নারায়ণগঞ্জ: নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে বসে বিএনপির গণমিছিল দেখেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে মিছিলটি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায় গণমিছিল বের করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি। মিছিলকে কেন্দ্র করে শহরের মিশনপাড়া এলাকায় নেতাকর্মীরা জমায়েত হন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শহরে গণমিছিল করেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির এই মিছিলের কথা শুনে শহরের চাষাঢ়ার রনি ফার্মার সামনে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান। বিএনপির মিছিলটি শহরের মিশনপাড়ার পূর্ব দিক থেকে আসে। আর শামীম ওসমানের গাড়ি শহরের চাষাঢ়া রনি ফার্মার সামনে থেকে পূর্বমুখী হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় শামীম ওসমানের সঙ্গে তার গাড়ির চালক ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী ছিল না।
শামীম ওসমানের উপস্থিতি দেখে মিশনপাড়া থেকে আসা মিছিলটি শহরের খাজা সুপার মার্কেটে গিয়ে শেষ হয়। যদিও মিছিলটি ২ নং রেলগেট যাওয়ার কথা ছিল। শামীম ওসমান গাড়ির গ্লাস খুলে মিছিলটি দেখেন। শামীম ওসমানকে দেখে মিডিয়াকর্মীরা ছুটে গেলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
বিএনপির মিছিল দেখতে চাষাঢ়ায় আধা ঘণ্টা ধরে শামীম ওসমানের অবস্থান করা নিয়ে পুরো শহরে চলছে আলোচনা। উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায় ঘটনাস্থলে। কী কারণে শামীম ওসমান বিএনপির মিছিল দেখে অবস্থান নিয়েছেন, এ প্রশ্ন ছিল সবার। সম্প্রতি এমপি শামীম ওসমান ঘোষণা দিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করতে মাঠে থাকবেন তিনি।
বিএনপির গণমিছিল চলাকালে চাষাঢ়ায় অবস্থান নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে শনিবার সন্ধ্যায় শামীম ওসমান বলেন, ‘বিএনপি ইদানীং মিছিল-মিটিংয়ে খুবই উশৃঙ্খল মন্তব্য করছে। খুবই নোংরা ভাষা ব্যবহার করছে। পুলিশের ওপর হামলা করেছে। একজন মানুষ মারা গেছে। এতে করে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী না, জনতা ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষিপ্ত বিএনপির ওপর। তারা বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু আমাদের নিজ দলের বা স্বাধীনতার স্বপক্ষের কেউ যাতে রেগে গিয়ে উল্টা-পাল্টা কিছু না ঘটাতে পারে, তাই দাঁড়িয়ে আছি। বিশৃঙ্খলা-অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষের জানমালের সম্পদের হানি ঘটে, প্রাণহানি হয়। এগুলো রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। বিএনপি মিছিল করবে, এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই বলে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে তারা যে ভাষায় কথা বলে, এটাও রাজনৈতিক শিষ্টাচার না। ’
শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির প্রচুর নির্যাতনের শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সিদ্ধিরগঞ্জেই ৭ থেকে ৮ জন নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। বাসাবাড়িতে হামলা করেছে। আমার ভাইয়ের কারখানায় ভাঙচুর-জ্বালাও-পোড়াও করেছে। গরুর বান কেটেছে। গত দুই নির্বাচনী আমলে আমরা সহাবস্থানে আছি। বিএনপি কেন কোনো দলই বলতে পারবে না আমরা কারো ওপরে হামলা ও মামলা করেছি। সব সময়ই সহাবস্থান ছিল। শৃঙ্খলা রক্ষায় যা যা করণীয় আমরা তাই করেছি। আমরা কোথাও কোনো প্রতিশোধ নেইনি। নারায়ণগঞ্জ বিগত সময়ে শান্তিপূর্ণ ছিল। তাই বিএনপির কাছে অনুরোধ থাকবে। রাজনীতি করা সবার অধিকার। আপনারা গণতান্ত্রিক ভাবে রাজনীতি করেন। গণতান্ত্রিক ভাষা ব্যবহার করেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
এমআরপি/এমজেএফ