ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

কবিতা

বিজয় আহমেদের একগুচ্ছ কবিতা

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০
 বিজয় আহমেদের একগুচ্ছ কবিতা

কবি বিজয় আহমেদ। ১৯৮৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের নান্দাইলে জন্ম এ কবির।

তার প্রকাশিত কবিতার বই- ‘সার্কাস তাঁবুর গান’, ‘মুচকি হাসির কবিতা’, ‘কমিকস, ক্যামেরা, ট্রাভেলগ’ এবং ‘শস্য ও পশু পালনের স্মৃতি’।

এছাড়া আছে কিশোর কবিতার বই- ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও কিশোর উপন্যাস- ‘বাবলুর অদ্ভূত সাইকেল’।

চলচ্চিত্র নিয়েও আগ্রহ আছে এ কবির। এর আগে যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশ পেয়েছে তার চলচ্চিত্র বিষয়ক বই- ফিল্মমেকারের ভাষা (চার পর্ব: ইরান, আফ্রিকা, লাতিন, কোরিয়া)।

বিজয় আহমেদ শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক ওয়েবম্যাগ- ‘লাল জীপের ডায়েরি’র সম্পাদনা পর্ষদের অন্যতম প্রধান সদস্য।

চলমান একুশে বইমেলায় বাতিঘরের সহযোগী প্রকাশনা ‘কবিতাভবন’ থেকে প্রকাশ পেয়েছে বিজয় আহমেদের কবিতার বই- ‘আমি ইয়াসিন আমি বোরো ধান’ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সে বই থেকে একগুচ্ছ কবিতা পত্রস্থ করা হলো।


০১

আমাদের অলৌকিক যত সমবায়
যুবক চাষার মুখে থাকা সকৌতুক
হাসি, রাতভর পতপত শব্দ তোলে
উড়ন্ত পরির দেহ ছেড়ে আসা আলো।
নীলাভ বাথান তলে ছড়ানো সুবাস
রক্তজবার- যুবার বুকে কী যে গান
মাতমের মতো আহা ছড়াল নিমেষে
যেন এই প্রেম আর কখনো দেখেনি
কেউ- যমুনার চরে বুক থেকে বুকে।
ভূমিতে পা রেখে যদি দাঁড়াও প্রেমিক
পাবে না আজাদি আর বাঘাড়ের দলে।

আমাদের অলৌকিক যত সমবায়
কৃষিকেন্দ্র হতে চাঁদে, নভউড্ডয়নে।
নগ্ন এক পরি দেখে, পিছু ধরে তার
যেতে যেতে বেহেশত ছেড়ে, ক্রমে ভূমি...
আমাদের অলৌকিক যত সমবায়
কৃষিকেন্দ্র হতে চাকা, মৌমাছিরচাষ
জিনেদের ডানা আর এতিমের ষাঁড়
প্রখর সূর্যের দাবদাহ শেষে জাগে;
কেন্দ্রীয় খামারে জাগে হাড্ডি, রজ্জু, ত্বক
দুধের নহর কোনো ফেরেশতাদলে;
আর তৃণদেহে মৃদু রমণীরা পুষে
আমাদের অলৌকিক কৃষি সমবায়

০২

সাপের ফণার মতো হাসি দুলে ওঠে
হাওয়া যেনবা এক কাকিলার গান;
বোরোখেতে অবসর এল ইঁদুরের
ধানগুচ্ছে ছলকে ওঠে পরিদের প্রাণ।

তোমাকে দেখেছি যেন কেঁপেছে আরশ
ইনুস পীরের নামে জাগি রাতভর;
তারা-গাঁথা মালা পরে, গজারের দল
গেল নাইওরি, ‘আমি কেউ না, অপর!’

