ঢাকা: দেশের জনগণ রাস্তায় নেমেছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জনগণ চূড়ান্তভাবে রাস্তায় নেমে এই সরকারের বিদায়ের ব্যবস্থা করবে।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই দেশের জনগণই ’৬৯-এ তৎকালীন আইয়ুব খানকে বিদায় করেছে গণআন্দোলনের মাধ্যমে। ’৯০-এ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদকে বিদায় করেছে ছাত্র-জনতা। এই দেশের জনগণ এখন রাস্তায় নেমেছে। রাস্তায় চূড়ান্তভাবে নেমে এই সরকারের বিদায়ের ব্যবস্থা করবে।
তিনি বলেন, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলেন, ১০ ডিসেম্বর নাকি বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। এটা শুনে আমাদের হাসি পায়। এগুলো হলো এই সরকারের চাপাবাজি। গত ১৪ বছর ধরে তারা এরকম চাপাবাজি করছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, চট্টগ্রামে আমাদের প্রথম বিভাগীয় সমাবেশের পর তথ্যমন্ত্রী বললেন, ওখানে ৪-৫ হাজার মানুষ হয়েছে। লালদিঘির ময়দানে জব্বারের বলি খেলা হয়, সেখানেও এর থেকে বেশি মানুষ হয়। আমিও বলি, জব্বারের বলি খেলায় এর থেকে বেশি লোক হয়। কিন্তু এরপর ওই দলেরই সাধারণ সম্পাদক মিডিয়ায় বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, আমাকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেছিল, আমি বলেছি এক লাখের উপর মানুষ হয়েছে। অর্থাৎ মিথ্যা-চাপাবাজি কত নিম্নমানের হলে তারা এ ধরনের কথা বলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক এক লাখের বেশি বললে সেটা ৫ লাখের বেশি হবে এটা সবাই জানে। কিন্তু তার তথ্যমন্ত্রী কীভাবে ৪-৫ হাজার বলেন? এর থেকে বোঝা যায়, চাপাবাজি আর মিথ্যাচারে তারা কী পরিমাণ নিচে নামতে পারেন!
১০ ডিসেম্বর বিএনপি যে দশ দফা উত্থাপন করেছে, এটা জনগণের দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ৯টি গণসমাবেশে জনগণের যে মতামত নিয়েছি, তাতে তাদের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা আমরা দেখেছি, তার সমন্বয় গঠিয়ে আমরা ১০ দফা প্রণয়ন করেছি।
২৪ ডিসেম্বর বিএনপির গণমিছিলে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, সেদিন পঞ্চগড়ে গণমিছিলে বিএনপির একজন নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও নানা বাধা উপেক্ষা করে প্রত্যেকটা গণমিছিল সফল হয়েছে। তার অর্থ হচ্ছে, যত বাধা-বিপত্তি, যত নির্যাতন, যত চাপ, যত রক্তচক্ষু দেখানো হোক না কেন এই দেশের জনগণ কিন্তু রাস্তায় নেমে গেছে।
বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনীতি করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতি যারা করে, তাদের সৌজন্যবোধ আছে, তাদের অন্য দলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছে। সেই সৌজন্যবোধ থেকে আমরা ঢাকার গণমিছিল ২৪ তারিখ করিনি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, গণতন্ত্র আর আওয়ামী লীগ একসাথে যায় না। স্বাধীনতার পরও দেখেছি, তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল করেছিল। আবার এই ১৪ বছর দেখেছি, গণতন্ত্রকে হত্যা করে একবার সংসদ নির্বাচন করেছে, যেটা বয়কট হয়েছে ১৫৩ আসনে। যেখানে নির্বাচন বয়কট হয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে সরকারে থেকেছে। আর ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করেছে।
তিনি বলেন, আজকে শুধু আমরা নই, সারা বিশ্ব জেনেছে এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, ধ্বংস করেছে, তাদের পক্ষে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে, যেহেতু জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই, সেজন্য এদেশের অর্থনীতিকে তারা লুণ্ঠন করেছে। লুটপাট, দুর্নীতি, চাদাবাজি এবং সেই দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এই অর্থনীতিকে আর তারা মেরামত করতে পারবে না।
ড. মোশাররফ বলেন, আমাদের ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষণা করেছে, তাদের কর্মীরা রাস্তায় থাকবে। আমরা গণ-সংঘাতে বিশ্বাস করি না, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এই দেশের জনগণ সেই নির্বাচন হতে দেবে না। আসুন সকলে মিলে এই সরকারকে বিদায় করি।
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান উল্লাহ আমান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
এসসি/এমজেএফ