ঢাকা: বিএনপি মনের দিক থেকে নির্বাচনে যেতে ইচ্ছুক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অ্যাম্বাসেডরদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যে দল সংলাপে রাষ্ট্রপতির নির্দেশ উপেক্ষা করে, এমনকি নির্বাচন কমিশন তাদের (বিএনপি) দুই বার সংলাপে আমন্ত্রণ করেছে। তবে সংলাপের ব্যাপারে বিএনপির বরাবরই একটা অনাগ্রহ রয়েছে। আসলে মনের দিক থেকে বিএনপি নির্বাচনে যেতে ইচ্ছুক নয়। কারণ তারা জানে নির্বাচনে শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই আবার ক্ষমতায় আসবে। তাই হেরে যাওয়ার ভয়ে বিএনপি কূটকৌশল অবলম্বন করছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তাতে বিএনপি ২০১৪-১৫ সালের মতো আবারও আগুনসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের ওপর ভর করে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করছে। বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডরদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আজকে বৈঠকে আসা। আগামী নির্বাচন কেমন হবে এবং বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। পাশাপাশি অনেক এক্সচেঞ্জে এজেন্টরা এসেছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক ব্যবসা আছে। এসব নিয়েও আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী নির্বাচন নিয়ে যা বলছে, এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আপনাদের মতামত কী—এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলেছি, যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তার বক্তব্যে বলেছেন—আগামী নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে আজকে আমাদের বক্তব্যের কোনো ভিন্নতা নেই। তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যা বলেছেন, আমরা তাই প্রতিধ্বনি করেছি। একই সঙ্গে আমরা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আগামী নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো নির্দেশনা বা মতামত ছিল কিনা এবং বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে কোনো পরামর্শ ছিল কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা তো কারো নির্দেশনা শুনব না। আমাদের নির্দেশনা আমাদের কনস্টিটিউশন এবং আমাদের গঠনতন্ত্র, যা আমরা অনুসরণ করি। আমাদের গণতন্ত্রের বিকাশ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত। তবে আমাদের দেশে নির্বাচনের যত সংস্কার হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে এবং তার উদ্যোগে হয়েছে। এমনকি নির্বাচনের জন্য একটা আইনও সংসদে পাস হয়েছে।
তিনি বলেন, এখানে প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতাটা ছিল, তা হচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তিনজন কমিশনার সিলেক্টর ছিলেন তিনি। সেই ক্ষমতার বলে তিনি আইনগতভাবে সার্চ কমিটি গঠন করেন স্বাধীন লোকজনকে নিয়ে। তার মানে বাংলাদেশের ইতিহাসে ’৭৫ সালের পরে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এই উদ্যোগ নিয়েছেন। কাজেই আমরা ভালো একটা নির্বাচন চাই। নির্বাচন ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে আমরা আরও পরিণত দেখতে চাই। সে লক্ষ্যে যা যা করণীয় আমরা তা করছি।
বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী মত দিয়েছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে খুব ‘মিনিংফুল’ এবং ‘প্রডাক্টিভ’ আলাপ-আলোচনা করেছি। এখন তারা কী ভাবছে, এটা তাদের বিষয়। তবে বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসুক এটা তারা চায়। তারা চাচ্ছে বাংলাদেশে সকল নিবন্ধিত দলের একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক।
বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আনার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো পরামর্শ ছিল কিনা বা ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের উদ্যোগ কী থাকবে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) এখানে মাঝে মধ্যেই আসে। আমরা তা দেখতে পাই এবং শুনতে পাই। তারা তো চুপিচুপি আসে। গোপনে গোপনে আসে। জানান না দিয়ে আসে। তবে আমরা কিন্তু ‘ওপেন ইনভাইটেশনে’ জানান দিয়ে এসেছি।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
ইএসএস/এমজেএফ