নারায়ণগঞ্জ: পুলিশ এখন ভারাটে খুনিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সপ্তম সম্মেলনে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আপনারা দেখেছেন পুলিশ কীভাবে তাক করে গুলি করছে। যুবদলের কর্মী শাওন এখানে নিহত হয়েছে। আপনারা দেখেছেন। তারা এখন কন্ট্রাক্ট কিলার হিসেবে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমনটা হয়েছে কিনা জানি না। দুই মাস আগে থেকে বলে রাখা বিএনপির সমাবেশ, রাত ১০টা পর্যন্ত কথা হলো। তারপর হঠাৎ তারা দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে রাতে তুলে নিয়ে গেল। একটা সমাবেশের জন্য হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলো। এখন ডান্ডা বেড়ি পড়ে মায়ের জানাজায় হাজির হতে হচ্ছে। নিষ্ঠুরতার সীমা থাকে। এ সরকার সব নিষ্ঠুরতার সেই সীমা অতিক্রম করছে ভয় দেখানোর জন্য। ভয় দেখিয়ে তারা বলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো এত সোজা নয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। অগ্নিসন্ত্রাস আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থেকেই শুরু। আমরা দেখেছি কীভাবে গান পাউডার দিয়ে ১১ জন মানুষকে তারা পুড়িয়ে মেরেছিল। বিএনপি তখন তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। অথচ ২০০১-২০০৬ সাল আমরা দেখলাম তত্বাবধায়ক ব্যাবস্থাও কাজে আসল না। মাত্র দুটো নির্বাচনের মাথায় এমন ঘটনা ঘটল।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী সাকি আরও বলেন, আপনারা ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে গেলে দেখবেন শিক্ষকরা শুয়ে আছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছেন বেতন বাড়ানোর জন্য, চাকরি স্থয়ী করার জন্য। এটা হলো অবস্থা। একটা দেশে উন্নতি কাকে বলে। সরকার যদি উন্নতি করতে চাইত, আওয়ামী লীগ এক শিক্ষা ক্ষেত্রেই ধারেকাছেও যেতে পারেনি। শিক্ষার মানে উপরের দিকে নয় আমরা নিচের দিকে যাই। বাংলাদেশে শিক্ষার মান আর নেই। আজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের শিক্ষার অবস্থা আমাদের বুঝিয়ে দেয় শিক্ষার কী অবস্থা। কথায় আছে একটা জাতিকে ধ্বংস করতে হলে শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করে দিন। এ সরকার দেশকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
ভারতের দিল্লিতে কেজরিওয়াল সরকার শিক্ষা ব্যাবস্থার চেহারা পরিবর্তন করে দিয়েছে উল্লেখ করে জুনায়েদ সাকি বলেন, সরকার চাইলে এটা করা যায়। তবে বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আছেন তারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ নয়। জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার কোনো ব্যাবস্থা নেই। যারা ক্ষমতায় যান তারা জমিদার হয়ে যায়। এটা আমাদের বুঝতে হবে। এ রাষ্ট্র হয়েছে লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে। তবে ৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। প্রথম থেকেই তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করেছে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হলেও আওয়ামী লীগ জিততো। জাসদ নেতারাও দাবী করেননা তারা সরকার গঠন করতেন। তারা কয়টা সিট পেতেন? হয়ত প্রধান বিরোধী দল হতে পারত। অথচ আওয়ামী লীগ নিজেদের নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত সেই নির্বাচনেও কারচুপি করেছে। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আমাদের একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সাকি বলেন, সে সময় সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে দুই বছরের তত্বাবধায়ক ক্ষমতা ছিল। পরে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসল। আওয়ামী লীগ ভাবল ক্ষমতায় যখন এসেছি এটা চিরস্থায়ী করার ব্যাবস্থা করবো। সেকারণেই তারা এ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিল। জনগণের মতামতের প্রয়োজন নেই। আজ তারা চেতনার কথা বলে।
‘‘আওয়ামী লীগ এই ফ্যাসিবাদ, সেই সাংবিধানিক জোরের ওপর দাঁড়িয়ে করতে পেরেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা আইন করে এমনভাবে রাষ্ট্র তারা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন যে আজ তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়। ’’ বলেন জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, একটা গ্রুপ চট্টগ্রামের। তারা এ সরকারের ছায়াতলে থেকে নয়টা ব্যাংকের মালিক হয়েছে। সরকার যখন কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছে তখন এক নভেম্বর মাসে এস আলম গ্রুপ একটি ব্যাংক থেকে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে। দেশের মানুষের কষ্টে অর্জিত ডলার তারা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। মেগা প্রজেক্টের টাকা তারা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে দেবে।
তিনি আরও বলেন, ওরা খেলতে চায়। খেলা মানে ওরা মাইরপিট করতে চায়। প্রতিপক্ষের হাত-পা বেঁধে পুলিশের রাইফেলের সামনে দাঁড় করিয়ে তারা বলে খেলা হবে। আমরা বলি এটি কাপুরুষের পরিচয়। আওয়ামী লীগের মতো দলকে আজ যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা দলটিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। জনগণকে ভয় দেখচ্ছেন। হাত ভেঙে দিতে বলছেন জ্বালিয়ে দিতে বলছেন। মানুষকে পুলিশ গুন্ডাপান্ডার ভয় দেখান। এ শাসন টিকবে না। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ লড়াই করেছে। আজ ভয় দেখিয়ে শাসন করা ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা এই আপনাদের শাসন। এভাবে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এ দল ক্ষমতায় থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ।
ভোটাধিকার নিশ্চিত শুধু তত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা দিয়ে হবে না বলে মনে করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দলের দিক থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বলেছিলাম। আমাদের দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সরকার লাগবে। সেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য লাগবে। যে জিতবে সে সবটা পাবে এমনটা বাংলাদেশে চলবে না। মোট প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে পার্লামেন্ট হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
এমআরপি/এসএ