ঢাকা: বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় শুরু হবে। এই গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হবে।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গত রাতে প্রায় সোয়া ৩টার দিকে আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে গ্রেফতার করেছেন। আজ তাদের ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। পুলিশের পক্ষে বলা হয়েছে- নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই আনা হয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গভীর রাতে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে আসার মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা ও দম্ভের প্রকাশ আছে, যুক্তি নেই কোনো। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে গ্রেফতার হওয়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
তিনি বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর বিনা উসকানিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ, র্যাব, সোয়াত বাহিনী ইত্যাদি একযোগে আক্রমণ করে অনেককে খুন ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। তাদের গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ার পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে মনে হয়েছে যেন যুদ্ধ চলছে। নিরস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর এমন নির্মম আক্রমণ ও জুলুম নজিরবিহীন।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলের মহাসচিবকে তার অফিসে ঢুকতে দেয়নি। কিন্তু নিজেরা ঢুকে অফিসের কক্ষ, আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে; কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক, নগদ অর্থ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি নিয়ে গেছে। নিজেরা ব্যাগে করে বোমা অফিসের ভিতরে নিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, সেগুলো অফিসে পাওয়া গেছে। কিন্তু সাংবাদিকদের চোখে তা ধরা পড়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রচার হয়েছে। এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নিন্দা করার ভাষ্য আমাদের জানা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, একই দিনে অফিসের ভিতর ও বাইরে থেকে দলের অনেক সিনিয়র নেতারাসহ প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এমনকি গ্রেফতার অনেক আহত নেতাকর্মীকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমন নির্মমতা শুধু অনির্বাচিত সরকারের অনুগত কোনো দলীয় বাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। আমরা গ্রেফতার সব নেতাকর্মীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি।
তিনি বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টন সড়কে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের সম্মতি চেয়ে লিখিত চিঠি দেওয়ার পরও তা নিয়ে সরকার গড়িমসি শুরু করে। আমরা না চাওয়ার পরও অযাচিতভাবে ও স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নজিরবিহীন ভাবে ২৬ শর্তে গণসমাবেশের অনুমতি দেয়। তা অনিবার্য ও যুক্তিসঙ্গত কারণে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করে আলোচনার মাধ্যমে তৃতীয় কোনো উপযুক্ত স্থানে সভার অনুমতি দেওয়ার যে অনুরোধ জানিয়েছি তা দিতেও গড়িমসি করা হয়েছে। আজ দুপুরে আমাদের একটি প্রতিনিধিদল ডিএমপি কমিশনার বরাবর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়। কিছুক্ষণ আগে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণ- সমাবেশের জন্য পুলিশ সম্মতি দেয়।
মোশাররফ বলেন, তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সরকারি বাহিনীসমূহ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা গত প্রায় ১৫দিন ধরে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে জনসভা বানচালের জন্য গোটা ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগসহ সব বিভাগের সব জেলা, উপজেলা, মহানগরে মহড়া দিচ্ছে। তাদের এসব অগণতান্ত্রিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম পুলিশের সামনেই এবং সমর্থনে চলছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নয়টি বিভাগে জনসভা করেছি। সরকারের সব বাধা উপেক্ষা করে এসব জনসভায় জনতার ঢল নেমেছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা, নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চেয়েছি। কিন্তু মনে হয়, সরকার অন্য কিছু চায়। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে তারা জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টা সফল হবে না। জনগণের আন্দোলনের সামনে সব স্বৈরাচারকেই নতি স্বীকার করতে হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকেও করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড.আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
টিএ/আরএইচ