়ে ওঠা এই জোটের কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকেও। ঐক্য, আন্দোলন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-ভাবনাসহ নানা বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন এই বুদ্ধিজীবী। সঙ্গে ছিলেন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মহসিন হোসেন।  

বাংলানিউজ: ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে’ আপনার ভূমিকা কী?
ডা. জাফরুল্লাহ: আমি এদের সঙ্গে আছি।

বাংলানিউজ: এই ঐক্য কোন পর্যায়ে আছে?
ডা. জাফরুল্লাহ: ঐক্যটার মূল কথাই হলো একটা নির্বাচন দরকার।

যার ভোট সে যেন দিতে পারে। তারপর নির্বাচন পরবর্তীকালের ব্যাপারে বললে- আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আশা তারা পরিবর্তন চাইছে। দেশটা যেন শান্তির দেশ হয়, এখানে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক হয়।
আর যারা এই রাষ্ট্রের বুনিয়াদ যেমন কৃষক, সে যদি উৎপাদন না করতো- আমাদের দেশে ৭৪ এ দুর্ভিক্ষে লোক মারা গেছে- তাদের (কৃষকের) অবদানেই আমাদের খাদ্যের উৎপাদন বেড়েছে। গার্মেন্টের মেয়েদের অবদানে আমার অর্থনীতি এতো শক্ত হয়েছে। আমাদের কথা হলো- সমতার ভিত্তিতে সুফলটা বিতরণ হলো কি-না।

বাংলানিউজ: আপনারা বিএনপিকে নিয়ে আগাচ্ছেন…
ডা. জাফরুল্লাহ: হ্যাঁ, জামায়াত ছাড়া সবাইকে নিয়ে এগোচ্ছি।

বাংলানিউজ : হ্যাঁ সবাইকে নিয়ে, কিন্তু সবচেয়ে বড় দল হলো বিএনপি। বিএনপি যদি আপনাদের জোটে আর আপনারা ক্ষমতায় যান, তাহলে ক্ষমতার বড় অংশই হবে বিএনপির। সেক্ষেত্রে আপনি যে কাজগুলোর কথা এতোক্ষণ বললেন, সেই কাজগুলো কি আপনারা বিএনপিকে দিয়ে করাতে পারবেন? অথবা বিএনপি সেভাবে করবে কি-না…?
ডা. জাফরুল্লাহ: সেজন্যই এই জোটে বিএনপি যোগ দেওয়ার আগেই আমরা আমাদের নয় দফা দিয়েছি। বিএনপিকেও এই জোটে আসতে হলে ওই নয় দফা মেনে নিতে হবে। ইতোমধ্যে বিএনপি যা করছে তারমধ্যে আমাদের অধিকাংশ জিনিস তারা অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমরা আরও বসতে চাই। আরও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি চাই। যে এই পরিবর্তনগুলি হবে। এবারের ঐক্য কেবল রাজনৈতিক জোটের ঐক্য হবে না, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল লোককেই এই ঐক্যের মধ্যে আমরা আনতে চাই।

বাংলানিউজ: আপনারা দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এখন সরকার বলছে এটা সংবিধানে নেই। সেক্ষেত্রে সমাধানটা কিভাবে হতে পারে?
ডা. জাফরুল্লাহ: এ বিষয়ে আমাদের পুরো কমিটিকে বসে আলোচনা করতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দেশের বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে যদি প্রয়োজন মনে করে সরকার অবশ্যই করতে পারে। সরকার আমাদের দাবি মানলে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতে পারে। তারা সে আইন করতে পারেন।

বাংলানিউজ: বিএনপিসহ জোট করে আপনারা যদি ক্ষমতায় যেতে পারেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?
ডা. জাফরুল্লাহ: এটা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

বাংলানিউজ: আপনাদের ধারণা থাকবে না জোটের নেতৃত্বে কে থাকবে?
ডা. জাফরুল্লাহ: এখনো এটা ঠিক হয়নি। আমরা মনে করি, যে কোনো ভালো লোক, ভেতরে-বাইরের হতে পারে।

বাংলানিউজ: এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য কী?
ডা. জাফরুল্লাহ: বিএনপি খুবই ওপেন। তাদের কোনো বক্তব্য নেই। আর এটা নিয়ে এখনও বিএনপির সঙ্গে কথা হয়নি।

বাংলানিউজ: আপনাদের এই যে বৃহত্তর জোট, এই জোট কতোদিনের জন্য, শুধু আন্দোলন, নাকি নির্বাচন ও নির্বাচনের পরে সরকার গঠন পর্যন্ত থাকবে?
ডা. জাফরুল্লাহ: আন্দোলন, নির্বাচন, নমিনেশন, নির্বাচন পরবর্তী সবকিছু মিলিয়েই জোট হবে।

বাংলানিউজ: তাহলে ধরে নিতে পারি, নির্বাচনের আগেই আপনাদের একটা লিখিত চুক্তি হবে, যে আপনারা কী কী করবেন?
ডা. জাফরুল্লাহ: জি জি, আপনি ঠিকই বলেছেন। নির্বাচনের আগেই এটা হবে।

