লালমনিরহাট: ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় সংসদীয় আসন তিনটি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-৩ আসন।
লালমনিরহাট ৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদের। জেলা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আসনের লড়াইয়ে অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি এবং সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। আওয়ামী লীগ এ অঞ্চলে অনেকটাই দুর্বল।
সদর উপজেলার ৯ ইউনিয়ন, এক পৌরসভা নিয়ে লালমনিরহাট-৩ গঠিত। জেলা সদর ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অন্যান্য আসনের চেয়ে লালমনিরহাট-৩ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জেলা সদর আসনটিতে এর আগে জয় হয় বিএনপি। প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েই উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পান অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু।
ক্ষমতায় থাকার ৫ বছরে চিত্রপট পাল্টে ফেলেন দুলু। জেলা জুড়ে বিএনপি সব ধরনের কর্মসূচি গুছিয়ে নেন তিনি। পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিয়ে মহাজোট প্রার্থী জিএম কাদেরের বিপক্ষে হেরে যান তিনি। তারপর থেকে দলীয় কার্যক্রম ও নেতাকর্মীদের আরও সুসংগঠিত করেন তিনি। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। তবে, আসনের ১৯টি কেন্দ্রে শূন্য ভোটের ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় দলের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতার বাইরে থাকায় নানা মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়লেও দল সুসংগঠিত আছেন তারা। শুধু উপজেলা বা ইউনিয়ন কমিটি নয়, খোদ ওয়ার্ড কমিটির নেতাদেরও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করেছে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো। সম্প্রতি সব ধরনের দলীয় কর্মসূচিতে ব্যাপক শো-ডাউন করছে বিএনপি। সব দিক বিবেচনায় মাঠে গোছানো বিএনপিকে দেখা যাচ্ছে।
টানা তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথমটিতে বিএনপিকে হারিয়ে লালমনিরহাট-৩ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জিএম কাদের। দ্বিতীয়টিতে জাপা-বিএনপি অংশ না নেওয়ায় ফাঁকা মাঠে গোল দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত প্রকৌশলী আবু সাঈদ দুলাল। তৃতীয় নির্বাচনে আবার জয় পান প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ হোসাইনের ভাই জিএম কাদের।
এ আসন থেকে জয় পেলেও একবার মন্ত্রী হয়েছেন জিএম কাদের। চলতি সংসদে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। যদিও নিজ আসনের দলীয় নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জনে খানিকটা ব্যর্থ তিনি। কর্মী-সমর্থকরাই এ দাবি করছেন। তা ছাড়া দলের অভ্যন্তরে কোন্দল অনেক দিনের।
মূলত, রওশন, বিদিশা এরশাদ ও জিএম কাদেরকে নিয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় গ্রুপিংয়ের কারণে লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টিও কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যে কারণে অতীতের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারছে না দলটি। আসনে জাপার অবস্থা নড়বড়ে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নিজেদের কোন্দলের কারণে গত ১৯ বছরেও সম্মেলন করতে পারেনি লালমনিরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে মাঠ গোছাতে দলটি ব্যর্থ। সদর আসনে আওয়ামী লীগে রয়েছে তিন গ্রুপ। যার একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। অপর একটিতে যুগ্ম সম্পাদক গোকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন এবং অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী ভোলা।
গ্রুপিং থাকলেও একটি জায়গায় ঠিক আছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টিকে এর আগে ছাড় দিলেও আগামীতে কোনো ছাড় দিতে চান না নেতাকর্মীরা। সে ধারাবাহিকতা তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনেও বলবৎ রাখবে বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে জেলায় নৌকার প্রতীক পেতে মরিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানসহ প্রায় এক হালি নেতা। নাম শোনা যাচ্ছে এক আমলারও।
আপাতত রাজনৈতিক মেরুকরণ যা-ই হোক আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে পুরো এক বছর সময় পাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ সময়ের মধ্যে যারা নিজেদের ঘর ও মাঠ গোছাতে পারবে, তারাই ক্ষমতা বাগিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন বলেন, কমিটি ছাড়া দল কখনোই চাঙা হয় না। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটিই দলকে সুসংগঠিত করে নৌকার বিজয়ের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও লালমনিরহাট-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেন, আপাতত সাংবাদিকদের সাথে আমি কথা বলছি না। পরে এসব বিষয়ে কথা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
এমজে