বরিশাল: পাবর্ত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি বলেছেন, তৃণমূলই আওয়ামী লীগের শক্তি। আওয়ামী লীগ বহিরাগত কাউকে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে না, আওয়ামী লীগ কোনো অন্ধকার পথে ক্ষমতায় আসে না।
২২ তম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন সফল করার লক্ষ্যে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে বরিশাল ক্লাবে অনুষ্ঠিত বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে বসন্তের কোকিল কেউ নেই, যারা রয়েছেন দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে ছিলেন। আন্দোলন সংগ্রাম করে, জেল খেটে, মারধর খেয়ে এ দলটাকে টিকিয়ে রাখছেন। তাই তৃণমূলের আপনাদের কাউকে নতুন করে কিছু বুঝাতে চাই না। আর এই পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীরা যদি তৃণমূল পর্যায়ে নামে তাহলে আমার মনে হয় না কোনো শক্তি আছে বরিশাল বিভাগে আমাদের পরাজয় ঘটাবে। সামনে নির্বাচন, বরিশাল সদরের সিট আমাদের পেতে হবে, যেই নৌকা প্রতীক পাবে তার পক্ষে আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র এই সদস্য বলেন, যারা এ দেশটার স্বাধীনতাই মানেনি কোনোদিন, তারা ষড়যন্ত্র করে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছে। হ্যাঁ-না ভোট দিয়েছে। টিকে থাকার জন্য জেলখানায় বহু লোক হত্যা করে, বিনা কারণে বহু সেনা কর্মকর্তা-সেনা সদস্যকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যা করেছে। এখন তারাই গণতন্ত্র হত্যার কথা বলছে। আপনাদের উপলব্ধি করতে হবে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে এই বিএনপি-জামায়াত জোট। না হলে একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে রাতের অন্ধকারে হত্যা করলো কীভাবে। আর বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা বলছেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা, আমার নাবালক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আমি কোনোদিন বিচার চাইতে যেতে পারিনি, আইন করে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোডের্র এই সদস্য বলেন, সামনে দুটি নির্বাচন। সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়তো জুলাই আগস্টে হবে, তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যদি এখানে নৌকা বিজয় লাভ না করে, আর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন না করে, শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে না পারেন তাহলে মনে রাখবেন একজনও নিজের এলাকায় থাকতে পারবেন না। কারণ আমরা ২০০১ সাল দেখছি। খুলনায় ৭৫ বছরের মঞ্জুরুল ইমামকে রিকশার ওপর গুলি করে মেরেছে। বরিশাল কলেজের ভিপি ফারুককে ইটভাটায় নিয়ে রড ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে মেরেছে। গাজীপুরে আহসান উল্লাহকে মেরেছে, বগুড়ায় মমতাজ ভাইকে মেরেছে, গৌরনদীতে বুলেটকে মেরেছে।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের এই সভাপতি বলেন, এদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে বিএনপি। দুর্নীতিতে ৫ বার প্রথম স্থান করছে বিএনপি, যেটা আমাদের কথা না আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকার সার্ভেতে এটা বলছে। তাই এদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা শোভা পায় না।
তিনি বলেন, আমি বিরোধী দলের এমপি ছিলাম, পাঁচ বছর এলাকায় আসতে পারিনি। ওরা এতো নৃশংস! আমার পাঁচ বছরের যে সংসদীয় কার্যক্রম তা সব ওরা করছে। কীসের গণতন্ত্র ওদের কাছে?
তিনি আরও বলেন, আমার উত্থান তৃণমূল থেকে। সুতরাং তৃণমূলে আপনারা যারা রয়েছেন, তারা যদি সক্রিয়ভাবে দলের পক্ষে নামেন তাহলে আল্লাহর রহমতে কোনো শক্তি নেই আমাদের পরাজিত করবে। এরা বিভিন্ন প্রপাগাণ্ডা করছে, বিদেশিদের কাছে যাচ্ছে, লবিস্ট ঠিক করছে। এরা সরকারকে উৎখাত করতে চায়। সুতরাং আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের শক্তি নিয়ে এটাকে মোকাবিলা করতে হবে। এখানে যদি পিছুপা হন, তাহলে মনে রাখবেন আজ স্বাধীনতার চেতনাই বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর সন্তানই বলেন, কিছুই ওরা রাখবে না। আমার অনুরোধ ভুল বোঝাবুঝি বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। কে কি পাইলাম না পাইলাম, সে হিসেব করার সময় নয়, সবকিছু ভুলে ঐক্যবদ্ধ হই।
মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে যা করছেন, সেই ঋণ শোধ করতে হলে নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে উন্নয়নের এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার পতাকা তলে থাকতে হবে।
সভায় বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
এসএম/এমএমজেড