বাংলানিউজ: নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, জোট যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে তারা দুই বছর চালাবে, পরের তিন বছর বিএনপি চালাবে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ডা. জাফরুল্লাহ: এটা মান্নার ব্যক্তিগত মত। এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।

বাংলানিউজ: বিকল্প ধারার পক্ষ থেকে প্রফেসর বি. চৌধুরী বলছেন, ভারসাম্যপূর্ণ সরকার চান, সেটা কিভাবে হবে? তিনি বারবার বলছেন, স্বেচ্ছাচারী সরকার চান না। একক কোনো দল যেন ১৫১ আসন পেয়ে স্বৈরাচারী বা স্বেচ্ছাচারী না হয়, এ বিষয়ে কিছু বলেন…।
ডা. জাফরুল্লাহ: এটা হলো কি, ওনার বক্তব্য ক্ষমতার ভারসাম্য একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা উনি বলেছেন। পদ্ধতিটা আলোচনাসাপেক্ষ ব্যাপার। আজকে কেবল সংখ্যা দিয়ে ক্ষমতার ভারসাম্য হবে না। থিওরিটিক্যালি যদি ধরে নেই ক্ষমতায় ভারসাম্য থাকতে হবে, সেজন্য আগেই রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় ভারসাম্যের জন্য অনেকগুলো সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্যের পহেলা সিদ্ধান্তটা কী? পহেলা হলো রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য হতে হবে। বর্তমানে এটা নেই। এমপিদের ক্ষমতা দিতে হবে। তারা স্বাধীনভাবে আলোচনা করে যেন মতামত দিতে পারে। দলের বক্তব্যের বিরুদ্ধে বলতে পারতে হবে। পারবে না কোনটা, নো কনফিডেন্স এর ব্যাপার হলে সেটা পারবে না। প্রয়োজনে জনগণের মতামত নিতে হবে। এটাই হলো ক্ষমতার ভারসাম্য। আর হলো কেন্দ্রিকতা। এখন সবকিছু ঢাকায় নিয়ন্ত্রিত। এটা শিফট (স্থানান্তর) করতে হবে। উনি দেড়শো-দেড়শো যেটা বলেছেন, সেটাই শেষ কথা নয়। আমরা ক্ষমতার ভারসাম্য চাই, সেটা নিয়ে আলাপ আলোচনা হতে হবে।

বাংলানিউজ: কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, বি. চৌধুরী যখন বিএনপির মহাসচিব ছিলেন, তখন মুসলিম লীগের শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধাপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আব্দুল আলীম ছিলেন রেলমন্ত্রী। এছাড়া ২০০১ সালে বি. চৌধুরী যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন (যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া) নিজামী-মুজাহিদ মন্ত্রী ছিলেন। তখন সমস্যা হয়নি, এখন জামায়াতকে নিয়ে সমস্যা কেন? আসলে বি. চৌধুরীর ছেলে (মাহী বি. চৌধুরী) জয়ের (সজীব ওয়াজে) সঙ্গে ভিওআইপির ব্যবসা করেন, এজন্য তিনি এমন কথা বলছেন যে জামায়াতকে নিলে জোট হবে না। কর্নেল (অব.) অলির এ বক্তব্যের জবাবে আপনি কী বলবেন?  
ডা. জাফরুল্লাহ: (হেসে দিয়ে) ভিওআইপির ব্যবসা- এসব হলো কথার কথা, এটা কোনো কথা নয়। ঐক্য হচ্ছে, ঐক্য হোক, কার্যক্রম ধীরে ধীরে বাড়ছে। দেশবাসী ঐক্য চায়। এসব বক্তব্য নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলানিউজ: জামায়াতের বিষয়টা জানতে চাইছিলাম।
ডা. জাফরুল্লাহ: জামায়াতের বিষয়টাতো পরিষ্কার, জামায়াতকে জোটে নেওয়া হবে না। তারাতো দলগতভাবেই নেই। তাদের মার্কাও নেই। জামায়াত এটা নিয়ে কোনো সমস্যাও করছে না। সমস্যা করছে অন্যরা। বিএনপি জামায়াতকে আনেওনি। আমি যেটা শুনেছি, রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিএনপির যে জনসভা হবে সেখানেও জামায়াত থাকবে না। তাহলে এটা নিয়ে কেন এতো কথা?

বাংলানিউজ: রোববারের জনসভায় বৃহত্তর জোটের নেতারা কি থাকবেন?
ডা. জাফরুল্লাহ: আমি ঠিক জানি না। এখনো দাওয়াত পাইনি। তবে দাওয়াত পেলে অবশ্যই যাবো। জোটেরও সবাই যাবে।

বাংলানিউজ: বিএনপি বলেছে জনসভা থেকে কিছু ঘোষণা আসবে, এ ব্যাপারে কিছু জানেন?
ডা. জাফরুল্লাহ: না সে ব্যাপারে এখনো কিছু জানি না। তবে মনে হয় ভালোর দিকে যাচ্ছে দেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য দল এর সর্বশেষ