ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কবিতা

শামসেত তাবরেজীর একগুচ্ছ কবিতা

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২০
শামসেত তাবরেজীর একগুচ্ছ কবিতা

শামসেত তাবরেজীর জন্ম ১৯৬১ সালের ৫ এপ্রিল, ঢাকায়। লেখালেখির শুরু ক্লাশ ফোর-এ পড়ার সময় তদানীন্তন ‘মুকুলের মহফিল’ দিয়ে। 

কবির প্রথম বই ‘উদ্বাস্তু চিরকুট’, তারপর বেরোয়: আবাগাবা, আম্রকাননে মাভৈ: কলের গান, হে অনেক ভাতের হোটেল (নির্বাচিত কবিতা), অবিরাম অরেঞ্জ, দুজনেষু, মুহূর্তমা, অশ্রু মোবারক, রওজার দিকে, পিয়া পিয়া বলে ডাকি ইত্যাদি। লেখালেখি ছাড়া ছবিও আঁকেন শামসেত তাবরেজী।



ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি বইমেলায় ‘বৈভব’ প্রকাশনী থেকে বের হচ্ছে শামেসেত তাবরেজীর নতুন কবিতার বই- ‘বসা ভাতের ভৈরোঁ’। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সেই পাণ্ডুলিপি থেকে একগুচ্ছ কবিতা পত্রস্থ করা হলো।



কথা


এতোসব কথা কোত্থেকে আসে এতোসব ফিসফাস?
আমাকে কোলে বসিয়ে খেলে আমারই আদিম লাশ

চোখ হতে গলা মোম নেমে আসে ভাসিয়ে বিগত নদী
বর্তমানের নালা খুঁজে নেয় অবশেষে পরিণতি?

কে রাখে হাত বরফ-ঠাণ্ডা আমার কাঁধের পর
পীতাভ ফলের বিচি ঝরে যায় কেমন স্বার্থপর!


পাগলিনী

পা রেখেছি পাগলিনীর বাড়ি
হাতের হাঁড়ি উল্টা করে ধরা
গা কাঁপছে ছমছমাচ্ছে ছায়া
তোরণ-চূড়ায় কামিনী বেহায়া
ঝরতে ঝরতে বললো: মাথা সরা,
আড়ে-ধারেই জাগনা পুলিশফাঁড়ি

আড়ে-ধারেই ডগস্কোয়াডের ঘর
প্রতিহিংসা সরব দুই চোখে
এক পা আগাই দুই পা পিছে হটি
মহাশূন্যে লাফ দিয়ে করোটি
সূর্য-বিড়ি ফোঁকে
না খুঁজে পাই পাগলিনীর ঘর


অনাড়াল

অনাড়াল সবুজ রাত্রি। বৃষ্টি থেমে গেছে কিছুক্ষণ আগে
মিহি ধুন সেতারের ঝরে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা, লেগে যাচ্ছে চাঁদে
গন্ধভাঁদাল সইছে নিদ্রালস পতঙ্গিনী, দৃশদ-পরাগে
কার চোখ তবু থেকে থেকে কাঁদে!

ঈশ্বররেও অনকে আগে আমি বস্তুতরঙ্গে আছিলাম
একটি মুহূর্তের সঙ্গে গতিবিজ্ঞানের বিবাহ বাসরে,
এরও পর আসলেন তিনি- সঙ্গ করতে আমাদের, নিজ হাতে সহাস্য দিলাম
মদপাত্র তাকে, বললাম, হও এখন ঈশ্বর- ভাষা-চরাচরে।

তাই হলো সব (শব)। পোশাক পর্যন্ত হলো আর হলো ভেজা নগ্নতা,
বালিশ আর প্রতি-বালিশের বোঝাপড়া শেষ করে গীত হলো কিশোরী আমানকার,
তারপর? তারপর- সব ঈশ্বরতা
ভেঙে গিয়ে মধ্যবিত্তের যে রকম বাংলাদেশে হয় প্রত্যেকে প্রত্যেকের নিজের খাবার!


ছোটলোকদের বড়লোক

ছোটলোকদের বড়লোক তুমি আমাদের
রন্ধ্রে রাত্রি ঢুকে বসে থাকা তুমি আমাদের

জানে নাই যে মাখনমর্ম কবিতার
নিজের চামড়া খুলেও পায়নি নিস্তার

ছোটলোকদের সেই বড় তুমি আমাদের
চারিদিকে তিন কিসিমের পাতাবাহারের ঘন ঘের

চোখ গেলে ফেলে আমরা দেখেছি রংদার
মহাজনদের বিলাসী মুদির বিস্তার

বিস্তৃত সেই ঝলকানো আরশের
তুমি বড়লোক ছোটলোকদের তুমি আমাদের

জিভের ডগায় রাখিনি আমরা বাক্য
আমাদের হাতে আসে না নিজের স্বাক্ষর

না খেয়ে না দেয়ে বেঁচে আছি তবু ঢের
যেহেতু তুমি বড়লোক আমাদের


বসে থাকা

তোমার বসে থাকা এবং তোমাকে
আলাদা করে দেখি মধ্যিখানে আমি
ব্যথার মত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি
নিঃস্ব যদিও, স্বাধীনতাকামী

তোমার কোলে ছিল বিড়াল নাকি বই
একটা হাত ছিল রোমের আড়ালে
তা দেখে প্রজাপতি করল হৈ চৈ
বললো: জানো কি একাত্তর সালে

তোমার কিন্তু ছিল না বসাবসি
বিকেল চলে যেত রাতের হাত ধরে
তুমিও যেতে কি কিছুমিছু পেতে
না পেয়ে কাঁদতে দাঁড়িয়ে অঝোরে

এটাই নিয়তি, জীবন মানে তাই
বসায় তুমি নাই, বসাটা তুমি না
শুধুই মাঝখানে আমার আমিতা 
খণ্ড-ত হয়ে আছি, ফের নাই

কি জানি হয়েছে, কেউ করে না রা
সেলাই করা মুখ- নিরীশ্বর ছায়া
ওই তো লাশ যায়, ওই তো জাহানারা
রেখেও গেলো না কাজল-পরা মায়া

দেখার আড়ালে গেলো পুরো দেশ
জায়া ও জননী, তারাও শেষমেষ...

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২০
এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