পরিদের বুক খুঁড়ে জাগে যদি পেঁচা
তার নামে দিয়ো তুমি পবিত্র মানত;
খোদা, ভূমি, নারী আর ঝরা চাঁদ পাবে
ধানখেত যদি হয় আনত নদীতে।

মাঝরাতে বোরোখেতে চুপ মেরে থাকি
সাপের ফণার মতো তুমি দুলে ওঠো।

০৩

পোষা বোয়ালের লাফ দেখে ঘুম নাই
আজ। অবিরাম বিবিধ মাছের ডানা
বলে, ‘প্রজনন ঋতু শেষে অস্বীকার
করো। স্বাতীতারা যেন কুসুমের বন। ’

যত বৃষ্টি পড়ে আমি তত বোরোধান
তোমার বুকের তিলে নিরাপদ থাকি।
মিকাইল দেখে রাখে এই শস্যবন
অতল নদীর থেকে ডাক দাও তুমি।

সারারাত ভিজে ভিজে আমি বোরোধান
অবহেলা তবু রয়ে গেছে ডালিমের।
উত্তর দক্ষিণ কিবা পূর্ব ও পশ্চিমে
জানি ভূমি ক্ষমাশীল তোমার সুবাসে।

রক্তাক্ত ডানায় তুমি দিলে না চুম্বন
তবু সারারাত ভিজে আমি বোরোধান।

০৪

সোনা পাতো কান বুকে দেখো কারবালা
পূর্ব কি পশ্চিমে আমি বাথানের গান;
বোরোধান রুয়ে দাও বুকে, স্নেহ মেখে
নদীতে মারছে ঘাই গজারের ফানা।

আমার সিনার লাল গোশত কেটে নিয়ে
দেখো দমে দমে জপে আধফোটা চাঁদ; 
ডানা ভাঙা প্রেম বুঝি এই জমিনের
জিন-পরিদের বুকে রাখেনি তো খাদ।

আমার মস্তক কেটে সিমারের পায়ে
দাও, ফসলের গানে বয়ে যাক ঢেউ;
অনাত্মীয় নই ভেবো দরদি গো তুমি
বোরোধান ডেকে বুকে জড়ায়েছে কেউ।

মহাশোল ছুটে যেন বোরাকের ঘোড়া
ধানবুকে ক্ষীর দাও রোজ স্বাতী তারা

০৫

বুকে পাতো সোনা কান কী যে আনচান
লাফাতেছে বুক এই তোমারে স্মরিয়া;
কী-বা পাবে রাখালের গলা কাটো যদি
যদি ভিজে যাও তেড়ে আসা তাজা রক্তে।

কাটা গলা কাছে নিয়ে শোনো ধুকপুক
শুনে নিয়ো রক্ত-স্রোতে প্রবল জিকির;
রাখালে জানে না মানে জল-স্তন-ঊরু
গজারের বুকে নারী, কেন এত ভীরু?

বলি, তুলে নাও চোখ এই রাখালের
দেখো লেখা পরিদের অসুখ-বিসুখ;
বাথানে ফসলে জাগা গান আল্লাহর
পীরের দরগা বুকে গজার ঝিনুক।

মমতার জপছাড়া কী-বা পাবে আরো?
যদি সোনা গলা কেটে রাখালেরে মারো।

০৬

সূর্যাস্তের দিকে যাই অন্ত আর আদি
তোমার শরীর ধরে জেনেছি আজাদি;
পাখির ডানায় ডিম তৃণ দিয়ে লেখা
হাঁসছানাদের গ্রামে জল ঘেঁষে থাকা।

আহা, দানা দানা মেঘ, বৃষ্টি রূপে নামো
মৌসুমের ধান লিখে দিয়েছি বৈশাখে; 
দাবদাহে পুড়ে যেয়ে যেনবা বিদ্যুৎ
শিশু মতে থাকি রে তোমার কোলে-কাঁখে।

পুড়ে গেছে ত্বক হায় তামাটে গানের
আত্মা থেকে তুলে আনো সাঁতার মাছের;
গবাদি পশুর পালে নাইওরি যাও
খুর চিহ্ন ধরে নারী আমাকেই নাও।

মেঘ ভেঙে গান জাগে- চাকা ঘোরে যদি
তোমার শরীর ছুঁয়ে পেয়েছি আজাদি।

'আমি ইয়াসিন আমি বোরো ধান' কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০ 
এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কবিতা এর সর্বশেষ