ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সংসদে শিক্ষামন্ত্রী

নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উদ্দেশ্য মানুষকে উত্তেজিত করা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উদ্দেশ্য মানুষকে উত্তেজিত করা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি -ফাইল ছবি

ঢাকা: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মকে অপব্যাবহারের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করা। শিক্ষার্থীরা চিন্তা করতে শিখলে ধর্মের দোহাই দিয়ে মগজ ধোলাই করা যাবে না এই কারণে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়রি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এ সব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের কয়েকটি পাঠ্য বই নিয়ে নানারকম বিতর্ক, প্রচারণা আমরা শুনছি। আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই এসব প্রচারণার সিংহভাগই অসত্য, অপপ্রচার। বিভিন্ন ছবি, বইয়ের ছবি, ফটোসপ করে সেগুলো নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন বইয়ে লেখা এডিট করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। শিক্ষাক্রমের নয়, আমাদের বই নয় এমন বই যা আমাদের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় না সেগুলোকে আমাদের বই হিসেবে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমাদের বইতে নেই এমন কল্পিত বিষয় ও ছবি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। ভুয়া-আপত্তিকর কনটেন্ট আমাদের বইয়ের বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়বস্তুর উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। লেখকদেরকে ব্যক্তিগতভাবে কদর্য ভাষায় আক্রমণ চলানো হচ্ছে, তাদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, মন্ত্রী সম্পর্কে কদর্য বিবৃতি  ও হুমকি দেওয়া তারা অব্যাহত রেখেছে। যারা বরেণ্য শিক্ষাবিদ আছেন, যারা নতুন শিক্ষাক্রম তৈরিতে যুক্তছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও বিষোদগার করা হচ্ছে, কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে।


মন্ত্রী বলেন, এই বছরের বইগুলোতে লিখেই দেওয়া আছে পরীক্ষামূলক সংস্করণ। বই বিতরণের সময় আমিও বলেছি যে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় যা কিছু পরিমার্জন, পরিশীলন দরকার, তা করা হবে। যারা আক্রমণ করছেন তাদের কোনো প্রতিষ্ঠানে আমাদের এই শিক্ষাক্রমের বই কিন্তু পড়ানো হয় না। যেখানে পড়ানো হয় সেই জায়গার কেউ কিন্তু এভাবে অপপ্রচার করছেন না। যাদের প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় তাদের মতামত নিয়েই পরীক্ষামূলক সংস্করণগুলো তৈরি করা এবং প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের যৌক্তিক পরামর্শগুলো পাইলটিংয়ের সময় গ্রহণ করা হয়েছে। তারপরও যদি কোনো ভুল থাকে সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে এবং হবে।

ইতোমধ্যেই আমরা দুটো কমিটি করে দিয়েছি, একটি কমিটি সবার মতামত নিয়ে সুপারিশ করবে। অপরটি কোথাও যদি ইচ্ছাকৃত বা গাফিলতির জন্য কিছু ঘটে থাকে তা চিহ্নিত করে দোষি ব্যক্তিদের কী শাস্তি দেওয়া যায়, তা আমাদের কাছে সুপারিশ করবে। বইয়ের কিছু ভুল যেগুলো চিহ্নিত হয়েছে তা ইতোমধ্যেই সংশোধন করা হয়েছে। যারা বিষোদগার করছেন তারা বলছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা বলছেন, ইসলামকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বলছেন। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য যদি সৎ হতো তাহলে তারা গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে ভুল সংশোধনে আমাদেরকে পরামর্শ দিতেন। তারা মিথ্যাচার করতেন না, ফটোসপ করে, এডিট করে এই মিথ্যাচার করতেন না।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অপপ্রচারের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভ্রান্তি সৃষ্টি, ধর্মকে অপব্যাবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃস্ট করা। সরকারের বিরুদ্ধে যখন কোনো  ইস্যু তারা পাচ্ছে না, তখন বইয়ের ওপর সওয়ার হয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে একটি চিহ্নিত চক্র এই অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ কখনো ইসলাম বিরেধী, কুরআন ও সুন্না বিরোধী কিছু করেনি, কোনদিন করবে না, করতে পারে না। বরং বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে আজ পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তার প্রায় সবটুকু বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাত দিয়ে হয়েছে। আমাদের এই নতুন শিক্ষাক্রম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য। সারা বিশ্বই পরির্তনের কথা বলছে, আমরা এই কার্যক্রম আগে শুরু করেছি। সারা বিশ্বেই আমাদের এই কারিকুলাম প্রশংসিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে উচ্ছাস, ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া দেখা যাচ্ছে।

তিনি বরেণ, যারা অপপ্রচার করছে তাদের আপত্তিটা এখানে যদি আমাদের শিক্ষার্থীরা চিন্তা করতে শেখে, তারা চিন্তা করতে শিখবে, ভাবতে শিখবে, সমস্যা নিরুপন করতে শিখবে। সেগুলো যদি শিখে যায় তাহলে আর তাদেরকে ধর্মের দোহাই দিয়ে, অপব্যাখা করে, ধর্মের জুজু দেখিয়ে মগজ ধোলাই করা যাবে না। সেই জন্যই এই চক্রটির আপত্তি। আমার অনুরোধ দয়া করে বই পড়ে দেখবেন অপপ্রচারে কান দেবেন না। যারা আমার বিরুদ্ধে, লেখকদের বিরুদ্ধে, শিক্ষাবিদদের বিরুদ্ধে কদর্য আক্রমণ করছেন তাদের ধর্ম বোধ, ধর্মীয় অনুশাসন তারা মানছেন কিনা, ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করছেন কিনা তা নিয়ে আমি কোনো বক্তব্য দিতে চাই না। আমি আমার ধর্মবোধ এবং ধর্মের মর্মবাণীর প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তাদের আল্লাহ হেদায়েত করুন এই প্রার্থনা করি। তাদরে সত্য বলার এবং মিথ্যাকে পরিহার করার তৌফিক দান করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
এসকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।