ঢাকা: ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেমন মঞ্চ ভেঙে পড়ে গেছেন, তেমনি লুটের বোঝায় এ সরকারেরও পতন হবে বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের মঞ্চ ভেঙে পড়ে গেছেন।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর পূর্ব পান্থপথের এলডিপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফার সমর্থনে এবং বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বেলা পৌনে ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করে রাজনৈতিক দলটি।
গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এলডিপির মহাসচিব বলেন, দেশে মানবাধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় গুম, হত্যা, রাহাজানি, ছিনতাই থেকে শুরু করে আজকে দেশের সব পর্যায়ে দুরাবস্থা বিরাজ করছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কাঠামো আজ ভেঙে পড়েছে। একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে এ ধরনের অপকর্ম সম্ভব হতো না।
তিনি আরও বলেন, আজকে সারা পৃথিবীর কাছে প্রমাণিত হয়েছে, এ দেশে গণতন্ত্র বলে কোনো বস্তু নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই। আজকে যারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে, তারাই নির্বাচিত হয়। এ প্রহসনের নির্বাচনকে সত্যিকারের নির্বাচন দেখানোর জন্য কিছু কিছু জায়গায় তারা (আ. লীগ) অপকৌশল প্রয়োগ করে। রংপুরে এ অপকৌশল প্রয়োগ করে তারা দেখানোর চেষ্টা করেছেন, তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু আমরা বলতে চাই, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না।
ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, পৃথিবীতে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে যখন যে আন্দোলন হয়েছে, সেটা কোনোদিন সংবিধান মেনে হয়নি। দেশে ১৯৯১ সালে নির্দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছে, তখনও সংবিধান মেনে নির্বাচন হয়নি। তখন বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগ মিলে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছিল।
বর্তমান সরকার মেগা মেগা প্রকল্পগুলোর কোনটিই নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করতে পারেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, অনেকে বিভিন্ন জায়গায় বলেন, পাকিস্তানিরাও এ সরকারের মতো অত্যাচার আমাদের উপর করেনি। মুক্তিযুদ্ধের আগে তারা এ জাতিকে নিষ্পেষিত করেছে, নির্যাতন করেছে, মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। কিন্তু এ দেশকে অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন করার জন্য তারা কোনো কাজ করেনি।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন, তাকে এত সহজে ধাক্কা দিয়ে সরানো যাবে না। আমরা তো আপনাকে (শেখ হাসিনা) ধাক্কা দিতে চাই না। আপনার সরকার অবৈধ সরকার। আপনার সরকার নির্বাচিত নয়। আপনার যদি লজ্জা থাকে তাহলে একবার সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান। পাশাপাশি আপনার প্রতি মানুষের সমর্থন আছে কিনা সেটি প্রমাণ করেন। নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হলে আপনার অস্তিত্ব এ দেশের মাটিতে থাকবে না- এইটুকু আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি।
এলডিপি মহাসচিব আরও বলেন, এ দেশ আজকে অবকাঠামোসহ সব দিক দিয়ে একটি ভগ্ন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র যন্ত্র এবং সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলোকে যদি আমরা পুনর্গঠন করতে না পারি, তাহলে এ জাতি জাতি হিসেবে বসবাস করতে পারবে না। আজকে বিচার ও শাসনব্যবস্থাসহ সব ব্যবস্থা তারা (আ. লীগ) ভেঙে ফেলেছে। সরকারি প্রশাসনে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো লোক পাবেন না। পুলিশের আইজি, ডিআইজিও আওয়ামী লীগের পতাকা নিয়ে মিছিল করেন। এভাবে তো কোনো দেশ চলতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, এ জাতিককে যদি লুণ্ঠনকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হয়, তাহলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। সে নির্বাচন একমাত্র নির্দলীয় সরকারের অধীনে করলে হয়তো এ দেশ টিকে থাকতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, তারেক জিয়া যদি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে নেওয়া হবে। তার মানে বিচার ব্যবস্থা কী তার হাতে? এগুলো বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপের শামিল। আপনার (শেখ হাসিনা) বিচার হওয়া উচিত। বিচার বিভাগকে তিরস্কার করে আপনি কথা বলেন।
গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস. এম মোরশেদ, অ্যাডভোকেট নেয়ামুল বশির, যুগ্ম মহাসচিব বেল্লাল নিয়াজী, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল হাশেম, প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট. মফিজুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মো. সোহেল, আহ্বায়ক খালেদ বিন জসিমসহ দলের বিভিন্ন শাখা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এর আগে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন এলডিপি কেন্দ্রীয় কমিটি এবং এর শাখা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শাখা ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে গণতান্ত্রিক মহিলা দল, গণতান্ত্রিক যুবদল, গণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবক দল, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক দল, এলডিপির ঢাকা মহানগর পূর্ব, ঢাকা মহানগর পশ্চিম, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
এসসি/জেএইচ